আইন ও রাজনীতির বেড়াজালে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা করতে যাওয়া এখনো সম্ভব হয়নি৷ বিএনপি চাচ্ছে তার মানবিক কারণে তার বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ৷ তবে সরকার বলছে, আইন অনুযায়ী সেই সুযোগ পেতে হলে খালেদা জিয়াকে ফের কারাগারে গিয়ে আবেদন করতে হবে৷

প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন তার নির্বাহী ক্ষমতা বলে এ বিষয়ে তিনি সর্বোচ্চ মানবিকতা দেখিয়েছেন৷ খালেদা জিয়াকে জেলের বাইরে থাকতে দিয়েছেন- এ কথা উল্লেখ করে এমন মন্তব্য করেন তিনি৷ আর আইনমন্ত্রী বলেছেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে গিয়ে নতুন করে আবেদন করতে হবে৷ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মানবিক বিবেচনায় হলেও খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেয়ার অনুরোধ করেছেন৷ তিনি মনে করেন, খালেদা জিয়ার প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করা হচ্ছে৷

বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে সর্বশেষ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ১৩ নভেম্বর৷ ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে আছেন তিনি৷ তাকে সেখানেই আইসিইউ সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে৷ তার চিকিৎসকরা বলছেন, ৭৬ বছর বয়সি খালেদা জিয়ার প্রতিদিনই ২-৩ লিটার অক্সিজেন লাগছে৷ তার শরীরে ইলেকট্রোলাইট, অর্থাৎ সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ,ম্যাগনেশিয়াম ও ক্লোরিন উপাদানের পরিমাণ কমছে৷ রক্তের হিমোগ্লোবিন কোনোভাবেই বাড়ানো যাচ্ছে না৷ ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে৷ এছাড়া স্বাস্থ্যের অন্য প্যারামিটারগুলোর অবস্থাও অবনতির দিকে৷

কিডনির ক্রিয়েটিনিন বাড়ছে৷ তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকলেও ডায়বেটিস একেবারে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না৷ শরীর দুর্বল হয়ে পড়ছে৷ এর আগে ৭ নভেম্বর ২৬ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে তিনি গুলশানের বাসায় ফিরেছিলেন৷

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স মনে করেন, ‘‘সরকার ইচ্ছে করে খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে চিকৎসার সুযোগ দিচ্ছে না৷ এটা অমানবিক৷”

তার কথা, ‘‘তাকে দণ্ডবিধির যে ৪০১ ধারায় নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত রেখে সাময়িক মুক্তি দিয়ে বাসায় থাকার সুযোগ দেয়া হয়েছে. সেই ধারায়ই সরকার চাইলে তাকে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার সুযোগ দিতে পারে৷ ওই আইনে শর্ত সাপেক্ষে বা শর্তহীন মুক্তি দেয়া যায়৷ দণ্ড স্থগিত বা মওকুফ করা যায়৷ সরকার রাজনৈতিক কারণে সেটা করছে না৷”

তিনি বলেন, ‘‘আদালতে গিয়ে আমরা এর সমাধান পাবো না৷ কারণ, আদালতকে দলীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে৷ খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় দণ্ড দেয়া হয়েছে৷”

তার মতে, ‘‘খালেদা জিয়াকে জেলখানায় গিয়ে আবার আবেদন করতে বলা একটা চরম নিষ্ঠুরতা৷ কারণ, এরই মধ্যে নতুন আবেদন করা হয়েছে৷”

এর জবাবে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ডা. হাবিবে মিল্লাত বলেন, ‘‘আইনজীবী ও রাজনীতিবিদরা যদি বিচারকের আসনে বসেন, তাহলে তো সমস্যা৷ খালেদা জিয়া কতটা অসুস্থ তা তো বলতে হবে৷ খালেদা জিয়ার দলীয় চিকিৎসকরা তার গুরুতর অসুস্থতার কথা বলছেন৷ মূলত যারা চিকিৎসক, তারা কিন্তু কিছু বলছেন না৷ খালেদা জিয়ার মূল চিকিৎসকরাই বলবেন তার কোথায় চিকিৎসা দরকার৷ তিনি এখন বাংলাদেশের সেরা হাসপাতালে চিকিৎসা পাচ্ছেন৷ ওনার চিকিৎসা ভালোভাবেই হচ্ছে৷ যারা এটা নিয়ে নানা কথা বলছেন. তারা একটি রাজনৈতিক ইস্যু সৃষ্টির জন্য বলছেন৷”

তার কথা, ‘‘প্রধানমন্ত্রী তার প্রতি সর্বোচ্চ মানবিকতা দেখিয়েছেন৷ দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির তো জেলে থাকতে হয়, তিনি তো জেলের বাইরে আছেন৷ আর কারাগারেও তাকে তার পরিচারিকাকে সঙ্গে থাকতে দেয়া হয়েছিলো৷”

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘খালেদা জিয়াকে বিদেশ থেকে চিকিৎক এনেও এখানে চিকিৎসা করানো যেতে পারে৷ কিন্তু সেই সিদ্ধান্তও তো চিকিৎসকরা দেবেন৷ রাজনৈতিক কথা বললে তো হবে না৷”

২০২০ সালের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়া কারাগার থেকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পান৷ নির্বাহী আদেশে তার দণ্ড স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়া হয়৷ এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করে করে তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়৷ সর্বশেষ ১১ নভেম্বর খালেদা জিয়ার পুত্রবধু শর্মিলা রহমান খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর আবেদন করেন ৷ এর আগে ৬ মে বিদেশে পাঠানোর আবেদন করা হলেও তা নাকচ হয়৷

এসএইচ-০৮/১৯/২১ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)