সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ নেই

সিসি কামেরায় ধরা পড়া যুবকই কুমিল্লার পূজা মণ্ডপে পবিত্র কোরান রেখেছেন বলে জানিয়েছেন কুমিল্লার পুলিশ সুপার (এসপি) ফারুক আহমেদ৷ তিনি চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ নেই৷

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে এই ঘটনায় ওই যুবক ইকবাল হোসেনের(২৫) স্বার্থ কী? নিশ্চয়ই এর পিছনে কোনো শক্তিশালী চক্র আছে৷ এসপি এর জবাবে বলেন, ‘‘ইকবালকে গ্রেপ্তার করতে পারলে আমরা এসব জানতে পারব৷’’

বুধবার পুলিশের পক্ষ থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশ করা হয়৷ আর বলা হয় পাশের দারোগাবাড়ি মসজিদ থেকে থেকে সে কোরান এনে ১২ অক্টোবর দিবাগত রাত তিনটার পর কোনো এক সময় নানুয়া দিঘীর পাড় মণ্ডপে ঢোকার পথে হনুমানের মূর্তির কাছে রাখে৷

বৃহস্পতিবার সিসি ক্যামেরার আরও একটি ফুটেজ প্রকাশ করা হয়েছে৷ তাতে দেখা যায় এক ব্যক্তি দারোগাবাড়ি মসজিদ থেকে পবিত্র কোরান নিয়ে বের হচ্ছেন৷ ফুটেজটা কিছুটা আবছা৷ পুলিশ বলছে তিনি ইকবাল৷ মসজিদ থেকে ওই কোরান নিয়েই তিনি মণ্ডপে রাখেন৷

ইকবালের ছোট বোন সুলতানা বেগম জানান,‘‘ভিডিও ফুটেজে যাকে দেখা গেছে সেই আমার ভাই ইকবাল৷ তবে ১০ বছর ধরে সে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন৷ সে বিবাহিত এবং তার একটি মেয়ে আছে৷ সে রঙ মিস্ত্রির কাজ করত৷ ১০-১২ দিন আগে সর্বশেষ তাকে এলাকার লোকজন দেখেছেন৷ আমরা পাঁচ ভাই বোন এবং ইকবাল সবার বড়৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘ইকবাল মাদকাসক্ত এবং মানুষের সাথে নানা ঝামেলা করত৷ সে কারনেই তাকে পরিবার থেকে বের করে দেয়া হয়৷ তবে সে দারোগাবাড়ি মসজিদে যেত৷ সেখানে থাকত৷ সে অপরাধী হলে তাকে যেন শাস্তি দেয়া হয়৷’’

তবে সুলতানার কথা, ‘‘সে কেন এই পাগলামি করল! তার কী স্বার্থ থাকতে পারে? আপনাদের কাছে অনুরোধ তার জবানবন্দি নেন৷ কারা তাকে দিয়ে এই কাজ করাল, আপনারা বের করেন৷’’

তিনি জানান, তারা মামা তাজির ইসলাম এবং ছেটো ভাই ছোটনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে ইকবালের খোঁজ জানতে৷ কিন্তু ওই ঘটনার পর পরিবারের সাথে ইকবাল আর কোনো যোগাযোগ করেননি৷

কুমিল্লার লেখক এবং গবেষক আহসানুল কবির বলেন, ‘‘কারণ ছাড়া বৃষ্টিও পড়েনা৷ ইকবাল কারণ ছাড়া এটা করবে কেন? আর তার কী স্বার্থ থাকতে পারে কিছু টাকা-পয়সা পাওয়া ছাড়া৷ এটা স্পষ্ট যে তাকে কোনো কুচক্রী মহল ব্যবহার করেছে৷ আর তারা পরিকল্পিতভাবে এটা করেছে৷ সেটা না হলে এই ঘটনা কুমিল্লায়ই শেষ হয়ে যেত৷ দেশের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ত না৷’’

তার মতে, ‘‘নেপথ্যে যারা আছেন তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে৷ যদি তা করা না হয় তাহলে একই ধরনের ঘটনা বার বার ঘটতেই থাকবে৷ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় দেশের মানুষের সামনে তাদের চেহারা উন্মোচন করা দরকার৷’’

কুমিল্লার এসপি ফারুক আহমেদ বলেন, ‘‘আমরা এখন পুরোপুরি নিশ্চিত যে ইকবালই মণ্ডপে পবিত্র কোরান শরিফ রেখেছিলো৷ আমরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং অন্যান্য তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এটা নিশ্চিত হয়েছি৷ পাশের মসজিদ থেকে সে কোরান আনে৷ এখন আমরা তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি৷’’

ফুটেজ পেতে এত দেরি এবং এবং তাকে এখনো কেন গ্রেপ্তার করা যায়নি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি৷ আশা করি অচিরেই তাকে গ্রেপ্তার করতে পারব৷’’

এদিকে সিসি ক্যামেরার যথার্থ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘মোট ১২টি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আমরা জব্দ করেছি৷ আপনারা চাইলে তা আমরা অফিসে এসে দেখে যেতে পারেন৷ দেখলে আর প্রশ্নের অবকাশ থাকবে না৷ আর ক্যামেরাগুলো একটি নির্দিষ্ট সময় পর দিক পরিবর্তন করে, মুভ করে৷ এটা বুঝতে এখন আর এক্সপার্ট হতে হয় না৷ যে কেউ পুরো ফুটেজ দেখলেই বুঝতে পারবে৷ এগুলো মুভিং ক্যামেরা ৷ এখনো লাগানো আছে৷ যে কেউ গিয়ে দেখতে পারেন৷ ছবি তো আর মিথ্যে কথা বলে না৷’’

এর সাথে প্রভাবশালী কোনো পক্ষ জড়িত থাকতে পারে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এটা তো তাকে গ্রেপ্তারের পর বিস্তারিত তদন্তে জানা যাবে৷’’

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিং-এ বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তি(ইকবাল) মোট তিনবার পাশের মসজিদে রাত তিনটার দিকে গিয়েছেন৷ আমাদের অভিজ্ঞ বিশ্লেষকেরা দীর্ঘক্ষণ ধরে এটা(ফুটেজ) এনালাইসিস করে নিশ্চিত হয়েছে যে ওই ব্যক্তি মসজিদ থেকে কোরান এনে রেখেছেন৷’’

কুমিল্লার ঘটনায় এপর্যন্ত মোট নয়টি মামলায় ৪৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তাদের মধ্যে মণ্ডপ থেকে ফেসবুক লাইভ যিনি করেছেন সেই ফয়েজ এবং তার এক সহযোগী আছেন৷

এদিকে পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় সারা দেশে ৭২টি মামলায় ৪৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷

এসএইচ-২৭/২১/২১ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)