পাবজি-ফ্রি ফায়ার বন্ধ হয়নি!

ক্ষতিকর গেম হিসেবে পাবজি ও ফ্রি ফায়ার বন্ধ করতে পারেনি বিটিআরসি৷ সংস্থাটির তরফে আংশিক বন্ধের দাবি করলেও ব্যবহারকারী ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষকরা এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন৷ বিটিআরসি বলছে পুরোপুরি বন্ধক করার সক্ষমতা তাদের নাই৷

হাইকোর্টের নির্দেশে গত ৯ আগস্ট বিটিআরসি পাবজি ও ফ্রি ফায়ার বাংলাদেশে বন্ধের উদ্যোগ নেয়৷ তারা ওইদিনই দুইটি গেম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানায়৷ কিন্তু বাস্তবে গেম দুইটি বন্ধ করা যায়নি৷ ওই দুইটি গেমের একজন গেমার আশিক (ছদ্ম নাম) জানান,”আমরা ভিপিএন ব্যবহার করে গেম দুইটি খেলতে পারছি৷ কোথাও কোথাও ভিপিএন ছাড়াও খেলা যায়৷ আর যারা গেম দু’টি খেলেন তারা ভিপিএন সম্পর্কে জানেন৷ এটি ডাউনলোড করে নিলেই হলো৷”

তিনি আরো জানান,”বিটিআরসি চেষ্টা করলেও যারা খেলছে তাদের বিরত রাখতে পারছে না৷”একই ধরনের তথ্য পাওয়া যায় আরো কয়েকজনের সাথে কথা বলে৷ তারাও জানান, এটা ভিপিএন ডাউনলোড করে এটা খেলা খুবই সহজ৷

ভিপিএন হলো ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক৷ তথ্য প্রযুক্তিবিদ তানভীর হাসান জোহা জানান,” এই ধরনের অ্যাপস-এ ডাটা এনক্রিপ্টেড থাকে৷ এটা প্রাইভেট৷ আর যেটা ওয়েব সেটা পাবলিক৷ বিটিআরসির লিংক বা ওয়েব বন্ধের সক্ষমতা আছে৷ কিন্তু প্রাইভেট এনক্রিপ্টেড ডাটা বন্ধ করার সক্ষমতা নাই৷ তাছাড়া ভিপিএন ছাড়াও এটা এখনো বাংলাদেশে খেলা যাচ্ছে৷”

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন,”ফ্রি ফায়ার, পাবজির যারা প্রোভাইডার তাদের কিন্তু বাংলাদেশে ক্যাশ সার্ভার আছে৷ বিভিন্ন আইএসপির মাধ্যমে এই ক্যাশ সার্ভারগুলো চলে৷ সেই ক্যাশ সার্ভারের কারণেই এখনো সরাসরি ওই দুইটি গেম খেলা যায়৷ যে এলাকায় সার্ভার নেই সে এলকায় গেমাররা ভিপিএন ব্যবহার করে৷”

বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন,”আমাদের দিক থেকে আমরা বন্ধ করে দিয়েছি৷ কিন্তু কোনো কোনো জায়গায় ভিপিএন দিয়ে খেলা হচ্ছে৷ ভিপিএন বন্ধ করা সম্ভব নয়৷ আমাদের সেই প্রযুক্তিও নাই৷ আবার বন্ধ করলে অন্যদের ব্যবসার ক্ষতি হবে৷

আমাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতাও নাই আবার এগুলো যারা আপলোড করে তাদের অফিস দেশের বাইরে৷ এখান থেকে আপলোড হলে আমরা বন্ধ করতে পারি৷ এটা ফেসবুক ও গুগলের ক্ষেত্রেও একই৷ আমরা সব বন্ধ করতে পারি না৷”

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,” শুধু বাংলাদেশ কেন ইন্টারনেটের এই যুগে বিশ্বের কোথাও সবকিছু বন্ধ করা সম্ভব নয়৷ সেটা করা হলে সববিছু বন্ধ হয়ে যাবে৷ কোটি কোটি টাকার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে৷”
অবশ্য তানভীর হাসান জোহা বলেন,”এটা বন্ধ করার প্রযুক্তি আছে৷ কিন্তু বিটিআরসি সেই সেই প্রযুক্তি এখনো আনেনি৷ প্রাইভেট প্রযুক্তি বন্ধ করতে হলে ডিভাইস লাগবে৷ এখন লিংক ধরে বন্ধ করা হচ্ছে৷

যদি গেটওয়ে বা আইএসপি থেকে বন্ধ করা হয় তাহলে সব বন্ধ হয়ে যেতে পারে৷ একবার ফেসবুক বন্ধ করতে গিয়ে এই বিপর্যয় হয়েছিলো৷ কারণ আলাদাভাবে চিহ্নিত করে বন্ধের প্রযুক্তি আমাদের নাই৷ এটা আনতে হবে৷”

আর মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন,”হাজার হাজার ইউজারকে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়৷ তবে প্রযুক্তি আছে৷ সেটা ব্যবহার করতে হবে৷ বিটিআরসি যদি বলে আমাদের সক্ষমতা নাই সেটা দুঃখজনক৷”

হাইকোর্ট একই সঙ্গে অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে টিকটক, বিগো লাইভ ও লাইকির মতো সকল প্রকার ক্ষতিকর অনলাইন গেমস এবং অ্যাপ চিহ্নত করে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে৷ তার তালিকা করছে বিটিআরসি৷

এসএইচ-২৯/০৮/২১ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)