সংলাপের মাধ্যমে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব!

রাষ্ট্রপতির সংলাপের উদ্দেশ্য কী? আর এই সংলাপের মাধ্যমে কি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব? যদি সম্ভব না হয় তাহলে কোন পথে আসবে সেই কমিশন?

রাষ্ট্রপতির সংলাপে বিএনপিকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷ তাদের জন্য সংলাপের নির্ধারিত দিন ১২ জানুয়ারি৷ কিন্তু বিএনপি আগেই সংলাপকে ‘না’ বলে দিয়েছে৷ সুশাসনের জন্য নাগরিকের(সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের কথা, বিএনপির সংলাপে যাওয়া না যাওয়ায় কিছু আসে যায় না৷ কারণ সরকার তার পছন্দ মতই নির্বাচন কমিশন গঠন করবে৷

নির্বাচন কমিশন গঠন রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার৷ সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতিকে এই ক্ষমতা দেয়া আছে৷ কিন্তু ড. বদিউল আলম মজুমদার এর সাথে একমত নন৷ তার কথা, ‘‘সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারবেন না৷ শুধু প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রপতি স্বাধীন৷”

তার মতে, অতীতেও সার্চ কমিটির মাধ্যমে দুইবার নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে তাতে কোনো ফল আসেনি৷

২০ ডিসেম্বর শুরু হওয়া রাষ্ট্রপতির সংলাপে যারা গিয়েছেন তাদের অনেকেই নির্বাচন কমিশন আইনের কথা বলছেন৷ তারা মনে করছেন সেটা হলে নির্বাচন কমিশনে যোগ্য লোক নিয়োগ দেয়া এবং একটি ভালো নির্বাচন কমিশন গঠন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি৷ সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদেই নির্বাচন কমিশন আইনের কথাও বলা হয়েছে৷ সেখানে বলা হয়েছে, ‘‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চার জন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে বাংলাদেশে একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করবেন৷” এখানে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে- প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে৷ কিন্তু সরকার বলছে এখন আইন করার মত সময় হাতে নেই৷

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল(অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন ২০০৭ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন আইনের একটি খসড়া আমরা তখনই আইন মন্ত্রণালয়ে দিয়েছি৷ কিন্তু সেটা কী কারণে কোল্ড স্টোরেজে চলে গেল বুঝতে পারছি না৷”

তার কথা, আইন হলে কমিশন একটি কাঠামোর মধ্যে হবে৷ কারা নির্বাচন কমিশনে যাচ্ছেন তাদের নাম আগেই প্রকাশ হবে৷ জনগণ তাদের কথা জানতে পারবে৷ আর নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার ও ক্ষমতা সুনির্দিষ্ট থাকবে৷

তিনি বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি যে সংলাপ করছেন এটা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা৷ এর সঙ্গে নির্বাচন কমিশন গঠনের কোনো সম্পর্ক আছে বলে আমার মনে হয় না৷ সংবিধানেও এ ব্যাপারে কিছু বলা নাই৷ রাজনৈতিক দলগুলো কী ইস্যুতে কথা বলছে তাও পরিষ্কার না৷ তারা চা পানি খেয়ে চলে আসছেন কী না তাও আমরা জানি না৷ এটা রাজনৈতিক আলাপ৷ কে কোন নাম দিলো তাও তো জানি না৷ আর অতীতে দুই বার তো সংলাপ হয়েছে৷ তার অভিজ্ঞতা তো ভালো নয়৷”

তার কথা, এখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেই কমিশন গঠন হবে৷ এটাই সংবিধানে বলা আছে৷ তবে আইন হলে প্রধানমন্ত্রীর মতামতটা সংসদের মাধ্যমে আসবে৷

তিনি বলেন, ‘‘এখনো আইন করার সময় আছে৷ এটা অধ্যাদেশের মাধ্যমে করা যায়৷ নির্বাচন তো এখনকার সকার কাঠামোর মধ্যেই হবে৷”

ড. বদিউল আলম মজুমদার জানান, তারাও গত নভেম্বরে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে নির্বাচন কমিশন আইনের একটি পূর্নাঙ্গ খসড়া দিয়ে এসেছেন ৷ কিন্তু আইনমন্ত্রী তাদের বলেছেন এখন আইন করার মত সময় নাই৷

তার মতে, ‘‘এখন যে সংলাপ হচ্ছে এটা লোক দেখানো৷ এটা দিয়ে কোনো রাজনৈতিক ঐক্যমত হবে না৷ যারা যাচ্ছেন তারা চা খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন৷ মিডিয়ায় কাভরেজ পাচ্ছেন, এই তো৷”

এখন যা নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা আছে তাও প্রয়োগ করা হয়না৷ তাই এটা ব্যক্তি চরিত্রের দৃঢ়তার ওপরও নির্ভর করে বলে জানান বদিউল আলম মজুমদার৷ তার কথা, ‘‘নির্বাচন কমিশন চাইলে তো কোনো নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলে তা বাতিলও করতে পারে৷ তারা তো সুযোগ সুবিধার আশায় তা করে না৷”

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদও মনে করেন সংলাপের সাথে নির্বাচন কমিশনের কোনো সম্পর্ক নাই৷ এটা রাষ্ট্রপতি করছেন৷ নির্বাচন কমিশন তো সংলাপ করছে না৷ রাষ্ট্রপতি সবার সঙ্গে একটু আলাপ আলোচনা করছেন৷

তিনি বলেন, ‘‘এখন নির্বাচন কমিশন আইনের যে দাবি উঠছে সেটা ভাবা উচিত৷ সদিচ্ছা থাকলে এখন যে সময় আছে তার মধ্যেই আইনটি করা যায়৷”

আইন হলেও সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করেই নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি৷ আর তাতে কোনো সমস্যা নেই বলে মনে করেন তিনি৷ তার কথা, ‘‘প্রধানমন্ত্রী চাইলে ভালো এবং যোগ্য লোক নিয়োগের পরামর্শ দিতে পারেন৷”

প্রসঙ্গত, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে ১৫ ফেব্রুয়ারি৷ এর মধ্যে সংলাাপ শেষ করে রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি করবেন৷ সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর দেয়া নামের তালিকা থেকে ১০ জনের নাম সুপারিশ করবে৷ রাষ্ট্রপতি সেখান থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার কমিশনারকে নিয়োগ দেবেন৷ আর এই কমিশনের অধীনেই আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে৷

এসএইচ-০১/০৮/২২ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)