আ’ লীগের নির্বাচনের কৌশল, বৃহত্তর ঐক্যের চেষ্টা বিএনপির

আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেদের রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে কাজ শুরু করেছে শাসক দল আওয়ামী লীগ৷ আর বিএনপি কাজ করছে বৃহত্তর ঐক্য গঠন নিয়ে৷

এদিকে জাতীয় পার্টিও পিছিয়ে নেই৷ আপাতত কোনো জেটে যেতে চায় না দলটি বরং আগামী নির্বাচনে নিজেদের রাজনৈতিক শক্তি দেখানোর কথাই ভাবছে৷

ঘরে-বাইরে নজর আওয়ামী লীগের

আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে শনিবার বিকেলে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা বসে৷ বৈঠক শুরুর আগে দলটির তিন জন সাংগঠনিক সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলে স্পষ্ট হওয়া গেছে যে, আওয়ামী লীগ আশা করছে তাদের অন্যতম রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে৷

তবে বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে সেক্ষেত্রে কীভাবে নির্বাচন করা হবে তাও তারা এখনই ঠিক করে রাখতে চায়৷ আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা হলো কেউ নির্বাচনে না এলেও যথা সময়ে নির্বাচনের আয়োজন করা এবং কেউ নির্বাচন প্রতিহত করতে চাইলে তা মোকাবিলা করা৷

আর সম্ভাব্য এসকল পরিস্থিতি সামলাতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যে ইস্যুগুলো রয়েছে তা কীভাবে মোকাবিলা করা হবে সে কৌশলও তারা বিবেচনা করছে৷

দুই বছরেরও বেশি সময় পর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সকল সদস্যদের উপস্থিতিতে শনিবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ আর এই বৈঠকে সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছেন সাংগঠনিক সম্পাদকরা৷ তারা বৈঠক শুরুর আগে শনিবার নিজেদের মধ্যে প্রস্তুতি বৈঠকও করেছেন৷

দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর) সাখাওয়াত হোসেন শফিক জানান, ‘‘আওয়ামী লীগের আগামী জাতীয় কাউন্সিলের আগে আমরা তৃণমূল পর্যায়ে যে কমিটিগুলো এখনো মেয়াদোত্তীর্ণ সেগুলো নতুন করে গঠন করব৷ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে দলের প্রধান শেখ হাসিনা আমাদের নির্দেশনা দেবেন৷ তার নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সারাদেশে কাজ করব৷ নির্বাচনে আমাদের কৌশল কী হবে তাও তিনি আমাদের বলে দেবেন৷’’

আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম) আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের মূল শক্তিই হলো তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা৷ তারাই নির্বাচনে, প্রচারে, আন্দোলনে প্রধান ভূমিকা পালন করে৷ এবারও তাই হবে৷ আমরা বা তারা বলে কিছু নেই৷ সবাই মিলেই আওয়ামী লীগ৷’’

নিজেদের দলীয় অবস্থান শক্তিশালী করার পাশfপাশি বিএনপি এবং জামায়াতকে নিয়ে আওয়ামী লীগের বৈঠকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘জামায়াতের নিবন্ধন না থাকলেও তারা তো বিএনপির সাথে আছে৷ আশা করি সবাই নির্বাচনে আসবে৷ কিন্তু কেউ যদি নির্বাচনকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে তাহলে রাজনৈতকিভাবে প্রতিহত করা হবে৷’’

সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল) আফজাল হোসেন জানান, ‘‘জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সব ইস্যুই আওয়ামী লীগ নজরে রাখছে৷ এগুলো নিয়ে কৌশল নির্ধারণও করা হচ্ছে৷ আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য যা করা দরকার তার সব প্রস্তুতিই আমরা নিচ্ছি৷’’

র‌্যাব ও পুলিশের ছয় কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর আর যাতে নতুন করে কেউ কোনো নিষেধাজ্ঞার মুখে না পড়ে সেদিকেও সতর্ক হচ্ছে আওয়ামী লীগ৷ আর এর জন্য তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত প্রচার জোরদার করছে তারা৷ একই সঙ্গে দ্রব্যমূল্য নিয়েও তারা বিভিন্ন মাধ্যমে কথা বলবে বলে জানা গেছে৷

জাতীয় পার্টির সাথে মহাজোট নিয়ে এখনো ভাবছে না আওয়ামী লীগ৷ তবে নির্বাচন এগিয়ে এলে পরিস্থিতির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে বলে জানান এই নেতারা৷ তবে ১৪ দলীয় জোটকে আরো সক্রিয় করা হচ্ছে৷

বৃহত্তর জোট নয়, ঐক্যের চেষ্টা বিএনপির

এদিকে বৃহত্তর জোট গঠনের ঘোষণা দিলেও এখন জোট নয় বরং বৃহত্তর ঐক্য করতে চায় বিএনপি৷ জাতীয় সরকার নির্বাচনের আগে না পরে এই ইস্যুতে ঐকমত্য না হওয়ায় বিএনপি বৃহত্তর জোটের চিন্তা থেকে সরে এসেছে৷

দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘‘এই সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন- এই মিনিমাম ইস্যুতে আমরা একমত হয়ে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে ঐক্য করার কাজ করছি৷ জোট হবে কী হবে না তা নির্ভর করবে ঐক্য হওয়ার পর৷ আর নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হয়ে আন্দোলনে থাকা সব দলকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে৷’’

জানা গেছে, এই বৃহত্তর ঐক্যে কোনো দল আলাদাভাবে বা ছোট ছোট দল জোট করেও থাকতে পারবে৷ সমন্বয়ের মাধ্যমে কর্মসূচি দিয়ে আলাদা আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করবে তারা৷ ঐক্যের গঠনের প্রক্রিয়া শেষ হলে বিএনপি বড় কোনো কর্মসূচি দেয়ার কথা ভাবছে৷

এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘‘আমরা তো এমনিতেই চাপের মুখে আছি৷ আন্দোলন-সংগ্রাম করলে চাপ আসবেই৷ নির্বাচনের আগে যদি চাপ আরো বাড়ে তাহলে আমরা জনগণকে সাথে নিয়ে তা মোকাবিলা করব৷ আমরা কোনোভাবেই এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না৷ নির্বাচন হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে৷’’

জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে চায়

জাতীয় পার্টি এখনই প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছে৷ কোনো জোট থেকে নয় বরং এককভাবে নির্বাচন করতে চায় দলটি৷

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু জানান, ‘‘নির্বাচনের পর মহাজোটের আর কোনো অস্তিত্ব নাই৷ ওটা ছিলো একটি নির্বাচনী জোট৷ আবার এই জোট হবে কি না বা তারা কোন দিকে যাবে–আওয়ামী লীগ না বিএনপি– তা সময়ই বলে দেবে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আমরা ৩০০ আসনেই নির্বাচনে প্রার্থী দেয়ার কাজ শুরু করেছি৷ যেখানে আমাদের ভালো প্রার্থী নাই সেখানে আমরা যোগ্য লোকজন যারা আসতে চান তাদের নিচ্ছি৷’’

সাংগঠনিক কার্যক্রমও জোরদার করেছে দলটি৷ বর্ধিত সভা করে দলটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, আগামী জুন মাসের মধ্যে বিভাগীয় পর্যায়ে, এরপর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সভা করা হবে সেপ্টেম্বরের মধ্যে৷ তারপর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে তারা৷

এসএইচ-০৫/০৮/২২ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)