শাখা সিঁদুর পরে বের হওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হিন্দু নারীরা!

কুমিল্লায় একটি পূজামণ্ডপে কোরআন পাওয়ার পর সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়কে টার্গেট করে সবচেয়ে ভয়াবহ এবং বিস্তৃত সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে বলেছেন, এখন তাদের বাংলাদেশে নিরাপদে বসবাস করা বা নিরাপত্তার প্রশ্নে শঙ্কা আরও বেড়েছে।

অন্যদিকে মুসলিমরাও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। চাঁদপুরে মুসলমিদের একটি মিছিল থেকে মন্দিরে হামলা করার সময় পুলিশের গুলিতে পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং চাঁদপুর- এই তিনটি জেলায় গত সোমবার থেকে কয়েকদিন ধরে সরেজমিন ঘুরে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া আমি পেয়েছি।

নোয়াখালীর চৌমুহনী এবং কুমিল্লায় সহিংসতার শিকার হিন্দু সম্প্রদায়ের বহু মানুষের সাথে আমি কথা বলেছি।

তাদের চোখে মুখে যেমন ভয় বা আতঙ্ক দেখেছি, তেমনি তাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে এমনও দেখেছি।

চৌমুহনীতে ইসকন মন্দিরে হামলার ঘটনার পরদিন প্রান্ত দাশ নামের এক যুবকের মৃতদেহ পাওয়া যায় একটি পুকুরে।

তার মা বনলতা দাশ সেখানে গিয়ে ছেলের মৃতদেহ শনাক্ত করেন।

সেই ইসকন মন্দিরে গত মঙ্গলবার যখন কথা বলেছি, তখন দেখেছি, ছেলের সারা শরীরে কোপাকুপির আঘাতের চিহ্ন থাকা মৃতদেহ দেখে তিনি কীভাবে শোকে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন।

একদিকে তাঁর ছেলে হারানোর বেদনা, অন্যদিকে এই ঘটনার পর ভবিষ্যত নিরাপত্তা নিয়ে শংকা তৈরি হয়েছে তার মনে।

নোয়াখালীর চৌমুহনী এবং কুমিল্লায় সহিংসতার শিকার হিন্দু সম্প্রদায়ের বহু মানুষের সাথে আমি কথা বলেছি।

তাদের চোখে মুখে যেমন ভয় বা আতঙ্ক দেখেছি, তেমনি তাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে এমনও দেখেছি।

চৌমুহনীতে ইসকন মন্দিরে হামলার ঘটনার পরদিন প্রান্ত দাশ নামের এক যুবকের মৃতদেহ পাওয়া যায় একটি পুকুরে।

তার মা বনলতা দাশ সেখানে গিয়ে ছেলের মৃতদেহ শনাক্ত করেন।

সেই ইসকন মন্দিরে গত মঙ্গলবার যখন কথা বলেছি, তখন দেখেছি, ছেলের সারা শরীরে কোপাকুপির আঘাতের চিহ্ন থাকা মৃতদেহ দেখে তিনি কীভাবে শোকে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন।

একদিকে তাঁর ছেলে হারানোর বেদনা, অন্যদিকে এই ঘটনার পর ভবিষ্যত নিরাপত্তা নিয়ে শংকা তৈরি হয়েছে তার মনে।

১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মন্দিরটি নিয়ে এখন তাদের মধ্যে এমন উদ্বেগ বাড়ছে বলে উল্লেখ করেন রসপ্রিয় দাশ।

মন্দিরটি অনেক পুরনো। তবে এক দশক আগে ইসকন এর দায়িত্ব নিয়েছে।

কুমিল্লায় গত ১৩ই অক্টোবর পূজামণ্ডপে কোরআন পাওয়ার পর সেখানে পূজামণ্ডপে বা মন্দিরে হামলার ঘটনা ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে পুলিশ এবং স্থানীয় রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এসেছে।

এর দু’দিন পর ১৫ই অক্টোবর শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর চৌমুহনীতেও পূজামণ্ডপ, মন্দির এবং হিন্দুদের বাড়িঘর-ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনার ক্ষেত্রে প্রশাসনের ব্যর্থতার কথা এসেছে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে বলেছেন, বাংলাদেশ এখন তাদের জন্য কতটা নিরাপদ-সেটা তাদের বেশি ভাবাচ্ছে।

চৌমুহনীতে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা তপন চন্দ্র মজুমদার কিছুটা ক্ষোভের সাথে বললেন, হামলার সময় তিন ঘন্টায় তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ, পুলিশ বা প্রশাসনের কোন সাহায্য পাননি।

“সেদিনের ঘটনায় আমরা মনে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছি। আমরা আদৌ আঘাত পুষিয়ে সামনে এখানে থাকতে পারবো কিনা- এটা আমার কাছে সন্দেহ হচ্ছে,” বলেন মজুমদার।

হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে বলেছেন, ১৯৪৭ সালের দাঙ্গার পর এই প্রথম চৌমুহনীতে হিন্দুদের টার্গেট করে সাম্প্রদায়িক হামলা চালানো হয়েছে।

ফলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে তাদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা বা কাজকর্ম একেবারে থমকে গেছে।

নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একজন নারী বলেছেন, তিনি এখনকার পরিবেশে ঘর থেকে বের হতেই ভয় পাচ্ছেন।

“ধরেন, আমি ঘরের বাইরে বের হব। আমার কোন নিরাপত্তা নেই। এখন আমার হাতে শাখা আছে, সিঁদুর আছে। এগুলো নিয়ে আমি কীভাবে বের হব?” – প্রশ্ন করলেন ঐ নারী।

তিনি মনে করছেন, তাদের পুরুষদের ধর্মীয় কোন চিহ্ন শরীরে থাকে না। ফলে তারা বের হয়ে কাজকর্ম করার চেষ্টা চালাতে পারে। কিন্তু নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

চৌমুহনীতে কাছাকাছি দূরত্বেই কয়েকটি মসজিদ এবং মন্দির রয়েছে। সেখানে সহিংসতার ঘটনায় মুসলিমদেরও অনেকে অবাক হয়েছেন।

তারাও মনে করেন, যুগ যুগ ধরে যেখানে সম্প্রীতির পরিবেশ ছিল, সেখানে এখনকার ঘটনায় পরিবেশটাই ওলটপালট হয়ে গেছে।

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে আবার মুসলিমদের মাঝে ক্ষোভ দেখা গেছে সেখানে বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে হতাহতের ঘটনা নিয়ে।

কুমিল্লায় যেদিন কোরআন পাওয়া যায়, সেদিনই রাতে বিক্ষোভ মিছিল থেকে মন্দিরে হামলার সময় পুলিশের গুলিতে পাঁচজন নিহত হয়।

এই নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই কিশোর ও তরুণ। নিহতদের স্বজনরা বিচার চাইছেন। কিন্তু তারা মামলা করেননি।

তারা মনে করেন, ঘটনার তদন্ত এবং বিচার করার দায়িত্ব সরকারের।

যদিও সরকারের পক্ষ থেকে সব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলা হচ্ছে।

তবে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত নোয়াখালী, কুমিল্লা এবং চাঁদপুরের আওয়ামী লীগের দলীয় একাধিক সংসদ সদস্যের সাথে আমি কথা বলেছি।

তারা বলেছেন, এবারের ঘটনাগুলো হিন্দু সম্প্রদায়কে বেশি আতঙ্কিত করেছে-এ নিয়ে তাদের দলের ভেতরেও আলোচনা চলছে।

এসএইচ-০১/২২/২১ (কাদির কল্লোল, বিবিসি)