দেশে এখন চলছে কারোনার চতুর্থ ঢেউ!

দেশে এখন চলছে কারোনার চতুর্থ ঢেউ৷ আর সামনেই মুসলামনদের বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-আজহা৷ স্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আসছে উৎসবে করোনা আরো বিস্তৃত হবে৷

তাদের মতে, সবচেয়ে সংকট তৈরি করছে বুস্টার ডোজ নেয়ায় মানুষের অনাগ্রহের বিষয়টি৷ আর করোনার নতুন উপধরন উদ্বেগ ছড়াচ্ছে৷ কারণ এখন এই উপধরনের দাপট চলছে বলে জানান তারা৷

সরকারের হিসেব অনুযায়ী, গত ২০ জুন শনাক্তের হার শতকরা ১০ ভাগ ছাড়িয়ে গেছে৷ ওই দিন সারাদেশে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিলো ৮৭৩ জন৷ মারা গেছেন একজন৷ আক্রান্তের হার ছিল শতকরা ১০ দশমিক ৮৭ ভাগ৷ আক্রান্তের এই হারকে করোনার উচ্চমাত্রা বলা হয়৷ এরপর ১২ দিনের মাথায় গত ২ জুলাই মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১০৫ জন৷ মারা গেছেন ছয় জন৷ আক্রান্তের হার ১৩ দশমিক ২২ ভাগ৷ তার একদিন আগে ১ জুলাই আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৮৯৭ জন৷ মারা গেছেন পাঁচ জন৷ আক্রান্তের হার ১৫ দমমিক ৩১ ভাগ৷

গত ১২ দিনে দেশে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১৯ হাজার ৫৮৭ জন৷ আর মারা গেছেন ২৮ জন৷

এ পর্যন্ত সারাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ লাখ ৭৬ হাজার ৭৮৭ জন৷ মারা গেছেন ১৯ হাজার ১৬০ জন৷

আক্রান্ত ও মারা যাওয়ার এই হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টেস্টের ভিত্তিতে করা হয়৷

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘‘করোনা আবার বিশ্বের ১১০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে৷ বাংলাদেশে প্রথমে ঢাকা শহরে চতুর্থ ঢেউ শুরু হলেও এখন দেশের সব বিভাগ ও জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে৷ এখন আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে৷ তা না হলে সামনে কোরবানির সময়ে এটা আরো বেশি আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ সরকার মাস্ক আবার বাধ্যতামূলক করার কথা বলেছে৷ কিন্তু এটা মনিটরিং করা হচ্ছে না৷ গরুর হাট বসে গেছে কিন্তু সেখানে কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না৷ আর ঈদযাত্রায় যদি স্বাস্থ্যবিধির প্রতি এই উদাসীনতা থাকে তাহলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে বাধ্য৷’’

তিনি বলেন, ‘‘উদ্বেগের বিষয় হলো মৃত্যুহার বাড়ছে৷ যারা বয়স্ক, যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের জন্য বিপদ বেশি৷ এবার দেখছি কেউ টেস্ট করাতে চাচ্ছেন না৷ করোনার সব উপসর্গ থাকার পরও টেস্ট করাচ্ছেন না৷ এর ফলে করোনা তাদের মাধ্যমে আরো দ্রুত ছড়াচ্ছে৷’’

সবাইকে টিকা ও বুস্টার ডোজ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘টিকা ও বুস্টার ডোজ যারা নিয়েছেন তারাও আক্রান্ত হচ্ছেন৷ এর কারণ হলো টিকার কার্যকারিতা থাকে ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ চতুর্থ ডোজ শুরু করেছে৷ আরো কিছুটা দেখে আমাদের চতুর্থ ডোজের ব্যাপারে চিন্তা করা উচিত৷’’

বাংলাদেশে গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে করোনার টিকা দেয়া শুরু হয়৷ সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত দেশে ১২ কোটি ৯০ লাখের বেশি মানুষ টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন৷ দুই ডোজ পেয়েছেন ১১ কোটি ৮০ লাখের কিছু বেশি মানুষ৷ আর বুস্টার ডোজ নিয়েছেন দুই কোটি ৯৩ লাখ ১৫ হাজার মানুষ যা মোট জনগোষ্ঠীর ২৪ দশমিক ২৪ শতাংশ৷

১২ থেকে ১৭ বছর বয়সি এক কোটি ৭৩ লাখ শিশু-কিশোর প্রথম ডোজ পেয়েছে৷ দুই ডোজ পেয়েছে এক কোটি ৪১ লাখ৷

সরকার চলতি জুলাই মাস থেকে পাঁচ থেকে ১২ বছর বয়সি শিশুদের টিকা দেয়া শুরু করবে৷

রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মোশতাক হোসেন জানান, ‘‘আমরা আগেই দেখেছি টিকাকে চ্যালেঞ্জ করে করোনা মানুষকে সংক্রমিত করছে৷ এখন যারা আক্রান্ত হচ্ছেন ও মারা যাচ্ছেন তারা বিএ ফাইভ উপধরনে আক্রান্ত হচ্ছেন৷ এর ক্ষতি করার ক্ষমতা বেশি৷ আক্রান্তরা গত তিন সপ্তাহ আগে আক্রান্ত হয়েছেন৷ এখন তা প্রকাশ পাচ্ছে৷ আজ (শনিবার) সংক্রমণ কিছুটা কমলেও আমার ধারণা মৃত্যু হার আরো বেড়ে যাবে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘তিন মাস আগে করোনায় মৃত্যু যখন শূণ্যের কোঠায় নেমে আসে তখন আমরা উদাসীন হয়ে পড়ি৷ টিকার প্রতি আগ্রহ সরকার, সাধারণ মানুষ সবারই কমে যায়৷ এটা ঠিক হয়নি৷ আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরব, তবে সতর্ক থাকব৷ কিন্তু সেটা হয়নি৷ দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও মাস্ক ছাড়া প্রকাশ্যে চলাফেরা শুরু করেন৷ যা এখন নতুন করে বিপদ ডেকে আনছে৷’’

তার কথা, ‘‘সামনে কোরবানি৷ গরুর হাট বসে গেছে৷ এখানে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে৷ পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে ফেরির গাদাগাদি হয়তো কমবে৷ তারপরও ঈদযাত্রায় স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে৷ টিকা কার্যক্রম আবার জোরদার করতে হবে৷ আমাদের পর্যাপ্ত টিকা আছে৷’’

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন টেস্ট অনেক কম হচ্ছে৷ টেস্ট অনেক বাড়িয়ে দেয়া উচিত এবং বিনামূল্যে করা উচিত৷ তাহলে বাস্তব চিত্র যেমন বোঝা যাবে তেমনি পজিটিভ লোককে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে৷ তবে সেজন্য সরকারকে গরিব মানুষের প্রতি আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে৷ তা না হলে তারা টেস্ট করাবেন না৷ তারা দিন আনেন দিন খান৷ তাদের আক্রান্ত হয়ে ঘরে থাকতে হলে আয় বন্ধ হয়ে যাবে৷

এসএইচ-১৪/০২/২২ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)