করোনার ঊর্ধ্বগতির মধ্যে ডেঙ্গুর প্রভাবে বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি

হঠাৎ করেই করোনার উর্ধ্বগতির মধ্যে ডেঙ্গুর প্রভাব বেড়েছে৷ বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসকরা বলছেন, কেউ করোনার পর ডেঙ্গু বা ডেঙ্গুর পর করোনার আক্রান্ত হলে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে৷ সামনে ঈদ, ফলে এখনই সতর্ক না হলে বড় ধরনের বিপর্যয় হতে পারে৷

কেউ কেউ বলছেন, এটা করোনার চতুর্থ ঢেউ, আবার কেউ বলছে এটা পঞ্চম ঢেউ৷ এটা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে৷ গত রোববার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৬৮০ জন, মৃত্যু দুই জনের৷ আগের দিনও একজনের মৃত্যু হয়েছে৷ একই দিন দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩২ জন৷ এর মধ্যে ২৯ জনই ঢাকার৷ চলতি বছরের এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রন্ত হয়েছেন ৯৫২ জন৷ এর মধ্যে একজন মারা গেছেন৷ ডেঙ্গুর মৌসুম সবে শুরু হয়েছে৷

জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, “এক সপ্তাহ আগেও কোন রোগী ছিল না৷ অনেকদিন পরপর দু’একজন আসত৷ আর এখন ১০-১২ জন আছে৷ যারা আছে তারা টিকা নেওয়ায় তাদের স্বাস্থ্যের অবস্থা বেশ ভালো৷ তবে করোনার পর যদি কারো ডেঙ্গু হয় সেটা ভয়ঙ্করভাবে মৃত্যুঝুঁকি তৈরি করে৷ গত বছর এমন বেশ কয়েকজন রোগী পাওয়া গেলেও এখনও এই হাসপাতালে এমন কোন রোগী আসেনি৷”

ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য সরকার রাজধানীর পুরাতন পাঁচটি সরকারি হাসপাতাল প্রস্তুত করেছে৷ আর করোনা রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, “শনাক্তের হার ৫ শতাংশের ওপরে গেলেই বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে যায়৷ আর এখন নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ৷ ফলে অবশ্যই এটা পঞ্চম ঢেউ৷ যদি কেউ কেউ এটাকে চতুর্থ ঢেউ বলছেন৷ সেটা যাই হোক, সামনে ঈদ এখনই সতর্ক না হলে বড় ধরনের বিপর্যয় হতে পারে৷ টিকার প্রভাব মূলত তিন মাস থাকে৷ ফলে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন৷”

সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের ১২ জন বিচারক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ সোমবার আপিল বিভাগে বিচারকাজ পরিচালনার সময় প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এ তথ্য জানিয়েছেন৷ প্রধান বিচারপতি বলেন, ১২ জন বিচারক করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় কোর্ট পরিচালনা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে৷ দ্বৈত বেঞ্চের একজন করোনায় আক্রান্ত হলে ওই বেঞ্চের বিচার কাজ বন্ধ থাকে৷ এক্ষেতে তিনি আইনজীবীদের সহযোগিতার আহ্বান জানান৷

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, “করোনা, ডেঙ্গু ও মৌসুমি সর্দি-জ্বর এই তিনের সংমিশ্রণে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে৷ কেউ যদি কোন একটা রোগে আক্রান্ত হন তাহলে অন্যগুলোর পরীক্ষা করাও জরুরি৷ যদি একেকটা রোগের ধরণ আরেকরকম৷ করোনার কারণে আক্রান্ত হয় ফুসফুস৷ আর ডেঙ্গু আক্রান্ত করে রক্ত৷ ফলে আমাদের স্বাস্থ্য বিধি মানতে হবে৷ আর ডেঙ্গু মোকাবিলার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযান চালাতে হবে৷ এডিস মশার উৎসস্থল ধ্বংস করতে হবে৷

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, “করোনার উর্ধ্বগতির মধ্যেই আমরা পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করলাম৷ সেখানে কতজন মাস্ক পরে গিয়েছিল সেটা আমরা টিভিতে দেখেছি৷ সিলেটে ত্রাণের জন্য বহু মানুষ একত্রিত হচ্ছে, সেখানে তো আর স্বাস্থ্যবিধি মানার সুযোগ নেই৷ আবার সামনে ঈদ বহু মানুষ শহর থেকে গ্রামে যাবেন৷ ফলে ঝুঁকি বাড়ছেই৷ এর সঙ্গে ডেঙ্গু যোগ হওয়ায় সামনের সময়ে কঠিন পরিস্থিতি হতে পারে৷ ফলে সরকারকে সচেতন হতে হবে, আমাদেরও সচেতন হবে৷”

করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপট কমলে ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হাজারের নিচে নেমে আসে৷ ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে একপর্যায়ে ২৬ মার্চ তা ১০০ এর নিচে নেমে এসেছিল৷ গত ৫ মে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা নেমেছিল চার জনে৷ শনাক্তের হার ১ শতাংশের নিচে ছিল বেশ কিছু দিন৷ তবে গত ২২ মে’র পর থেকে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আবারও বাড়ছে৷ ১১ সপ্তাহ পর দৈনিক শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা গত ১২ জুন আবার ১০০ ছাড়িয়ে যায়৷ ১৪ দিনের মাথায় রোববার তা দেড় হাজারের ঘরও ছাড়িয়ে গেছে৷

এসএইচ-০৭/২৭/২২ (সমীর কুমার দে, ডয়চে ভেলে)