বাল্যবিয়ের ঝুঁকিতে ১ কোটি মেয়েশিশু !

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের হার কমেছে ৪০ শতাংশ। তবুও মূলত পরিবার ও সমাজের চাপে ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই এ পর্যন্ত ১ কোটি ৩০ লাখ মেয়ে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।

চলমান করোনাভাইরাস মহামারির কারণে আরও ১ কোটি মেয়েশিশু বাল্যবিয়ের ঝুঁকিতে আছে। বিভিন্ন গবেষণার ফল অনুসারে, সমাজ এখনও মেয়ে শিশুদের বোঝা হিসেবে বিবেচনা করে, যা বাল্যবিয়ের অন্যতম প্রধান কারণ।

এছাড়াও, ভুয়া বয়স সনদ ও বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭ এর একটি ‘বিশেষ ধারার’ নির্বিচার অপব্যবহারও মহামারির ভেতর আশংকাজনক হারে বাল্যবিয়ে বাড়ার পেছনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে।

সোমবার ‘সেলিব্রেটিং ইন্টারন্যাশনাল ডে অফ দ্য গার্ল চাইল্ড: প্রগ্রেস অ্যান্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এই তথ্য উপস্থাপন করেন অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের প্রোগ্রাম অফিসার (ইয়ং পিপল) আফসানা আলিম। ওয়েবিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে দ্য ডেইলি স্টার ও অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ।

বাল্যবিবাহের কারণে কিশোরী মেয়েরা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে। প্রয়োজন অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ না থাকায় তাদের ঝুঁকি আরও বাড়ছে বলে জানান আফসানা।

এছাড়াও প্রায় দুই তৃতীয়াংশ (৭২ দশমিক ৬ শতাংশ) বিবাহিত বা পূর্বে বিবাহিত ছিলেন এমন মেয়েরা তাদের জীবদ্দশায় স্বামীর হাতে কমপক্ষে এক বা একাধিকবার সহিংসতার শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, আইনি প্রক্রিয়ার সঙ্গে সীমিত সংস্পর্শ থাকায় ভুক্তভোগীদের মধ্যে খুব অল্পসংখ্যক নারী কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেন।

নওগাঁর দশম শ্রেণীর ছাত্রী আজিজা পারভিন বারদোয়াশ শাপলা যুব ফাউন্ডেশনের সঙ্গে কাজ করেন। কীভাবে মহামারির কারণে বাল্যবিয়ে রোধের ক্ষেত্রে তাদের অর্জিত সকল সাফল্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে, তা উপস্থাপন করেন তিনি। স্কুল বন্ধ থাকা ও আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণে অনেক বাবা-মা তাদের অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে সন্তানদের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন।

আজিজা বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ থাকায় আমরা ঠিকমতো কাজ করতে পারিনি। এখন আবারও আমাদের গ্রামে বাল্যবিয়ের সংখ্যা বেড়ে গেছে। যা আমাদের জন্য খুবই হতাশাজনক একটি বিষয়।’

জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাসিমা আক্তার জলি উল্লেখ করেন, ২০২১ সালের প্রথম ৮ মাসে মোট ৮১৩ কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ সময়ে ১৯৩ কন্যাশিশু ধর্ষণ, যৌন হয়রানি ও পারিবারিক দ্বন্দ্বের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। আত্মহত্যা করেছে ১৫৭ জন।

জলি বলেন, ‘আমাদেরকে মেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে। এ ব্যাপারে পারিবারিক পর্যায়েও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।’

তার ভাষ্য, মেয়ে শিশুদের যৌন হয়রানি ও নির্যাতন থামাতে একটি আলাদা ও পূর্ণাঙ্গ যৌন হয়রানি নিরোধ ও প্রতিকার আইন প্রণয়ন করে তার বাস্তবায়ন করত হবে।

বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ বন্ধ করার জন্য কাজ করছে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক গার্লস নট ব্রাইডস। নেটওয়ার্কের বাংলাদেশ প্রতিনিধি রওনক জাহান জানান, তারা মহামারির কারণে কমিউনিটির কাছে যেতে পারেননি। ফলশ্রুতিতে, তারা সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও আইনি সংস্কারের পক্ষে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারেননি।

তবে ২৯টি সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত এই নেটওয়ার্ক তাদের প্রাপ্ত জ্ঞান ও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যমে এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাটি নিয়ে তাদের কাজ অব্যাহত রাখবে বলে নিশ্চয়তা দেন রওনক জাহান।

ওয়েবিনারে আরও বক্তব্য দেন অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, অ্যাক্টিভিস্টা ঢাকা-ওয়াইএফএফ নেটওয়ার্কের সোলিকা আখতার, শি ডিসাইডসের আঞ্চলিক কার্যক্রমের সাপোর্টার সৈয়দা সামারা মোর্তাদা, ইউএন উইমেনের প্রকল্প বিশ্লেষক (জলবায়ু পরিবর্তন প্রকল্প) প্রিয়দর্শিনী অভি এবং এডুকো বাংলাদেশের পলিসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি ব্যবস্থাপক হালিমা আখতার।

ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক (উইমেন রাইটস অ্যান্ড জেন্ডার ইকুইটি) মরিয়ম নেসা।

এসএইচ-০৩/১২/২১ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : দ্য ডেইলি স্টার)