ইউনিয়ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগে বিদ্রোহ, আতঙ্ক

ইউনিয়ন পরিষদের দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে তৃণমূলে বিদ্রোহ থামাতে পারছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ৷ এজন্য কয়েকটি এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীতাও উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে৷ আর এই অবস্থায় সহিংসতার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে৷

মাগুরায় নির্বাচনের আগেই সহিংসতায় চারজন নিহত হয়েছেন ৷ সিলেটে ২৩ অক্টোবর নিহত হয়েছেন একজন৷ সর্বশেষ বুধবার রাঙামাটিতে একজন নিহত হয়েছেন৷ এই সব সহিংস ঘটনায় প্রতিপক্ষকে দায়ী করা হচ্ছে৷ বিএনপি নির্বাচনে না থাকায় এখন আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ৷ আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৮ টি ইউনিয়নে ভোট হবে৷ তার আগেই এই সহিংসতা শুরু হয়েছে৷ নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে সহিংসতা তত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে৷

গত সেপ্টেম্বরে প্রথম ধাপের স্থগিত ১৬০ টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হয়৷ ভোটের দিনই নিহত হয় চার জন৷ আর গত জুনে হয় প্রথম ধাপের নির্বাচন৷

দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে এরইমধ্যে আওয়ামী লীগের ৭৬ জন প্রার্থী বিনা ভোটে নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন৷ তারপরও ৬৯১ জন বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন৷ প্রথম দফায় বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন ৭২ জন৷ তাই এবার আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি৷ তাদের কেন্দ্র থেকে কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না৷ তাদের কথা বিএনপি নির্বাচনে নাই তাই দলীয় প্রার্থী হলেও ছাড় দেয়া হবে না৷ ভোটে যা হয় হবে৷ আর এই কারণে উত্তেজনা এবং সহিংসতাও বাড়ছে৷

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার আটাবর ইউনিয়নের নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী এম এ আলীম বলেন, ‘‘এলাকার জনগণ আমাকে চায় তাই দল মনোনয়ন না দিলেও আমি প্রার্থী হয়েছি৷ জনগণের দাবি তো আর আমি উপেক্ষা করতে পারি না৷ যিনি নৌকা পেয়েছেন তিনি আমার চেয়ে জনপ্রিয় কি না তা তো ভোটেই বোঝা যাবে, জনগণ বলবে৷ তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘কোনো সহিংসতা হবে না৷ বিএনপি তো নির্বাচনে নাই৷ আমরা আমরাই তো নির্বাচন করব৷ আওয়ামী লীগের মধ্যেই তো নির্বাচন হবে৷’’

ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীগ প্রার্থী ইব্রাহীম খালেদ বলেন, ‘‘বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই৷ প্রার্থী হওয়া তার ইচ্ছা, স্বাধীনতা৷ যে কেউ প্রার্থী হতে পারেন৷ জনগণ বুঝবে৷’’

তিনি জানান,‘‘এই ইউনিয়নে বিএনপি, জামাত বা অন্যকোনো দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাই৷ তাই নির্বাচন আওয়ামী লীগের মধ্যেই হবে৷’’

যেসব এলাকায় অন্য কোনো দলের প্রার্থী নাই সেখানে উত্তেজনা একটু কম৷ তবে ওইসব এলাকায় আওয়ামী লীগ দুই ভাগ হয়ে গেছে৷ কিন্তু নির্বাচনের ঠিক আগে কী পরিস্থিতি হয় তা বলা যাচ্ছে না৷

মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বাঘরা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল ইসলাম ৷ ওই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবু নাসের তানজিল৷ নুরুল ইসলাম বলেন,‘‘তানজিল দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন৷ বিএনপি নির্বাচনে দলীয়ভাবে না থাকলেও বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী আছে৷ আওয়ামী লীগের ভোট ভাগ হয়ে গেলে তারা সুবিধা পাবে৷ তারপরও দেখা যাক কী হয়৷’’

তিনি বলেন, দল থেকে বার বার হুশিয়ার করার পরও বিদ্রোহীরা থামছেন না৷ এটা শুধু মুন্সিগঞ্জেই না সারাদেশেই বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছে৷

এনিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী আবু নাসের তানজিল টেলিফোনে বিস্তারিত কথা বলতে রাজি হননি৷ বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা চাপে আছেন৷ কারণ এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ১০১ এবং বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন ৩১১ জন৷ ওইসব এলাকায় সহিংসতা বেশি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে৷

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন, ‘‘যারা মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্রভাবে বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন তাদের বহিস্কৃত বলে ধরে নেয়া হবে৷’’

‘‘তারপরও আমরা চেষ্টা করছি স্থানীয় পর্যায়ে সমঝোতা করে যাতে বিদ্রোহী প্রার্থীরা বসে গিয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন৷ শেষ পর্যন্ত তারা প্রার্থী থাকলে দল থেকে চূড়ান্তভাবে বহিস্কার করা হবে,” জানান আওয়ামী লীগের এই নেতা৷

কিছু এলাকায় দলীয় প্রার্থীতা উন্মুক্ত করে দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘বহিস্কার যেমন সিদ্ধান্ত, তেমনি এটাও দলের সিদ্ধান্ত৷’’

কোনো কোনো এলাকার আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্যদের অনুরোধে দলীয় প্রার্থীতা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে৷ ওই সব এলাকায় কোনো প্রতীক থাকবে না৷ এর কারণ সবাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী৷ সংসদ সদস্যরা নিজেরা কোনো প্রার্থীর পক্ষে না থেকে সবাইকে পক্ষে রাখতে চান৷ এটা তারা করছেন আগামী জাতীয় নির্বাচনে সবাইকে সাথে পাওয়ার আশায়৷

এসএইচ-২৪/২৭/২১ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)