লকডাউনে কর্মকর্তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ?

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে দেশজুড়ে যে কার্যত ‘লকডাউন’ পরিস্থিতি চলছে, সেটা নিশ্চিত করতে কাজ করছেন জেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা এই কর্মকর্তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বার বার।

সবশেষ যশোরের মনিরামপুরের এক সরকারি কর্মকর্তাকে দেখা যায় তিনি কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তিকে কান ধরিয়ে শাস্তি দিচ্ছেন এবং তাদের সেই ছবি মোবাইলে ধারণ করছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই ছবি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।

এর জেরে ওই কর্মকর্তাকে শনিবার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কর্মকর্তাদের কাজের ওপর নজরদারি আরও বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন যশোরের জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ।

তিনি বলেন, “যারা এখন থেকে ডিউটিতে যাবেন, তাদের আমরা প্রতিনিয়ত ব্রিফ করছি – যাতে তারা সতর্ক থাকেন। যেন কারও আচরণের মাধ্যমে আইন ভঙ্গ না হয়।”

মাঠ পর্যায়ের সরকারি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সহিষ্ণু আচরণ করার নির্দেশনা দেয়া হলেও এমন আরও কয়েকটি জেলায় দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেশ মারমুখী অবস্থানে যেতে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বেশ কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে অবরোধ পরিস্থিতি কার্যকর করতে মানুষকে কান ধরে উঠবস করাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা, তাদের লাঠিপেটাও করা হচ্ছে।

যশোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন অবশ্য এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে দাবি করছেন।

“কয়েকজনের দুর্ব্যবহারের দায় তো পুরো বাহিনী নিতে পারে না। এরপরও আমরা ক্যাম্প, পুলিশ ফাঁড়ি, থানা লেভেল, প্রতিটি পর্যায়ের সব পুলিশকে আমরা বারবার বলছি মাঠে তদারকির সময় কারও সাথে দুর্ব্যবহার করা যাবে না। তারপরও কেউ এমনটা করলে আমরা বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো” – বলেন হোসেন।

এদিকে করোনাভাইরাসের প্রকোপ নিয়ে সচেতন করার পরও মানুষ আইন ভাঙছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

সরকারি কর্মকর্তা বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাধারণ মানুষকে বাড়িতে থাকার অনুরোধ করলেও অনেকেই খেয়ালখুশি মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল জুয়েল।

“সরকার নির্দেশ দিয়েছে যে মানুষ যেন খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের না হন। কিন্তু সন্ধ্যার পরে কেউ আর এসব নিয়ম মানে না। পাড়া-মহল্লার মোড়ে দাঁড়িয়ে মানুষ আড্ডা দেয়, চা খায়।”

“প্রশাসনের কর্মকর্তা মাইকিং করছেন, তাদেরকে সতর্ক করে যাচ্ছেন। কিন্তু কেউ কোন পাত্তাই দিচ্ছে না” – বলেন জুয়েল।

মানুষের মধ্যে সরকারি নির্দেশনা না মানার এই প্রবণতার কারণে মাঠ পর্যায়ে অবরোধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা পুলিশের জন্য বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদর দফতরের এআইজি সোহেল রানা।

এরপরও যাদের বিরুদ্ধে পেশাদারিত্ব লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা উল্লেখ করেন মি. রানা।

“এর আগে পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশের পুলিশি তৎপরতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর মানুষ সেটার প্রশংসা করেছিল। অনেক পুলিশ সেখান থেকে উৎসাহ নিয়েও এ ধরণের অসদাচরণ করতে পারে। কিন্তু আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না।”

বেশিরভাগ পুলিশ বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছে। পুলিশের সদর দফতর থেকেও মাঠ পর্যায়ে কাজ করা ওই পুলিশ কর্মকর্তার আচরণ নিবিড়ভাবে নজরদারি করা হচ্ছে।

তবে মানুষের সহায়তা তারা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন মি. রানা।

“আমাদের ফিল্ড রিয়েলিটিটা এরকম যে আপনি দশজনকে বলছেন আইন মানতে। কিন্তু, কেউই শুনল না। এরপর ১১তম বার কিন্তু আপনি উত্তেজিত হয়ে পড়বেন। যদিও সেটা গ্রহণযোগ্য না।”

“এখন মানুষ সেই উত্তেজিত মুহূর্তটি ফেসবুকে ছেড়ে দিচ্ছে। এর আগে ১০ জন ব্যক্তি যে আইন ভেঙেছেন সেটা ওই ছবিতে বা ভিডিওতে কেউ দেখছে না। মানুষকে আইন মেনে চলাতে আমাদের রীতিমত নাকানি-চুবানি খেতে হয়।”, তিনি বলেন।

এর আগে, মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের অত্যন্ত সহনশীলতা, পেশাদারিত্ব ও বিনয়ের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন পুলিশের আইজি জাবেদ পাটোয়ারি।

বৃহস্পতিবার থেকে প্রায় সোয়া দুই লাখ পুলিশের কাছে তার এই বার্তা পাঠানো হয়।

এসএইচ-০৪/২৯/২০ (সানজানা চৌধুরী, বিবিসি)