পূজা মণ্ডপে হামলার ঘটনায় ভারতজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া

কুমিল্লার পূজামণ্ডপে কোরআন পাওয়া এবং সেটিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি মন্দিরে হামলা ও পুলিশের সাথে হামলাকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে ভারতের সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে রক্ষার দাবি নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় নানা রকম পোস্ট এবং কমেন্ট করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের ঘটনা প্রবাহ নিয়ে ভারতের সামাজিক মাধ্যমে শুধু যে বাংলা ভাষাভাষীরা প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তা নয়।

অনেক পোস্ট দেখা যাচ্ছে হিন্দি এবং ইংরেজিতে লেখা।

বেশিরভাগ মানুষের পোস্ট বা টুইট দেখে বোঝাই যাচ্ছে তারা হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গে যুক্ত এবং পরিকল্পনা মাফিক পোস্ট করছেন।

সোশাল মিডিয়াতে যেসব পোস্ট ছবি বা ভিডিও ব্যবহার করা হচ্ছে তাতে লেখা হচ্ছে, “দেখুন কীভাবে পূজা প্যান্ডেলে পাথর ছোঁড়া হচ্ছে।”

“অষ্টমীর দিনেই বিসর্জন হয়ে গেল বাংলাদেশের দুর্গা পূজার”, এমন মন্তব্যও করেছেন কেউ কেউ।

কিছু পোস্টে মানুষ যেমন শুধুমাত্র কুমিল্লা বা হাজীগঞ্জের হামলার ঘটনাগুলোরই নিন্দা করছেন, তেমনই অনেক পোস্ট চোখে পড়ছে, বিশেষত হিন্দি বা ইংরেজিতে লেখা সেগুলো যেখানে সরাসরি মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেওয়া হচ্ছে।

হিন্দুত্ববাদের সমর্থকদের ওইসব পোস্ট এবং কমেন্টে লেখার ধরণ আর যেসব হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো আগে থেকেই ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে নানা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে।

‘বাংলাদেশি হিন্দুস ইন ডেঞ্জার’, ‘বাংলাদেশি হিন্দুস আর হেল্পলেস’ কিংবা ‘সেভ বাংলাদেশি হিন্দু’ – এধরনের কয়েকটা হ্যাশট্যাগ বেশি নজরে পড়ছে।

হ্যাশট্যাগ আর পোস্ট ছাড়াও অনেকে কুমিল্লা আর হাজীগঞ্জের ঘটনার ছবি দিয়ে কোলাজ – পোস্টার – ফ্লায়ার এসবও বানিয়েছেন।

“আর একধরণের পোস্ট দেখছি, যেগুলোতে বাংলাদেশের ওই ঘটনাকে টেনে এনে পশ্চিমবঙ্গে অশান্তি তৈরির চেষ্টা ব্যর্থ হবে, এমনটাও দাবি করা হচ্ছে। এগুলো হিন্দুত্ব বিরোধীদেরই পোস্ট বলে বোঝা যাচ্ছে,” জানাচ্ছেন অমিতাভ ভট্টশালী।

এছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যেও একটা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কিন্তু সেগুলো যথেষ্টই ম্রিয়মাণ।

তারা শুধু দুঃখপ্রকাশ করেছেন এরকম ঘটনার জন্য।

কুমিল্লার ঘটনার পর বিভিন্ন জেলায় বাংলাদেশের সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলোর বিষয়ে ভারতের সামাজিক মাধ্যমে কথাবার্তা হচ্ছে কমই।

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য যে বিবৃতি দিয়েছেন, সেখানেও কিন্তু তিনি বলছেন যে এবিষয়ে বাংলাদেশ সরকার নিশ্চুপ।

তবে বেশ কিছু পোস্ট এবং কমেন্ট চোখে পড়েছে যেখানে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন যে কোনও হিন্দু ব্যক্তি যেমন তাদের পূজা মণ্ডপে কোরআন রাখতে যাবেন না, তেমনই কোনও মুসলমানও কোরআন দুর্গা পূজার প্যান্ডেলে গিয়ে রেখে আসবেন না — এই গোটা ঘটনাই যে চক্রান্ত করে ঘটানো হয়েছে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে দাঙ্গা বাঁধানোর লক্ষ্যে।

এধরণের কিছু কথাও কয়েকটি পোস্টে দেখা যাচ্ছে।

আর একটি পোস্ট বেশ শেয়ার করা হচ্ছে। পোস্টটি যিনি করেছেন তিনি কুমিল্লার ওই পূজামণ্ডপের একেবারে পাশেই থাকেন বলে দাবি করেছেন।

তার নাম দেখে বোঝা যাচ্ছে তিনি একজন মুসলমান।

তার বক্তব্য, পরিকল্পনা করে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সেই পোস্টটিও অনেকেই শেয়ার করছেন ভারতে। এছাড়া নানা ধরনের গুজবও ছড়ানো হচ্ছে সোশাল মিডিয়ায়।

এসএইচ-২৬/১৪/২১ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্যসূত্র : বিবিসি)