বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভর্তুকির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে!

বিদ্যুৎ বিক্রিতে গত পাঁচ মাসের ঘাটতি বা ভর্তুকি বাবদ সরকারের কাছে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা চেয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, প্রতিমাসেই সরকারের কাছ থেকে বিশাল অঙ্কের ভর্তুকি নিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে তারা। তবে ক্রমান্বয়ে সেই ভর্তুকির পরিমাণ আরও বাড়ছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে পিডিবির প্রত্যাশিত অর্থ চেয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পিডিবির বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ফলে সরকারি-বেসরকারি খাতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর পাওনার পরিমাণও বাড়ছে। তার পরও সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে পিডিবি উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করছে গ্রাহক পর্যায়ে। ফলে চলতি অর্থবছরের ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাসে ভর্তুকি বাবদ ট্যারিফ ঘাটতি হয়েছে পাঁচ হাজার ২৬২.২০ কোটি টাকা। এ ছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ঘাটতি বাবদ দুই হাজার ২০৫.১১ কোটি টাকাসহ সব মিলে সাত হাজার ৪৬৭.৩১ কোটি টাকা ভর্তুকি চেয়েছে পিডিবি।

সরকার বিদ্যুৎ খাতে যে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে, তার অধিকাংশ ব্যয় হয় বেসরকারি খাতের ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিল পরিশোধে। এ ছাড়া ভারত থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কেনা বাবদ প্রতি মাসে বিশাল পরিমাণ টাকা পরিশোধ করতে হয়।

বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকার গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সুবিধা দিতে বিভিন্ন শ্রেণির জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনে থাকে। যার মধ্যে রয়েছে বেসরকারি খাতের তেলভিত্তিক ও সরকারি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ভারত থেকে আমদানির বিদ্যুৎ। তবে এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ তেলভিত্তিককেন্দ্রগুলোর। বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে কম দামে গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ সরবরাহের কারণে প্রতিমাসে পিডিবির আর্থিক ক্ষতি হয় শত শত কোটি টাকা।

তবে জনগণকে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ দিতে সরকার পিডিবির ভর্তুকি সরকারের রাজস্ব বাজেট থেকে আর্থিক সহায়তা করে আসছে। অর্থবিভাগ থেকে অর্থপ্রাপ্তির পর সেই টাকা পিডিবি বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের বিল পরিশোধ করে। এ ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে জ্বালানি তেল সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকার বিপিসিকে অগ্রিম টাকা পরিশোধ করে আসছে।

পিডিবি বলছে, ২০২০ সালের জুন থেকে বিশ্ববাজারে ফার্নেস অয়েলের দাম অনেক বেড়েছে। একই সঙ্গে ফার্নেস তেলের আমদানি শুল্ক ও কর অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করায় শুল্ক বাবদই প্রায় ৩০ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে তেল আমদানিতে, যা বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচে বিরাট প্রভাব ফেলছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও ফার্নেস তেলের আমদানি শুল্ক ও কর অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করায় ২০২১-২২ অর্থবছরে পিডিবির মোট ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে ২৮ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত মোট চার মাসেই ভর্তুকির বকেয়া পড়েছে ১৭ হাজার একশ কোটি টাকা।

এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলমান গ্রীষ্ম মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে হলে প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ জ¦ালানি তেল মজুদ রাখা দরকার। কিন্তু পিডিবি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে মাসিক বিল পরিশোধ করতে না পারায় তাদের পক্ষে তেল কিনে সেটি মজুদ রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কেউ কেউ বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে পিডিবির মনোনীত ব্যাংকগুলোতে সরকারি তেল কোম্পানিগুলোর অনুকূলে পে-অর্ডার জারির চিঠি প্রেরণ এবং অগ্রিম আয়কর বাবদ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করে আসছে।

এ ছাড়া বিদ্যুতের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র ৮০ শতাংশ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরে চালানো হচ্ছে। ফলে বেশি বেশি জ্বালানি তেল প্রয়োজন। ফলে পিডিবির নিয়মিতভাবে জ্বালানি তেল সংগ্রহে পে-অর্ডারের চিঠি প্রেরণ করা প্রয়োজন। কিন্তু গত দুই মাস ধরে পিডিবি অর্থ বিভাগ হতে চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি তেল ক্রয় বাবদ পর্যাপ্ত তহবিল পাচ্ছে না।

ফলে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সরকারি তেল কোম্পানিগুলো থেকে সময়মতো পে-অর্ডার পাচ্ছে না। বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকরা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি দিয়ে বলেছে- সময়মতো পে-অর্ডার জারির চিঠি না পেলে জ্বালানি তেলের মজুদ ঠিক রাখার সংকট হবে। সে ক্ষেত্রে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এসএইচ-০২/১৪/২২ (অনলাইন ডেস্ক)