দেশে করোনার প্রকৃত চিত্র উঠে আসছে না?

বাংলাদেশে নতুন কোনো করোনা রোগী শনাক্ত না হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রকৃত চিত্র উঠে আসছে না৷ এজন্য পরীক্ষার আওতা বাড়ানো হবে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকও৷

বাংলাদেশে পরপর দুইদিন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কোন রোগী শনাক্ত হয়নি৷ জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) তাদের রোববারের নিয়মিত ব্রিফিং-এ জানিয়েছে, ২৪ ঘন্টায় নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি৷ তার আগের ২৪ ঘন্টায়ও কেউ আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত হননি৷ এর আগে ২৫ মার্চের পূর্ববর্তী ৪৮ ঘন্টায়ও কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি৷

রোববারের ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক অনলাইনে যুক্ত হয়ে বলেন, ‘‘নতুন করে রোগী শনাক্ত হয়নি এটা খুবই আনন্দের সংবাদ৷ যখন চীনে প্রথম এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে, তখন থেকেই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি বিধায় বাংলাদেশ ভালো আছে৷ আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত আপডেট করে যাচ্ছি৷ পৃথিবীর সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশ ভালো আছে৷’’

আইইডিসিআরের হটলাইনে করোনা নিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় কল এসেছে দুই হাজার ৭২৬টি৷ আর নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে মাত্র ১০৯টি৷ সব মিলিয়ে ২১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত পরীক্ষার আওতায় এসেছেন এক হাজার ১৮৫ জন৷

প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী মনে করেন, রোগী শনাক্ত না হওয়ায় সরকারের আত্মতৃপ্তির কোনো সুযোগ নেই৷ কারণ করোনার যে পরীক্ষা করা হচ্ছে তা সীমিত৷ বিস্তৃতভাবে করা হলেই আসল অবস্থা বোঝা যেতে পারে৷

বর্তমানে কোয়ারান্টিনে বা ঘরে আলাদা রয়েছেন ২৮ হাজার ৪৮৩ জন৷ আইসোলেশন বা বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে ৪৭ জনকে৷ এমন সব তথ্যের প্রেক্ষিতে ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘‘কোয়ারান্টিনে এবং আইসোলেশনে অনেক লোককে রাখা হয়েছে৷ তার বিপরীতে করোনার এক হাজারের কিছু বেশি নমুনা টেস্ট করা হয়েছে৷ ইটালি, ফ্রান্স, স্পেন এইসব দেশ থেকে যারা এসেছের তাদের অনেকেরই টেস্ট হয়নি৷ ফলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা কম৷ কিন্তু অচিরেই দেখা যাবে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে৷’’

বাংলাদেশে করোনা কোয়ারান্টিনে থাকা কয়েকজন মারা গেছেন যাদের নমুনা পরীক্ষা হয়নি৷ আবার লক্ষণ নিয়ে মারা যাওয়ার পরও নমুনা পরীক্ষা না করার ঘটনা ঘটছে৷ নাম প্রকাশ করার না শর্তে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ‘‘এখন যে পিসিআর পদ্ধতিতে পরীক্ষা হচ্ছে তাতে আক্রান্ত হওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে পরীক্ষা না করলে রেজাল্ট নেগিটিভ (সংক্রমণ নেই) আসতে পারে৷ তার জন্য আরো উন্নত টেস্টের দরকার, যা বাংলাদেশে নেই৷ আর প্রয়োজনীয় টেস্টও হচ্ছে না৷ ফলে বাংলাদেশে এখন করোনা পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে রয়েছে তা বলা যাচ্ছে না৷ সন্দেহজনক সবাইকে যদি টেস্টের আওতায় আনা যেত তাহলে প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝা যেত৷’’

প্রতিবেশী দেশ ভারতেও দ্রুত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে৷ সংক্রমণের পর থেকে করোনার প্রকোপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ইউরোপের অনেক দেশ৷ কিন্ত বাংলাদেশে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম কেন এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘‘সাধারণ ছুটিসহ নানা রকম ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে৷ তাপমাত্রা বাড়ছে, হিউমিডিটি হচ্ছে এ সবের কারণে হয়তো আক্রান্তের সংখ্যা কম৷ তবে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না৷ আমাদের আরো কয়েকদিন দেখতে হবে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘টেস্ট কম করাও রোগী কম হওয়ার কারণ কিনা তাও আমরা দেখবো৷ এজন্য টেস্ট বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছি৷’’

শনিবার জাতিসংঘ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে তারা বাংলাদেশের সরকারসহ বিভিন্ন পক্ষকে সাথে নিয়ে একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে৷ কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া না হলে মহামারি পরিস্থিতির কতটা বিস্তার ঘটার আশঙ্কা রয়েছে সেসব চিত্রও তারা বিশ্লেষণ করেছে৷ তবে ডা. আবুল কালাম আজাদ মনে করেন বাংলাদেশ এরইমধ্যে যথেষ্ট ব্যবস্থা নিয়েছে৷ যার কারণে সেই পরিস্থিতিতে পড়তে হবে না৷

তবে ডা. লেলিন চৌধুরী মনে করেন, ‘‘বাংলাদেশে এরইমধ্যে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে৷ স্থানীয় পর্যায়ে কেউ কেউ চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন না৷ আবার হাসপাতালগুলোও করোনার লক্ষণ দেখলে রোগী ভর্তি নিচ্ছে না৷ অনেক লোক ঢাকা থেকে গ্রামে গেছে৷ যারা মনিটিরিং এর আওতায় নেই৷’’

এসএইচ-০৫/৩০/২০ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)