প্রধানমন্ত্রীর কথায় আস্থা নেই বিরোধীদের

আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার না করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের ওপর আস্থা নেই বিরোধীদের৷ তারা মনে করছেন এটা সাধারণ মানুষ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করার একটি কৌশল৷

বিরোধীরা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রীর কথা আর বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন৷ গ্রেপ্তার নির্যাতন অব্যাহত আছে আর আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতারা হুমকি অব্যাহত রেখেছেন৷

প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা রোববার গণভবনে সংগঠনের আট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে বলেন, ‘‘আমাদের বিরোধীরা একটা সুযোগ পাচ্ছে৷ তারা আন্দোলন করবে, করুক৷ আমি আজকেও নির্দেশ দিয়েছি, খবরদার যারা আন্দোলন করছে তাদের কাউকে যেন গ্রেপ্তার করা না হয়৷”

আর আগেও গত ২৩ জুলাই তিনি বলেছিলেন বিএনপি তার কার্যালয় ঘেরাও করতে গেলে তিনি ডেকে এনে চা খাওয়াবেন৷ কথা বলতে চাইলে কথা বলবেন৷ পুলিশ যাতে বাংলামটরে বাধা না দেয় তাও তিনি বলে দেবেন৷

প্রধানমন্ত্রীর রোববারের বক্তব্যের পর দুই-একটি রাজনৈতিক দল আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানালেও বিএনপি এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি৷ তবে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘‘ওনার কথায় বিশ্বাস রেখে, আস্থা রেখে ২০১৮ সালে ওনার অধীনেই নির্বাচনে গিয়েছিলাম৷ সেই নির্বাচনের ফল তো আপনারা জানেন৷ এরপর আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে , মামলা দেয়া হয়েছে৷ তিনি বলেছিলেন গণভবন ঘেরাও করতে গেলে আমাদের চা খাওয়াবেন, আলোচনা করবেন৷ এর দুই দিন পর ঘেরাও তো দূরের কথা ভোলায় বিক্ষোভে পুলিশ গুলি চালিয়ে আমাদের দুইজনকে হত্যা করল৷ ”

তার কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলছেন আন্দোলনে বাধা দেয়া হবে না৷ গ্রেপ্তার করা হবে না৷ কিন্তু তার দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব প্রতিদিনই হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন৷ বলছেন, খেলা হবে৷ সাবধান করে দিচ্ছি এগোবেন না৷ যুগ্ম সম্পাদক নানক সাহেব বলছেন আগস্ট মাসটা যাক৷ সেপ্টেম্বরে দেখবেন কত ধানে কত চাল৷”

তিনি বলেন, ‘‘ঢাকায় আমাদের প্রতিবাদ সমাবেশে বাধা দেয়া হয়েছে৷ সমাবেশের আগের রাতে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷”

বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা মনে করছেন সরকার এখন নানা দিক থেকে চাপের মুখে আছে৷ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ মানবাধিকার পরিস্থিতি ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ আছে৷ চাপের মুখে তাই শেখ হাসিনা বিদেশিদের দেখানোর জন্য এবং সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করবে এইসব কথা বলছেন৷

সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘‘বিদেশি রাষ্ট্র, জাতিসংঘ, বিদেশি রাষ্ট্রদূতেরা এখন বর্তমান সরকারের ওপর কড়া নজর রাখছে৷ তাই শেখ হাসিনা এসব কথা বলছেন৷ কিন্তু তার কথার সাথে বাস্তবতার মিল নেই৷ তবে আমরা নির্যাতন উপেক্ষা করেই আন্দোলন চালিয়ে যাব৷”

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাও মনে করেন আন্তর্জাতিক চাপের মুখে শেখ হাসিনা এখন এইসব কথা বলছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘তিনি মুখে যা বলেন বাস্তবে তার উল্টো হচ্ছে৷ বিরোধী নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা হচ্ছে৷ কয়েকদিন আগেও তিনি চা খাওয়ানোর কথা বললেন এরপর দুইজনকে গুলি করে হত্যা করা হলো৷ তার কথায় আশ্বস্ত হওয়ার মত কোনো পরিস্থিতি নেই৷”

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন,‘‘বিরোধী দলগুলো এখন সভা সমাবেশ করছে৷ এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার৷ এই সভা সমাবেশ দেখেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমকি ধামকি দিচ্ছেন৷ এথেকেই বোঝা যায় শেখ হাসিনা এসব কথাবার্তা বলছেন বিদেশিদের দেখানোর জন্য যে এখানে গণতন্ত্রের পরিবেশ আছে৷ আর দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করা৷ কিন্তু বাস্তবে বিরোধীদের ওপর দমন পীড়ন অব্যাহত আছে৷”

সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টিরঅতিরিক্ত মহাসাচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সু রাজনীতির সুবাতাস নিয়ে আসছে৷ তবে তার কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতার সাথে তারতম্য আছে৷ মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী লীগ, পুলিশ ও প্রশাসন কী করে তা শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না৷”

তিনি মনে করেন, ‘‘দেশে অর্থনৈতিক সংকটের চাপ আছে৷ সব দলকে নিয়ে নির্বাচনের চাপ আছে৷ উনি বঙ্গবন্ধু কন্যা৷ উনি প্রধানমন্ত্রী থাকবেন আর পুলিশ বিরোধীদের ওপর নির্যাতন করবে এটা মনে হয় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নয়৷ তিনি মনে হয় অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে চাইছেন৷”

বিরোধীদের কথার জবাবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘‘বিরোধী দলের আস্থার সংকটে ভোগা স্বাভাবিক৷ কারণ তারা যখন ক্ষমতায় ছিলো তখন তারা শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড মেরে হত্যার চেষ্টা করেছে৷ জাতীয় নেতাদের পিটিয়ে রাস্তায় ফেলে রেখেছে৷ শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে হত্যা করেছে৷ ওরা যা করেছে তার তুলনায় শেখ হাসিনা অনেক ছাড় দিচ্ছেন৷ চোর ডাকাত সব সময় সন্দেহ করে আরেকজন ডাকাত আছে৷ একজন চোর আরেকজনকে চোর মনে করে৷ একজন ডাকাত আরেকজনকে ডাকাত মনে করে৷”

তার কথা, ‘‘শেখ হাসিনা কথা দিলে কথা রাখেন৷ করোনায় মানুষ দুধে ভাতে ছিল না৷ তারপরও কেউ না খেয়ে মারা যায়নি৷ তিনি সংসদে সবাইকে ভ্যাকসিন দেয়া কথা বলেছেন ভ্যাকসিন দিয়েছে৷ এখন দেশে বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল নিয়ে সমস্যা আছে শেখ হাসিনা সমাধানের চেষ্টা করছেন৷”

এসএইচ-২২/১৫/২২ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)