ডলার সংকটে বিদেশগামী ছাত্রদের স্টুডেন্ট ফাইল খোলা বন্ধ

দেশে বিদেশে পড়তে যাওয়ার জন্য নতুন স্টুডেন্ট ফাইল খোলা বন্ধ রেখেছে দেশের ব্যাংকগুলো। এতে বিদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডমিশন পাওয়া অনেক শিক্ষার্থী বিপাকে পড়েছেন।

যদিও বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, স্টুডেন্ট ফাইল খোলার ব্যাপারে কোন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি।

ব্যাংকগুলোর তরফ থেকে জানানো হয়েছে ডলার সংকটের কারণে সাময়িকভাবে স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা বন্ধ রাখা হয়েছে।

বিদেশে পড়তে যাওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডমিশন পাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের যেসব প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে স্থানীয় ব্যাংকে ডলারে একটি স্টুডেন্ট ফাইল বা অ্যাকাউন্ট খোলা।

যার মাধ্যমে সে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি, সেখানে নিজের থাকা খাওয়ার খরচের জন্য বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাবে।

তবে সম্প্রতি বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো এই অ্যাকাউন্ট খোলা বন্ধ রেখেছে। অনেকগুলো বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক ব্যাংকে কথা বলে একই চিত্র পাওয়া গেছে।

দেশের ব্যাংকগুলো সমিতি অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স-এর ভাইস চেয়ারম্যান, সিটি ব্যাংকের সিইও মাশরুর আরেফিন বলছেন, ডলার সংকটের কারণে নতুন স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে।

তিনি  বলেন, “ঠিক এখন যেটা হচ্ছে, এখন অগ্রাধিকারের তালিকায় তাদের বিদেশে পড়াশুনো করতে যাওয়ার বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য, বেঁচে থাকতে যেসব গুরুত্বপূর্ণ আমদানি পণ্য সেগুলোকে সাপোর্ট দেয়া।

“আপনারা জানেন ডলারের একটা সংকট চলছে। আমাদের ব্যাংকে রেমিটেন্স এবং এক্সপোর্ট থেকে যে ডলার আসে সেই ইনফ্লোর চেয়ে আউটফ্লো বেশি। এটা সাময়িক একটা সমস্যা আমরা শীঘ্রই এটা কাটিয়ে উঠবো।”

নতুন স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলার পর প্রাথমিকভাবে একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে ১০ থেকে ২০ হাজার ডলারও পাঠিয়ে থাকেন।

কিন্তু ডলার সংকটে ব্যাংকগুলো খাদ্য ও জ্বালানি ছাড়াও, শিল্পের যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল এসব জরুরি পণ্যের আমদানিতে এলসি খোলার ব্যাপারে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

মাশরুর আরেফিন বলছেন, নতুন স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যাপারে কড়াকড়ি থাকলেও পুরনো শিক্ষার্থী যারা ইতিমধ্যেই দেশের বাইরে পড়াশোনা করছেন তাদের অ্যাকাউন্ট সঠিকভাবেই কাজ করছে।

“আমাদের রেমিটেন্স আবার নতুন করে ভালোভাবে আশা শুরু হচ্ছে। আমার নিজের ব্যাংকের নাম্বার তা বলছে। ছাত্রদের বিষয়টা আমার মাথায় আছে। এটা আসলেই নতুন স্টুডেন্টদের অ্যাকাউন্ট সমস্যা তাড়াতাড়ি চলে যাবে।

“আর যেসব শিক্ষার্থী ইতিমধ্যেই বাইরে চলে গেছ, তাদের খোলা স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্টে কিন্তু আমরা পুরো সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছি,” বলছেন আরেফিন।

তবে বিভিন্ন ব্যাংকে খবর নিয়ে জানা গেছে, ডলার সংকটে পুরনো স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্টগুলোও আক্রান্ত হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকটি ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যাংকে যথেষ্ট ডলার না থাকায় তারা পুরনো স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্টগুলোর জন্যেও ঠিক মতো ডলার দিতে পারছেন না।

আবার অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরাও সেখানে অর্থ দিতে পারছেন না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম আজাদ বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তরফ থেকে স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যাপারে কোন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি।

তিনি বলছেন, “দুই তিন দিন হল এই বিষয়টা আমরা শুনতে পাচ্ছি। তবে একটা কথা বলা দরকার যে এই ধরনের স্টুডেন্ট ফাইল বন্ধ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে প্রতিটি ব্যাংকের ডলারের যে সম্পদ, তার ভিত্তিতে তারা এলসি খোলা এরকম জায়গায় ব্যয় করবে। এবিষয়ে ব্যাংক নিজে সিদ্ধান্ত নেবে। এটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এটা আমাদের বিবেচনার জন্য এখনো আসেনি।”

বাংলাদেশে গত কয়েকমাস যাবত ব্যাপক ডলার সংকট চলছে। বাংলাদেশে গত বছরের অগাস্ট মাস নাগাদ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চার হাজার ৮০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি ছিল। বর্তমানে রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬০০ কোটি ডলার।

সংকট কাটিয়ে ডলারের খরচ কমানোর সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছতাসাধন, সাধারণ মানুষের হাতে থাকা অতিরিক্ত বিদেশি মুদ্রা বিক্রির নির্দেশ, গুরুত্বপূর্ণ পণ্য ছাড়া এলসি খোলায় নিরুৎসাহিত করা এরকম নানা পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে সরকার।

এসএইচ-০১/১৭/২২ (অনলাইন ডেস্ক)