২৮ হাজার ইভিএম অকেজো?

ঠিকমতো সংরক্ষণ না করায় ২৮ হাজার ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে৷ এর মধ্যে কিছু ইভিএম পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, যদিও নির্বাচন কমিশন বলছে এগুলো সবই মেরামত করা সম্ভব হবে৷

কয়েকটি গণমাধ্যমে এনিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ইভিএম প্রসঙ্গ আবার সামনে চলে এসেছে৷ কেননা, ইভিএম আগামী সংসদ নির্বাচনে বড় একটি নিয়ামক৷ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল না চাইলেওনির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছে যে তারা ১৫০ আসনে এই ভোটিং মেশিন ব্যবহার করবে৷ তাই অকেজো ইভিএমের খবরটি রাজনৈতিক মহলে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি করছে৷

২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার এক প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ৫০ হাজার ইভিএম কেনা হয়৷ এর মধ্যে ৯৩ হাজার বিভিন্ন আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা কার্যালয়ে পাঠানো হয়৷ চলতি মাসে ঢাকার বাইরে থাকা ইভিএমগুলোর অবস্থা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে ইসি৷ এর পরেই বেরিয়ে আসে, ৩০ শতাংশ মেশিন কোনো না কোনোভাবে অকেজো হয়ে গেছে৷

ইসি বলছে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এমনটি হয়েছে৷ তাদের দাবি, প্রকল্পের আওতায় রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোন বরাদ্দ রাখা হয়নি৷ ফলে ইভিএম মেশিনগুলো নির্দিষ্ট কোনো গুদামে রাখা হয় না৷ প্রশ্ন হলো এত ব্যয়বহুল ও নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মেশিনগুলো কেন এভাবে ফেলে রাখা হলো? স্বাভাবিকভাবেই এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল ইসির৷

এছাড়া এসব ইভিএমের পাঁচ বছর টিকে থাকার কথা৷ তাহলে কীভাবে চার বছরের মধ্যে এগুলো নষ্ট হয়ে গেল সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার৷ ইসি দাবি করেছে অকেজো ইভিএমগুলো মেরামত করা যাবে৷ তবে আগে কখনো নষ্ট ইভিএম মেরামত করা হয়নি৷ তাই এগুলো মেরামতযোগ্য কিনা তা নিশ্চিত বলা যায় না৷ আবার মেরামত করা হলেও ঠিকমত চলবে কিনা সেই প্রশ্ন থেকেই যায়!

জানা যায়, ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে আরও ৪৫ হাজার ৫০০টি ইভিএম রাখা হয়েছে কাগজের প্যাকেটে৷ এগুলোর মান নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে৷ ইসি এখনো এগুলোর মান যাচাই করেনি৷ এর বাইরে ৫৪ হাজার ৫০০ ইভিএম রাখা আছে গাজীপুরে মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে (বিএমটিএফ)৷ আর ২ হাজার ৫০০টি ইভিএম আছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে৷ এগুলোরও মানও যাচাই করা প্রয়োজন৷

নির্বাচন কমিশনের উচিত যত দ্রুত সম্ভব সব ইভিএমের মান যাচাই করে সেগুলো ব্যবহার করা যাবে কিনা তা নিশ্চিত করা৷ কেননা, ইতিমধ্যে কেনা ইভিএমগুলোও আগামী নির্বাচনে ব্যবহার করার কথা৷ এগুলো হিসেব করেই ইসি নতুন করে দুই লাখ ইভিএম কেনার জন্য ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার প্রকল্প চূড়ান্ত করেছে৷ তাই কিছু ইভিএম অকেজো থাকলে নির্বাচনের সময় সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে৷ আর এ আশঙ্কা খোদ ইসির কিছু কর্মকর্তার৷

ইসির অভ্যন্তরীণ এক রিপোর্টের বরাত দিয়ে কয়েকজন জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে ১৫০ আসনে সব বুথে ব্যবহারের কথা মাথায় রেখে ইভিএম কেনা হচ্ছে৷ আর তা করা হচ্ছে ইতিমধ্যে কেনা ইভিএমেগুলোকে ধরেই৷ তাই এতগুলো ইভিএম অকেজো থাকলে নির্বাচনের সময় ঘাটতি দেখা দিতে পারে৷ ইসির উচিত ইভিএমের পুরো বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলোকে জানানো৷

বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বেশির ভাগ দল ইভিএমের বিরোধিতা করে আসছে, ইভিএমের উপর তাদের আস্থা নেই৷ অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ চারটি দল নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে৷ এমনকি জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকা জাতীয় পার্টিরও ইভিএমের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে৷ এরপরও ইভিএমের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে ইসি৷

এসএইচ-০১/২৯/২২ (এম আবুল কালাম আজাদ, ডয়চে ভেলে)