টিকা নেওয়ার বিষয়ে মানুষের আগ্রহ কম

দেশে চার কোটি টিকা মজুত থাকার পরও টিকা নেওয়ার বিষয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ কম৷ টিকার জন্য নিবন্ধনের সংখ্যাও তেমন বাড়ছে না৷

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যখন নতুন করে করোনার ঢেউ সামলাতে টিকা প্রদানের উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন তখন টিকা নেওয়ার বিষয়ে মানুষের অনাগ্রহে প্রশ্ন উঠে–কেন এই পরিস্থিতি এবং এর সমাধান কী?

স্বাস্থ্য বিশেজ্ঞদের সাথে কথা বলে অন্তত দুটি প্রতিবন্ধকতার কথা জানা গেছে৷ এর একটি হলো সচেতনতার অভাব, আরেকটি হলো নিবন্ধন করার প্রযুক্তিগত জটিলতা৷

গণপরিসরে টিকা প্রদানের জন্য যে হারে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন এবং যেভাবে কমিউনিটি পর্যায়কে যুক্ত করা প্রয়োজন তা ততটা হচ্ছে না বলে মনে করেন অনেকেই৷

তাছাড়া, নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজন স্মার্ট ফোন যা অনেকেরই নেই৷ কিংবা স্মার্টফোন থাকলেও কীভাবে নিবন্ধন করতে হবে সে দক্ষতা নেই অনেকের৷ তাছাড়া স্মার্টফোনে নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন জন্মসনদ কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র অনেকেরই নেই বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের৷

শনিবার দেশে মোট ৯ লাখ ৯১ হাজার ৬০ জনকে প্রথম ডোজ করোনার টিকা দেয়া হয়েছে৷ দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়েছে তিন লাখ ২৩ হাজার ৭৮০ জনকে৷ বুস্টার ডোজ দেয়া হয়েছে ৫৪ হাজার ৯৯৬ জনকে৷

আর এখন পর্যন্ত সাত কোটি ৮০ লাখ ৫১ হাজার ৫৮৩ জনকে প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে৷ দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন পাঁচ কোটি ৪৫ লাখ ৯ হাজার ১৫ জন৷ আর বুস্টার ডোজ দেয়া হয়েছে তিন লাখ ৮১ হাজার ৯৬৭ জনকে৷

১৭ কোটি হিসেবে সরকার মোট জনগোষ্ঠীর ৮০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে চায়, যাদের বয়স ১৮ বছরের বেশি৷ সেই হিসেবে ১২ কোটি ৮০ লাখ মানুষকে আগামী জুনের মধ্যে টিকা দেয়ার কথা৷

৮০ ভাগের হিসাবে এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ পেয়েছেন প্রায় ৬০ ভাগ মানুষ আর দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন প্রায় ৪২ ভাগ৷ তবে এখন স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও টিকার আওতায় আনা হচ্ছে৷ সেই টিকা এবং বুস্টার ডোজ মিলিয়ে বাড়তি আরো টিকা লাগছে৷

সাধারণ হিসেবে দুই ডোজ করে টিকা দিতে মোট টিকা লাগবে ২৫ কোটি ৬০ লাখ ডোজ৷ জুন মাসের মধ্যে এই টিকা দিতে হলে এখন পর্যন্ত যা দেয়া হয়েছে সেই বিবেচনায় আরো ১২ কোটি ডোজ টিকা লাগবে৷ সরকারের হাতে এখন টিকা আছে চার কোটি৷ তবে আগামী মার্চের মধ্যে আরো ৯ কোটি ডোজ টিকা পাওয়া যাবে৷ সব হিসাব মিলিয়ে দেখলে দেশে আসলে করোনার টিকার সংকট নেই৷ সংকট হলো মানুষকে দ্রুত টিকা দেয়ার বিষয়ে৷

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে করোনা সংক্রমণ ১১৫ শতাংশ বেড়েছে৷ গত এক সপ্তাহে করেনায় আক্রান্ত নতুন ছয় হাজার ৩০০ জনকে সনাক্ত করা হয়েছে৷ আগের সপ্তাহে এই সংখ্যা ছিলো তিন হাজার ৩৭৬ জন৷

২৪ ঘন্টায় সনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৪৯১ জন৷ মারা গেছেন তিন জন৷

এদিকে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে করোনার টিকার নিবন্ধন করিয়েছেন প্রায় আট কোটি মানুষ৷ এখনো বড় একটি অংশ টিকার জন্য নিবন্ধনই করেননি৷ জানা গেছে টিকার জন্য নিবন্ধনের সংখ্যাও তেমন বাড়ছ না৷

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. লেনিন চৌধুরী মনে করেন, ‘‘সবাইকে টিকার আওতায় আনার জন্য এটাই বড় চ্যালেঞ্জ৷ কারণ সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করার প্রযুক্তি সবার নেই৷ এটা করতে হলে কমপক্ষে অ্যান্ড্রয়েড ফোন দরকার৷ যাদের আছে তারা সবাই আবার ব্যবহার জানেন না৷ ইউনিয়ন পর্যায়ে তথ্যকেন্দ্রগুলোকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তারাও আসলে কাজ করেছে কি না সন্দেহ আছে৷ আর নিবন্ধন করতে হলে এনআইডি, পাসপোর্ট বা জন্মনিবন্ধন সনদ দরকার৷ এগুলোও সবার নেই৷ তাই বিকল্প ব্যবস্থা থাকা উচিত ছিলো৷’’

তিনি বলেন, ‘‘টিকায় উদ্বুদ্ধ করতে হলে কমিউনিটিকে কাজে লাগাতে হয়৷ তার সুফল আমরা গণটিকায় দেখেছি৷ কিন্তু এর সর্বব্যাপ্ত হয়নি৷ ফলে করোনার টিকায় মানুষকে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করা যাচ্ছেনা৷’’

আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন মনে করেন, ‘‘যখন টিকা পর্যাপ্ত ছিল না তখন প্রচার বেশি ছিলো৷ আর এখন পর্যাপ্ত টিকা থাকার পরও তেমন প্রচার নেই৷ শুরুতে এক পর্যায়ে প্রচার নিরুৎসাহিতও করা হয়েছে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘এখন উপজেলা পর্যায়ে অন-স্পট নিবন্ধনের সুযোগ আছে৷ সেটাও অনেকে জানে না৷ তবে শিগগিরই ব্যাপক প্রচারের একটা পরিকল্পনা হচ্ছে৷ আর এই প্রচারে কমিউনিটির লোকজনকে যুক্ত করা হবে৷’’

তবে এই দুইজনই মনে করেন, টিকার প্রতি অনাগ্রহী একটি গ্রুপ সব সময়ই ছিল৷ এখনো আছে৷ তবে তারা যাতে অপপ্রচার না চালাতে পারে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে৷

ডা. মুশতাকের কথা, ‘‘এখন স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি টিাকায় সর্বোাচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে৷’’

এসএইচ-৩১/০৯/২২ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)