বাংলাদেশকে গিলে খাচ্ছে মাদক চোরাচালানে!

গোলেন্ড ট্রায়াঙ্গল, গোলেন্ড ক্রিসেন্ট ও গোল্ডেন ওয়েজ। মাদক চোরাচালানের এ তিনটি প্রধান অঞ্চল গিলে খাচ্ছে বাংলাদেশকে। ফলে মাদক উৎপাদন না করেও বড় ঝুঁকির মধ্যে বাংলাদেশ।

আন্তর্জাতিক মাদক কারবারিরা ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে দেশকে। আর দেশি মাদক কারবারিরা দেশের আনাচে-কানাচে মাদকের বিস্তারে হচ্ছে কৌশলী। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর বলছে, আগামী দুই তিন বছরের মধ্যে ইয়াবার মতো আইসের বিস্তার ঘটতে পারে।

গাড়ির ফুয়েল ট্যাংক। ফুয়েল নেই এক ফোঁটাও অথচ মাদক দিয়ে ভর্তি। পাশের দেশ ভারত ও মিয়ানমার থেকে দেশে মাদক ঢোকার পর তা সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে কারবারিদের এটি একটি মাত্র কৌশল। এমন অসংখ্য অভিনব কায়দায় একের পর এক মাদক চোরাচালান হচ্ছে দেশে।

একসময় ফেনসিডিলের রমরমা অবস্থা ছিল দেশে। গত কয়েক বছরে ইয়াবা দখল করেছে ফেনসিডিলের বাজার। করোনায় ঘরবন্দি মাদকসেবীদের কাছে পৌঁছে গেছে আইস, এলএসডির মতো নতুন ও আধুনিক মাদক। অথচ এর কোনোটিই দেশে উৎপাদন হয় না।

দেশে মাদকের রুট নিয়ে গবেষণা করেছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। মিয়ানমার, লাওস ও থাইল্যান্ডে নিয়ে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল যা বাংলাদেশের পূর্বে অবস্থিত। পশ্চিমে ইরান, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ে গোল্ডেন ক্রিসেন্ট। আর উত্তরে গোল্ডেন ওয়েজ যা ভারতের কয়েকটি প্রদেশ এবং নেপাল ও ভুটান নিয়ে। ভৌগোলিক কারণেই মাদক কারবারিরা রুট হিসেবে ব্যবহার করছে বাংলাদেশকে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, মিয়ানমার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যে ছয়টি দেশের বাজার সামনে রেখে আইস উৎপাদন করছে, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম।

মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রসায়নিক পরীক্ষক দুলাল কৃষ্ণ রায় বলেন, আইসটা উৎপাদনের লক্ষ্য হচ্ছে আমাদের দেশকে ধরে। কারণ ওখানে ইয়াবা বড়ি বানাদে ১০ থেকে ১২ টাকা লাগে, আর টেকনাফ সীমান্তে আসলে নেটা ৫০ টাকা হয়ে যায়।

টেকনাফ থেকে কক্সবাজার আসলে ১০০টাকা, কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম আসলে ২০০ টাকা আর ঢাকায় আসলে ৩ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়। মিয়ানমার থেকে ঢাকায় আসা ইয়াবা, এটাকে আমরা কোনোভাবেই প্রতিরোধ করতে পারছি না। কারণ হচ্ছে ইয়াবা ব্যবসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘জড়িত’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পুলিশ বলছে, মাদক দেশে ঢোকার পর তাদের হাত থেকে বাঁচতে একের পর এক কৌশল পরিবর্তন করছে ব্যবসায়ীরা।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (গুলশান বিভাগ) মশিউর রহমান বলেন, একটা অন্তঃসত্ত্বা নারী যদি মাদকের টাকার লোভে নিজের পাকস্থলীতে ইয়াবা নামক বিষ ধারণ করতে পারেন, তাহলে তারা সব ধরনের রিস্ক নিতে পারেন। এই প্রক্রিয়াগুলো সাধারণভাবে কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক বা কারও পক্ষে সম্ভব না প্রতিনিয়ত চেক করে ধরে ফেলা। অথবা কোনো একটি বাহনকে ধরে ফেলা যদি এই সংক্রান্ত স্পষ্ট গোয়েন্দা তথ্য না থাকা।

সেই কারণে বলা হচ্ছে এরা অনেক বেশি পন্থা অবলম্বন করে থাকে। কিন্তু কাউন্টারভাবে কোনো না কোনোভাবে আমাদের কাছে তথ্য চলে আসে। সেই তথ্যর জন্য আমরা দিনরাত কাজ করি এবং করেই যাব। যারা সাপ্লাই করে যেমন টাকার জন্য তেমনিভাবে যারা ভোক্তা তারাও অদম্য আগ্রহ থাকে সংগ্রহ করার। এই যে যারা ভোগ করে তারা যদি এটাকে পরিহার করতে না পারেন, আর তাদের আত্মীয়স্বজন তাদের এটা থেকে সরাতে না পারেন তাহলে এই লুকোচুরির খেলা চলতেই থাকবে।

চাহিদা না জোগান কোনটির রাশ টানতে হবে আগে? পুলিশ বলছে, চাহিদা আর কোনো কোনো গবেষকরা বলছেন রাশ টেনে ধরতে হবে জোগানের।

এসএইচ-০২/১৯/২২ (অনলাইন ডেস্ক, সূত্র : সময়)