হাজি সেলিমের কারাবাস এড়ানোর সর্বাত্মক চেষ্টা

আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজি সেলিম আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে কারাবাস এড়াতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

এই কারণে আইনি প্রস্তুতির পাশাপশি রাজনৈতিক খুঁটিগুলোও ব্যবহারের চেষ্টা করছেন। তবে তার প্রধান অস্ত্র হবে শারীরিক অসুস্থতা। তিনি থাইল্যান্ড থেকে চিকিৎসার “শক্তিশালী কাগজপত্র” নিয়ে এসেছেন বলে জানা গেছে।

আর দুদক তার শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ডের সাথে আরো তিন বছর বাড়াতে হাইকোর্টে নতুন একটি আপিল করেছে ৯ মে।

অবৈধ সম্পদের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েও বিদেশ সফরের পর দেশে ফিরে পুরনো ঢাকার বাড়িতেই অবস্থান করছেন হাজি সেলিম। ফের তিনি বিদেশ গেলে তা ঠেকাতে আইনগত কোনো ব্যবস্থা এখনো নেয়া হয়নি। তবে দুদকের আইনজীবী বলেছেন তার “অবৈধভাবে” বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি আদালতকে জানানো হবে।

দুদক ওই একই মামলার আরেকটি ধরায় তথ্য গোপনের অভিযোগে তিন বছরের কারাদণ্ড থেকে খালাসের বিরুদ্ধে আপিল করেছে।

হাজি সেলিমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মহিউদ্দিন মাহমুদ বেলাল জানান, “হাজি সেলিম এখন তার বাসাতেই অবস্থান করছেন। তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশ গিয়েছিলেন। তিনি তার নির্বাচনি এলাকায়ও নিয়মিত বের হচ্ছেন। তার আইনজীবী তাকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদালতে আত্মসমর্পণ করানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আত্মসমর্পণের পর তিনি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করবেন।”

হাজি সেলিমকে আগামী ২৪ মের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে হবে। সে হিসেবে তার হাতে সময় আছে দুই সপ্তাহের মত। এরমধ্যে তিনি আবার বিদেশ যাবেন কী না জানতে চাইলে বেলাল বলেন,” প্রশ্নই ওঠে না। তিনি এখন ভালো আছেন এবং নিয়মিত চেকআপের মধ্যে আছেন।”

হাজি সেলিম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের মামলাটি দায়ের করে দুদক ২০০৭ সালে লালবাগ থানায়। এরপর বিচারিক আদালত ওই মামলায় হাজি সেলিম ও তার স্ত্রী গুলশান আরাকে মামলার দুইটি ধরায় মোট ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ১০ বছর এবং তথ্য গোপনের অভিযোগে তিন বছর। তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে হাইকোর্ট ২০১৩ সালে তাদের দুইজনেরই ১৩ বছরে সাজা বাতিল করে দেয়। দুদক এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করলে ২০১৫ সালে হাইকোর্টের আদেশ বাতিল করে হাইকোর্টকে ফের শুনানি করতে বলেন। হাইকোর্ট শুনানি শেষ করে গত বছরের ৯ মার্চ হাজি সেলিমকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অপরাধে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে। আর এরইমধ্যে তার স্ত্রী মারা যাওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়।

হাজি সেলিমকে একই সঙ্গে রায়ের নথি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়, অন্যথায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরওয়ানা জারি করতে বলা হয়।

হাজি সেলিমের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন,” আদালত আদেশে বলেছেন তাদের রায়ের কপি গ্রহণের ৩০ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে হবে। আমরা ২৫ এপ্রিল কপি পেয়েছি। সেই হিসেবে ২৪-২৫ মে এর মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে হবে। আগামী ১৬ মে হাইকোর্ট খুলবে। এরপর যেকোনো দিন তিনি আত্মসমর্পণ করবেন।”

তার দাবি,” হাজী সেলিম চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে গিয়েছিলেন এবং এতে আইনের কোনো লঙ্ঘন হয়নি।”

তবে তার ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, তিনি দেশের বাইরে যাওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনা হওয়ায় রাজনৈতিক নির্দেশেই তিনি ফিরে আসেন। ফিরে আসার আগে তিনি আইনজীবীর পরামর্শে জামিন আবেদনের সাথে দেয়ার জন্য “শক্ত মেডিকেল প্রতিবেদন” নিয়ে এসেছেন ব্যাংকক থেকে। করোনার কারণে গত দুই বছরে তার কাছে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনো হালনাগাদ বিদেশি কাগজপত্র ছিল না। তিনি সেই কাগজপত্রের সাথে ছয় মাসের ওষুধও নিয়ে এসেছেন। সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন,” হাজি সেলিম আত্মসর্পণের আগে আর দেশের বাইরে যাবেন না। আমরা তার জামিন আবেদনে হেলথ গ্রাউন্ডকে প্রাধান্য দেব।”

১০ বছরের কারাদণ্ড মাথায় নিয়ে হাজি সেলিম গত ৩০ এপ্রিল বিনা বাধায় ব্যাংকক যান। ৫ মে দুপুরে তিনি দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে এসে তিনি পুরোমাত্রায় রাজনৈতিক এবং সামাজিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। তবে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম বলেন,”তিনি বেআইনিভাবে দেশের বাইরে গেছেন। কারণ তিনি দণ্ডপ্রাপ্ত ও তাকে আদালত আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে। এই অবস্থায় আদালতের অনুমতি ছাড়া তিনি দেশের বাইরে যেতে পারেন না। আমরা বিষয়টি আদালতকে জানাব।”

অন্যদিকে হাজী সেলিমের আরো তিন বছরের দণ্ড বহাল করার জন্য আপিলের পর দুদক মনে করছে এটা বহাল করানো সম্ভব হবে। কারণ যে অবৈধ সম্পদের দায়ে হাজী সেলিমের দণ্ড হয়েছে সেই সম্পদের তথ্যই তিনি গোপন করেছেন। এটা আলাদা একটি অপরাধ। খুরশিদ আলম বলেন,” তার দণ্ড বাড়ানো এবং বহাল রাখার জন্য আমরা সর্বোচ্চ আইনি লড়াই চালিয়ে যাবো।”

এসএইচ-১৭/১২/২২ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)