আগামী নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাদের তৎপরতায় খুশী বিএনপি, ক্ষুব্ধ আ’ লীগ

দেশে আগামী সাধারণ নির্বাচন কীভাবে হবে তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে থেকে নিজেদের পক্ষে জনমত তৈরির চেষ্টা করছে দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।

আওয়ামী লীগ বলছে, গত দুটি নির্বাচনের মতো সামনের নির্বাচনও হবে শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতায় রেখেই।

আর বিএনপি বলছে, নির্বাচনটি হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এবং আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে কোন নির্বাচন তারা হতে দেবেনা।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিদেশি কয়েকজন কূটনীতিকের বক্তব্যে পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়া এসেছে দল দুটির দিক থেকে।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখ খুলে গেছে।

আলমগীর পরে বলেছেন, গণতন্ত্রের জন্য তাদের চেষ্টা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন পাবে বলেই আশা করছেন তারা।

বিএনপি মহাসচিব নিজেও সম্প্রতি কয়েকজন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাৎ বা বৈঠক করেছেন যেগুলোর বিষয়বস্তু প্রকাশ করা হয়নি।

আবার সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে আসা জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকির একটি বক্তব্য বিএনপির দিক থেকে স্বাগত জানালেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে সরকার।

ওই বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত গত নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তির প্রসঙ্গটি এনেছিলেন।

এরপর তাকে ডেকে যা যা বলার দরকার তাই বলেছেন বলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

এ প্রসঙ্গে ভিয়েনা কনভেনশনের কথাও কূটনীতিকদের মনে করিয়ে দিচ্ছেন সরকারি দলের নেতারা। এছাড়া মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ আরও কয়েকজন রাষ্ট্রদূত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করেছেন।

পশ্চিমা কূটনীতিকদের অনেকে কথা বলছেন নাগরিক সমাজের সাথেও।

আবার উভয় দলের পক্ষ থেকে কূটনীতিকদের সাথে বৈঠক বা কূটনীতিকদের ব্রিফিং করার ঘটনাও নিয়মিতই দেখা যাচ্ছে।

এমনকি সামনের নির্বাচন যেন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয় সেজন্য কুটনীতিকরাও উদ্যোগী হয়ে রাজনৈতিক নেতাদের সাথে কথা বলছেন বলে খবর আসছে গণমাধ্যমে।

যদিও কূটনীতিকদের তরফ থেকে এমন কোন উদ্যোগের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ বলেনি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শাজাহান খান বলছেন, কূটনীতিকদের কোন ভাবেই শিষ্টাচার লঙ্ঘন করা উচিত নয় বলেই মনে করেন তিনি।

এর আগে গত জুলাইতে ঢাকায় বিদেশি মিশনগুলোতে নোট ভারবাল পাঠিয়ে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়েছিলো বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এর কয়েকদিন আগেই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে সাক্ষাত করেছিলেন ইউরোপীয় একদল কূটনীতিক।

মূলত বাংলাদেশে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সংকটের পটভূমিতে কূটনীতিকদের তৎপরতা নতুন কিছু নয়।

উনিশশো ছিয়ানব্বই সালের নির্বাচনের আগে ঢাকায় এসেছিলেন তখনকার কমনওয়েলথ মহাসচিবের বিশেষ দূত স্যার নিনিয়ান স্টেফান।

পরে ২০১৩ সালে জাতিসংঘ মহাসচিবের দূত হয়ে ঢাকায় এসে দু পক্ষকে এক জায়গায় আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিলেন অস্কার ফার্নান্দেজ-তারানকো। পরে ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিলো বিএনপি।

আবার ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও নানা ধরণের তৎপরতায় সম্পৃক্ত হয়েছিলেন বিদেশি কূটনীতিকদের অনেকে।

বিদেশি কূটনীতিকদের সাথে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন সময়ে সংলাপে অংশ নিয়েছেন বদিউল আলম মজুমদার।

মজুমদার বলছেন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলোতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কথা বলার এখতিয়ার আছে এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কারণেই কূটনীতিকরা কথা বলার সুযোগ পান।

তার মতে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে কিংবা নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হলে সেটি প্রভাবশালী দেশগুলোর প্রতিনিধিদের আরও ভূমিকা রাখার সুযোগ তৈরি করে দিবে, সেটি কোন রাজনৈতিক দল প্রত্যাশা করুক আর নাই করুক।

এসএইচ-০৪/১৮/২২ (অনলাই্ন ডেস্ক)