দেশে জন্মহার কমেছে!

দেশে ২০২২ সালের জনশুমারির প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে দেশে জন্মহার কমেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ত্রিশ বছর যাবতই বাংলাদেশে জন্মহার ধারাবাহিকভাবে কমছে।

১৯৯১ সালে বাংলাদেশের জন্মহার ছিল দুই দশমিক ১৭ শতাংশ, যেটি ২০০১ সালে নেমে আসে এক দশমিক ৫৮ শতাংশে।

এরপর ২০১১ সালে আদমশুমারির প্রতিবেদনে দেখা যায় জন্ম হার আরো কমে এক দশমিক ৪৬ শতাংশ হয়েছে। সর্বশেষ ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী এই হার এক দশমিক ২২ শতাংশ।

জন্মহার কমলেও বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির এই হার বাংলাদেশের জন্য ভালো খবর নাকি খারাপ খবর?

এ বিষয়টি নির্ভর করে প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার উপর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মইনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের জন্য এটি এখন ভালো খবর হিসেবেই দেখা যেতে পারে।

“আমরা এখন যে অবস্থায় আছি সেটি আদর্শ অবস্থা। এখানে দেখা যাচ্ছে, জন্মহার এবং মৃত্যুহার দুটোই কমে আসে,” বলেন অধ্যাপক ইসলাম।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটা দেশ যখন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিকে অগ্রসর হয় এবং নারীর শিক্ষা, ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থান বাড়ে তখন এ ধরণের পরিস্থিতির তৈরি হয়। এর সাথে নগরায়নের একটি বড় ভূমিকা আছে।

তবে এর কিছু ভবিষ্যৎ ঝুঁকিও রয়েছে।

দেশে বর্তমানে ১৫ থেকে ৬৪ বছর পর্যন্ত জনগোষ্ঠী ৬৫ দশমিক ৫১ শতাংশ। এই জনগোষ্ঠীকে কর্মক্ষম হিসেবে বর্ণনা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই জনগোষ্ঠী বেশি হবার কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল থাকবে বেশি।

অর্থাৎ তাদের ব্যবহার করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তরান্বিত করা সম্ভব।

বাংলাদেশের জন্য বিষয়টি ইতিবাচক এই অর্থে যে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে পারবে।

যদি জন্ম হার বাড়তেই থাকতো তাহলে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগানো সম্ভব হতো না। ফলে বেকারত্ব ভয়াবহ আকার ধারণ করতো।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে বর্তমানে যে বেকারত্ব রয়েছে সেটি কমে আসবে যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে যাওয়া অব্যাহত থাকে।

কিন্তু আগামী সতের থেকে আঠারো বছরের মধ্যে সে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করবে। কারণ তখন ৬৫ বছরের বেশি জনগোষ্ঠী আরো বেড়ে যাবে।

অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, ২০৩৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য অনুকূল পরিবেশ থাকবে। এরপর প্রবীণ জনগোষ্ঠী বাড়তে থাকবে।

“আগামী সতের থেকে আঠার বছর পর্যন্ত কোন চিন্তা নেই। কিন্তু এর পরে চিন্তার বিষয় হবে। কারণ, তখন প্রবীণ জনগোষ্ঠী অনেক বেড়ে যাবে।”

তিনি বলেন, এই জনশুমারিতে দেখা যাচ্ছে শূন্য থেকে ১৪ বছর বয়সী জনসংখ্যা কমছে এবং ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে জনসংখ্যা বাড়ছে।

দেশে জন্মহার যেমন কমছে তেমনি মৃত্যুহারও কমেছে। জন্ম ও মৃত্যুহার কমে গেলে তখন বয়স কাঠামোতে পরিবর্তন আসতে শুরু করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট-এর অধ্যাপক এএসএম আতিকুর রহমান বলেন, ২০২২ সালের জনশুমারিতে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটো দিকই রয়েছে।

২০২২ সালের জনশুমারিতে দেখা যাচ্ছে, ৬৫ বছর থেকে শুরু করে তার ঊর্ধ্বে জনসংখ্যা ৫.৮৮ শতাংশ।

এটি যদি সাত শতাংশে পৌঁছে যায় তখন সেটিকে ‘ বয়স্কদের সমাজ’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।

অধ্যাপক আতিকুর রহমান বলেন, ২০৬০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রবীণ জনসংখ্যা হবে পাঁচ কোটির মতো।

“প্রবীণদের সংখ্যা শিশুদের চেয়ে বেড়ে যাবে,” বলেন অধ্যাপক রহমান।

এ পরিস্থিতি হলে দেশে কর্মক্ষম লোকের ঘাটতি দেখা দেবে এবং দেশ অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েব বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, প্রবীণদের বোঝা হিসেবে বিবেচনা না করে যদি তাদের দক্ষতাকে কাজে লাগানো যায় এবং তাদের কর্মক্ষম রাখা যায় তাহলে সেটি অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাজে লাগবে।

এজন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

জন্মহার যখন কমতে থাকে তখন এক পর্যায়ে গিয়ে সেটি জিরো গ্রোথ বা শূন্য গ্রোথ এ পৌঁছবে। কিন্তু বাংলাদেশের আপাতত সেটি হচ্ছে না।

জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জন্মহার কমলেও ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের জনসংখ্যা হবে ২০ কোটি ৪০ লাখ।

২০৫৭ সালে জনসংখ্যা হবে ২০ কোটি ৭০ লক্ষ।

অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, ২০৫৭ থেকে ২০৬৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জনসংখ্যা স্থিতিশীল থাকবে। কারণ তখন জন্ম ও মৃত্যুহার সমান হবে। এরপরে মোট জনসংখ্যা আস্তে আস্তে কমতে থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমতে শুরু করলে সেটি বাড়ানো খুব কঠিন কাজ।

“কোন কোন দেশ জনসংখ্যা বাড়াতে চাইলেও বাড়াতে পারে না। আমি চীনের বেইজিং-এ ছিলাম চার বছর। ওখানে দেখা যাচ্ছে ওরা জন্মহার বাড়াতে চাইলেও আর বাড়াতে পারছে না,” বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সের অধ্যাপক মোহাম্মদ মইনুল ইসলাম।

এসএইচ-০৯/২৮/২২ (আকবর হোসেন, বিবিসি)