যুগপৎ আন্দোলনের পরিকল্পনা সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর

ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকার পতনের এক দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের দিকে ঝুঁকছে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বিএনপি নেতারা জানান, তাদের দলের সিদ্ধান্ত বর্তমান সরকারের অধীনে যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে যাবে না এবং ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যারা কেয়ারটেকার সরকারের দাবির পক্ষে থাকবেন, সেই রাজনৈতিক দল বা জোটের সঙ্গে বন্ধন সংহত করা হবে। ইতোমধ্যে ভেতরে ভেতরে প্রাথমিকভাবে ২০ দলীয় জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং বাম রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোভাব জেনে নিয়েছেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বিএনপি নেতারা বলেন, আগামী সপ্তাহে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দৃশ্যমান আলোচনা শুরু করা হবে। সেখানে বিএনপির নেতৃত্বে যেসব রাজনৈতিক দল মঞ্চ করতে আগ্রহী হবে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে মঞ্চের নামকরণ করা হবে। ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চ’ নামকরণের পক্ষে রয়েছেন কোনো কোনো নেতা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিএনপি এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগ ও পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করতে হবে। এই দাবি আদায়ে আন্দোলন করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন সরকারের নাম ঠিক করা হবে। তিনি আরও বলেন, কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে ডান-বামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে; আরও আলোচনা করা হবে।

এদিকে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ সৃষ্টি করতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ সাতটি রাজনৈতিক দল ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এই প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে জড়িত নেতারা জানান, তাদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক বেশ কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। সেখানে সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে তারা অংশ নেবেন না। দেশের চলমান সংকট থেকে উত্তরণে ১০ দফা দাবিসহ আগামী ২৩ মে উত্তরায় জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বাসায় বৈঠক শেষে নতুন মঞ্চের আত্মপ্রকাশ করবেন তারা।

এই জোটে থাকছে জেএসডি, গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। এর মধ্য কেউ কেউ গণতান্ত্রিক বাম জোটেরও সদস্য। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টেরও শরিক আছে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে থাকা নেতারা জানান, এই জোটে সাত দলের বাইরে জাসদসহ (আম্বিয়া) আরও বেশকিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

গণঅধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক নুর বলেন, আমাদের জোটের সম্ভাব্য নাম হতে পারে ‘গণতান্ত্রিক মঞ্চ’। তবে এখনো নাম চূড়ান্ত করা হয়নি। আট থেকে ১০টি দাবি নির্ধারণ করেই আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামব। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাজধানীর হাতিরপুলে গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাত দলের শীর্ষ নেতারা বৈঠক করেন।

বৈঠক বিষয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা কতগুলো বিষয় চিহ্নিত করে একমত হয়েছি। এ সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়, তাদের পদত্যাগ করতে হবে। তারপর একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করবে। এখন কীভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হবে, কত দিন মেয়াদ হবে; এসব বিষয়ে আমরা সাংবিধানিক দিকগুলোও খতিয়ে দেখছি। পরের বৈঠকগুলোতে এ নিয়ে আরও আলোচনা হবে।

গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, আমরা শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাব না। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই সরকারকে সরাতে হবে। এটা খুব জরুরি। সম্মিলিতভাবে এই সরকারের পদত্যাগ ও পতন ঘটাতে চাই। এটাই এখন মূল লক্ষ্য; নির্বাচন পরে। নতুন জোট গঠন নিয়ে সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, সরকারবিরোধী আন্দোলনে এ জোট বিএনপির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ না হলেও যুগপৎভাবে দাবি আদায়ে রাজপথে কর্মসূচি দেবে।

জানতে চাইলে নুরুল হক নুর বলেন, বিএনপি নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। আমাদের সিদ্ধান্ত, জামায়াত বা ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে এই জোটে যুক্ত করা হচ্ছে না। তবে, তারা যদি পৃথকভাবে কর্মসূচি করে সে ক্ষেত্রে বাধাও দেওয়া হবে না। নব্বইয়ে পৃথক পৃথক জোট অভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করে সফল হয়েছে। সে ক্ষেত্রে অভিন্ন দাবিতে আন্দোলন হতে পারে।

বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক বলেন, সাত দল পৃথক জোট গঠনের যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এটাকে আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছি। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবির পক্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এখন বিএনপির স্লোগান হচ্ছে ‘শেখ হাসিনার বদলে কেয়ারটেকার, ইভিএমের বদলে ব্যালট পেপার’। আগে এই সরকারকে যেতে হবে। তার পরে ইভিএমও বাদ দিতে হবে। এটা যদি এমনিতে না হয় তাহলে আন্দোলনের মাধ্যমে আদায় করতে হবে। এই বিষয়ে আপস করার কোনো সুযোগ নেই।

এসএইচ-০১/১৩/২২ (অনলাইন ডেস্ক)