বিএনপি ভোট ও আন্দোলন নিয়ে কৌশল ঠিক করছে!

দেশে অন্যতম একটি প্রধান দল বিএনপি এবার সরকারবিরোধী আন্দোলনের কৌশল ঠিক করতে প্রায় সাড়ে তিন বছর পর মঙ্গলবার থেকে দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বিভিন্ন পদে থাকা নেতাদের সাথে টানা বৈঠক শুরু করতে যাচ্ছে।

তিন দিন ধরে জাতীয় নির্বাহী কমিটির নেতাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই বৈঠক চলবে।

পনেরো বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি ২০২৩ সালের নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ঘুরে দাঁড়াতে এখনই কৌশল ঠিক করতে চাইছে বলে দলটির নেতারা বলেছেন।

তারা আরও বলেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের তাদের পুরোনো দাবি এবং নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন পুর্নগঠনের ইস্যুকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিএনপি কীভাবে এগুতে পারে – ধারাবাহিক বৈঠকে মূলত এ নিয়েই আলোচনা হবে।

দলীয় ফোরামে আলোচনার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সাথেও বৈঠক করার কথা জানিয়েছে।

দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের অনেকে বলেছেন, তাদের নেতৃত্বের ওপর মাঠ পর্যায় থেকে রাজপথের আন্দোলনের ব্যাপারে চাপ রয়েছে।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারি।

সেই বৈঠক করার কয়েকদিন পরই দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া জেলে গিয়েছিলেন দুর্নীতির মামলায়।

এরপর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন তারেক রহমান।

প্রায় সাড়ে তিন বছরে দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠক হয়নি।

এখন লন্ডনে নির্বাসনে থাকা মি. রহমান আজ থেকে তাদের দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটি এবং অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাদের সাথে ধারাবাাহিকভাবে ভার্চুয়ালি বৈঠক করবেন।

তবে বৈঠকে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যদের নয়, কমিটির বিভিন্ন পদে থাকা নেতাদের ডাকা হয়েছে।

এই বৈঠকের আগে সোমবার দলটির সিনিয়র নেতারা বৈঠক করেছেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে তাদের দল কী কৌশল নিতে পারে- তা নিয়েই তারা আলোচনা করবেন।

“নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি-এসব নিয়ে বিভিন্ন স্তরের নেতৃতৃন্দের মতামত আমরা নিচ্ছি” বলেন মি. আলমগীর।

তিনি বলেছেন, তারা তাদের দাবি নিয়ে একটা জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি করতে চান।

বিএনপির নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী-সহ বিশ দলীয় জোট এবং গত নির্বাচনের সময়ের জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট-দু’টি জোটই এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে।

জামায়াতকে নিয়ে বিএনপি বিভিন্ন সময় সমালোচনার মুখে পড়েছে।

এখন কোন ধরনের জোট করবে- এ নিয়েও তাদের মধ্যে সিদ্ধান্তহীনতা রয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব মি. আলমগীর বলেছেন, “বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্বের সাথে ধারাবাহিক বৈঠকে বিশ দলীয় জোট এবং ঐক্য ফ্রন্ট-দু’টি জোটের ব্যাপারেই আলোচনা হবে।”

“ঐক্য কীভাবে করা যায়, কার কার সাথে ঐক্য করা যায়, কারা থাকবে জোটে-এগুলোই আমরা এখন আলোচনা করবো”, বলেন মি. আলমগীর।

আগামী নির্বাচনের দুই বছরেরও বেশি সময় বাকি থাকতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি তাদের দলকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেন।

সে প্রেক্ষাপটে রাজনীতির মাঠে শুরু হয়েছে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা।

বিএনপিও আবার নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের পুরোনো দাবিকে সামনে আনছে।

তবে গত দু’টি নির্বাচনে দলটি তাদের এই দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে।

এবার এই দাবি নিয়ে কতটা এগুনো সম্ভব হবে, তা নিয়ে বিএনপির নেতাদের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে।

তবে দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অনেকে মনে করেন, মাঠে আন্দোলন গড়ে তোলা এবং সংগঠন গোছানো – দুই ক্ষেত্রেই তাদের নেতৃত্ব বার বার হোঁচট খেয়েছে।

কয়েকটি জেলায় বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর সাথে কথা বলে এমন বক্তব্য পাওয়া গেছে।

উত্তরের জেলা বগুড়ায় বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা ভাল ছিল। সেখানকার একজন নেত্রী লাভলী রহমান বলেছেন, সারাদেশে বিপর্যস্ত দলকে সক্রিয় করা এবং আন্দোলনের ব্যাপারে নেতৃত্বের ওপর তাদের চাপ রয়েছে।

“দীর্ঘ সময় ধরে আমরা বিরোধী দলে আছি এবং নেতাকর্মীদের অসংখ্য মামলা মোকদ্দমার কারণে বিএনপি হিমশিম খাচ্ছে। এ অবস্থায় দলকে গোছাতে একটু সময় প্রয়োজন” বলে তারা মনে করেন।

তবে তারা আশা করেন, অল্প সময়ের মধ্যেই তারা মাঠে নামবেন।

বিএনপির মধ্যম সারির নেতাদেরও অবস্থান এখনই মাঠে আন্দোলনের পক্ষে।

দলটির একজন কেন্দ্রীয় নেত্রী এবং সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেছেন, এবার নির্বাচনে তারা আওয়ামী লীগকে কোনভাবে ওয়াকওভার দিতে চান না।

এই অবস্থান তারা তুলে ধরছেন নেতৃত্বের কাছে।

“আমরা আগামী জাতয়ি নির্বাচনে সরকারকে কোনরকম কোন ওয়াকওভার দেবো না। আমরা নিরপেক্ষ সরকারসহ দাবিগুলো নিয়ে এবার অল আউট মাঠে নামব” বলেন মিজ ফারহানা।

তবে নির্দলীয় সরকারের দাবি নিয়ে কতটা সুবিধা করা যাবে- তা নিয়ে বিএনপির মাঠ পর্যায়েও সন্দেহ রয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র নেতারা অবশ্য বলেছেন, ফেব্রুয়ারি মাসে এখনকার নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে।

ফলে কমিশন কতটা নিরপেক্ষ করা সম্ভব-সেই বিষয়কে এখন অগ্রাধিকার দিয়ে দেশের ভেতরে এবং আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির চেষ্টা তারা করবেন।

বিএনপি নিয়ে বইয়ের লিখেছেন মহিউদ্দিন আহমদ।

তিনি বলেছেন, নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন করতে না পারলে বিএনপিকে আবারও ক্ষমতার বাইরে থাকতে হবে, বিএনপি নেতারা এটা মনে করেন।

সে কারণেই বিএনপি এই দাবি নিয়েই এগুতে চাইবে।

কিন্তু বিএনপি তা আদায় করতে পারবে কি না- তারও এই প্রশ্ন রয়েছে।

বিএনপি নেতারা বলেছেন, তারা তাদের দলে ধারাবাহিক আলোচনার পর তাদের কৌশল নিয়ে সরকারবিরোধী সব দল এবং বিভিন্ন নাগরিকদের সাথেও আলোচনা করবেন।

তবে শেষপর্যন্ত বিএনপি পুরোনো কৌশলেই এগুতে পারে-এমন সন্দেহ বিশ্লেষকদের।

এসএইচ-০১/১৪/২১ (কাদির কল্লোল, বিবিসি)