খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইস্যুতে বিএনপি সংকটের মুখে

বিএনপির নেতাদের অনেকে বলেছেন, তাদের নেত্রী খালেদা জিয়া যখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন বলে তারা মনে করছেন, তখনও তারা সরকারের ওপর চাপ তৈরি করতে পারছেন না।

তারা মনে করেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইস্যুতে বিএনপি বড় ধরনের সংকটের মুখোমুখি হয়েছে।

অসুস্থ খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে তাঁর পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষাপটে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আইনে সেই সুযোগ নেই।

বিএনপি এখন কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামার পর তা অব্যাহত রাখার কথা বলেছে।

বিএনপি আজ সোমবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।

ঢাকার বাইরে কয়েকটি জায়গায় সমাবেশ করার সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।

এখন রাজপথে কর্মসূচি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সরকারের সাথে দেনদরবার করাসহ সব ধরনের চেষ্টা চালানোর কথা বলছেন বিএনপি নেতারা।

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে তাঁর ভাইয়ের আবেদনের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও লিখিতভাবে কোন জবাব দেয়া হয়নি।

কিন্তু সংবাদমাধ্যমে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রীও বক্তব্য দিয়েছেন যে, আইনে এই অনুমতি দেয়ার সুযোগ নেই। যেহেতু সরকারের নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে ৭৬ বছর বয়স্ক মিসেস জিয়া শর্তসাপেক্ষে মুক্ত রয়েছেন।

সরকারের শীর্ষপর্যায়ের এ ধরনের বক্তব্যের মুখে বিএনপি এখন কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নেমেছে।

শেষপর্যন্ত সরকারের ওপর কতটা চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে-সেই প্রশ্নে দলটির ভেতরে সন্দেহ রয়েছে।

দলটির নেতারা পরিস্থিতিটাকে তাদের দলের জন্য একটা সংকট হিসাবে দেখছেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, এই ইস্যুতে সরকারকে নমনীয় করতে তারা কর্মসূচি অব্যাহত রাখা এবং পরিবারের আবেদন নিয়ে এগুনোসহ সব চেষ্টা তারা চালাবেন।

“সবচেয়ে বড় সংকট হিসাবে আমরা দেখছি” বলেন মি: আলমগীর।

তিনি বলেন, “মানুষের জীবনের সংকটের চেয়ে বড় সংকট আর কী হতে পারে-আমরা সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে আমরা সব ধরনের চেষ্টা করছি।”

“বিদেশে চিকিৎসার অনুমতির জন্য তাঁর পরিবারের আবেদন রয়েছে। আমরা রাজনৈতিকভাবে চেষ্টা করছি। অন্যান্য রাস্তা যা আছে- আমরা সবদিক থেকেই চেষ্টা করছি” বলেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি উল্লেখ করেন, অন্য রাজনৈতিক শক্তি বা দলগুলোও বিষয়টাতে তাদের সমর্থনে কথা বলছে।

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলায় সাজা থাকায় তিনি তার মায়ের এমন অসুস্থতার সময়ও দেশে আসতে পারছেন না।

এ ব্যাপারে দলটি এখনও কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না এবং এটিও তাদের সংকট বাড়িয়েছে।

তবে বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, বিএনপির দূর্বলতার কারণে দলটি এমন পরিস্থিতিতে এসে ঠেকেছে।

সিনিয়র সাংবাদিক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ বলছেন, অনেক দেরিতে বিএনপি তাদের নেত্রীর ইস্যুকে রাজপথে নিয়েছে এবং তাতে কতটা ফল হবে-তা নিয়ে তার সন্দেহ রয়েছে।

“খালেদা জিয়ার ঘটনা অর্থ্যাৎ যেভাবে তাঁর বিচার করা হলো বা তাঁকে জেলে নেয়া হলো-এই পুরো ঘটনাটাই বিএনপির জন্য সংকট” বলে মনে করেন মি:আহমেদ।

“এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য প্রথম থেকেই বিএনপি যা করা উচিত ছিল, তাতে আশাব্যঞ্জক কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি।”

“খালেদা জিয়া অসুস্থ, দল কিছু করছে না-এমন আলোচনা ছিল দলটির তৃণমুলে। সেজন্য বর্তমান আন্দোলন বা চাপ তৈরি-যেটাই বলা হোক, সেটা তারা করার চেষ্টা করছে,” বলেন সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ।

এখন বিএনপির আর কোন উপায় নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন, তাদের দলের নেতৃত্ব সমাধান চাইছে খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনের ওপর ভিত্তি করে।

কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের বলা হয়েছে, বিষয়টাতে সরকারকে নমনীয় করার জন্য এখন দলকেই দায়িত্ব নিতে হবে।

সে প্রেক্ষাপটে কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামার পাশাপাশি সংসদে বিএনপির যে সাতজন সদস্য রয়েছেন, প্রয়োজনে তারা পদত্যাগ করবেন-এই চিন্তাও এখন দলটির নেতৃত্বের রয়েছে।

বিএনপির একজন সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলছেন, খালেদা জিয়ার কোন খারাপ পরিস্থিতি হলে তার দায় সরকারও এড়াতে পারবে না, এই আলোচনাও তাদের নেতাকর্মিদের বড় অংশের মাঝে রয়েছে।

সেজন্য সরকারকে বাধ্য করতে কঠোর অবস্থান নেয়ার সিদ্ধান্তও তাদের রয়েছে।

“গত তিন বছর তিনি (খালেদা জিয়া) সরকারের হেফাজতে ছিলেন। কারাগারে ছিলেন। এরপর সরকারি আদেশে গত বছরের মার্চে মুক্ত হলেও তিনি (খালেদা জিয়া) এক রকম গৃহবন্দী। সেজন্য দায় সরকারের” বলে মন্তব্য করেন রুমিন ফারহানা।

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলেছেন, শর্তসাপেক্ষে বা নি:শর্তে- যে ভাবেই হোক, এখন তারা খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি জন্য সরকারের ওপরই নির্ভর করছেন।

যদিও বিএনপি এখনও সরকারের সাথে দৃশ্যত সরাসরি কোন আলোচনায় বসতে পারেনি।

এর মাঝে অবশ্য বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের কয়েকটি দলের নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দেখা করে তারাও বিদেশে চিকিৎসার অনুমতির জন্য একটি আবেদন করেছেন।

দলটির নেতারা বলেছেন, ফৌজাদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী সরকারের নির্বাহী আদেশেই সাজা স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল।

এর পর থেকে ছয় মাস পর পর সরকারই সেই মেয়াদ বাড়িয়েছে। ফলে সেই বিধি নিয়ে সরকার ভিন্ন ব্যাখ্যা দিলেও বিএনপি মনে করে, এই বিধিতে সরকারের হাতেই সমাধানের ক্ষমতা রয়েছে।

বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, সরকার মানবিক দৃষ্টিতে এবং রাজনৈতিক দিক থেকে ইতিবাচক সাড়া দেবে, এখনও তারা সেটা চাইছেন।

এসএইচ-২৮/২২/২১ (কাদির কল্লোল, বিবিসি)