গ্যাস সংকট : বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র চালিত সার কারখানা বন্ধ

দেশে গ্যাস সংকটের জন্য বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র চালিত সার কারখানা বন্ধ করা হয়েছে।

গ্যাস এবং জ্বালানির সংকটের জন্য সরকার গত সপ্তাহে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় তার ফলেই বন্ধ করতে হয় এসব সার কারখানা।

এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে আসলো যখন রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর সরকার সার আমদানিতে ব্যাপক সমস্যার মুখে পড়ছে।

দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের উলিপুরের একজন কৃষক নাছির উদ্দিন। তার ছয় বিঘা জমিতে এখন আমন ধান চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিন মাস পরেই ইরি ধানের সময়। এরই মধ্যে দেশে কয়েকটি সার কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়াতে বেশি দাম দিয়ে সার কিনতে হবে কিনা সেই নিয়ে তিনি চিন্তিত।

“এখন যদি সার বেশি দামে কিনতে হয় তাহলে অনেক কৃষক কৃষি কাজে আগ্রহ হারাবে। কারণ তার যদি উৎপাদন খরচ বেড়ে যায় তাহলে সে কেন কৃষি কাজ করতে যাবে!”

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হলেও সারের চাহিদার বিরাট অংশ বিদেশ থেকে আমদানি করে মেটানো হয়। তবে যে মূল্যেই আমদানি করা হোক না কেন, সেখানে ভর্তুকি যোগ করে সরকার কৃষকের কাছে নামমাত্র মূল্যে সার বিক্রি করে থাকে।

গত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম প্রায় তিনগুণ বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর সাড়ে ২৬ লক্ষ টন ইউরিয়া সারের প্রয়োজন হয়।

কিন্তু বাংলাদেশে উৎপাদন হয় প্রায় ১০ লক্ষ টন। চাহিদার বাকিটা সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব এবং কাতার থেকে আমদানি করা হয়।

বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান কামরুল আশরাফ খান বলছেন, ইউরিয়ার যে মজুদ আছে সেটা আগামী ইরি মৌসুম পর্যন্ত চলবে। এছাড়া অন্যান্য সারের জন্য টেন্ডার করা হয়েছে।

টিএসপি সার প্রয়োজন হয় সাড়ে সাত লক্ষ মেট্রিক টন। কিন্তু দেশে উৎপাদন হয় এক লক্ষ মেট্রিক টন। বাকিটা মরক্কো, তিউনিশিয়া থেকে আমদানি করা হয়। ডিএপি সারের প্রয়োজন হয় সাড়ে ১৬ লাখ।

তার মধ্যে সাড়ে ১৫ লাখ মেট্রিক টন সার বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। চীন ও জর্ডান থেকেই মূলত এই সার আমদানি করা হয়। এমওপি সারের চাহিদা রয়েছে আট লক্ষ মেট্রিক টন, যার পুরোটাই বেলারুশ, রাশিয়া, কানাডা থেকে আমদানি করা হয়।

দেশে সারের আমদানির বড় একটা অংশ আসে রাশিয়া থেকে। কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া থেকে সার আমদানি নানা সমস্যার মুখে পড়েছে।

জানুয়ারির পর সারের সংকট তৈরি হলে সরকার কি বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে ভাবছে?

বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান কামরুল আশরাফ খান বলেন এখনো এই বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় নি।

“সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় রয়েছে, তাদের সঙ্গে আমরা বৈঠক করবো পরবর্তী কী করা যায়। কিন্তু সেই বৈঠকের তারিখ এখনো ঠিক হয় নি,” বলছিলেন তিনি।

কৃষি প্রধান দেশ হওয়ার কারণে কৃষি সরঞ্জাম ও উপকরণের ওপরে বরাবরই ভর্তুকি দিয়ে আসছে বাংলাদেশ সরকার। গত একযুগে সেই ভর্তুকির পরিমাণ অনেক বেড়েছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ভর্তুকি তুলে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে পরামর্শ দিয়ে আসছে। সার বাবদ সরকারকে ভর্তুকি দিতে হত ৮ হাজার কোটি টাকা। সর্বশেষ শুধু সার বাবদ সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা।

এবারে আরো বেশি ভর্তুকি দিতে হবে বলে ধারণা করছে ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন এর ফলে উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যায় পর্যন্ত সব স্তরে প্রভাব পড়বে।

তিনি বলেন, “মানুষের ব্যয়ের যে একটা বোঝা সেই ব্যয়ের বোঝাটা কিন্তু বাড়বে এবং যেহেতু খাদ্য ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না সেটাকে সরকার অগ্রাধিকার দেবে কিন্তু অন্যান্য খাতে ব্যয় সংকোচন বা সামঞ্জস্য করতে হবে।”

“যেমন অনেক দরিদ্র পরিবার বা নিম্ন আয়ের পরিবারকে শিক্ষা, স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় অনেকখানি কমিয়ে দিতে হতে পারে। এভাবে উৎপাদন পর্যায় থেকে ভোক্তা পর্যায়ে বিভিন্ন ধরণের চাপ পড়বে।”

বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছেন, সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে প্রতি কেজি ইউরিয়াতে ৮২ টাকা, টিএসপিতে ৫০ টাকা, ডিএপিতে ৭৯ টাকা এবং এমওপিতে ৪১ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে বাংলাদেশের সরকার।

এসএইচ-০১/২৫/২২ (অনলাইন ডেস্ক, সূত্র : বিবিসি)