নতুন জঙ্গি সংগঠন রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে চায়!

নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া ২০৩৪ সালে বাংলাদেশে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে চায়। এ জন্য এমএলএম পদ্ধতিতে সদস্য সংগ্রহ, চোরাকারবারিদের কাছ থেকে স্বল্পমূল্যে অস্ত্র কেনার পরিকল্পনা তাদের। সামরিক ট্রেনিংয়ের জন্য সঙ্গীদের পাঠাতে চায় আফগানিস্তান ও সিরিয়ায়। আর সাধারণ সৈনিক নয়, পদস্থ অফিসার এবং প্রশাসনের প্রভাবশালী আমলাদের হত্যা করার মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের জন্য পথের কাঁটা দূর করতে চায় দুর্ধর্ষ এ জঙ্গিরা। এই যাত্রায় পাশে চায় আনসার আল ইসলাম ও আল কায়েদার মতো সন্ত্রাসী সংগঠনকেও।

অক্টোবরে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার কয়েক সদস্য। এ সময় অস্ত্রসহ তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় নেদায়ে তাওহিদ নামে ৫০০ পৃষ্ঠার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।

পরিকল্পনায় জঙ্গিরা দিয়েছে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) পদ্ধতিতে সদস্য বাড়ানোর হিসাব। ২০১৯ সালে একজন কাজ শুরু করে বছর শেষে তিনজন। পরবর্তী বছর তিনজনে নতুন ছয় সদস্য তৈরি করলে বছর শেষে সদস্যসংখ্যা দাঁড়াবে নয়জন। এভাবে ২০২১ সালে ২৭ জন। একই পদ্ধতিতে দেয়া আছে ১৬ বছরে ২৮ কোটি সদস্য তৈরির পাকা হিসাব। নিজেদের এ পরিকল্পনা যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ফাঁস না হয়, সে জন্য মোবাইল ফোনসহ প্রচলিত যোগাযোগমাধ্যম এড়িয়ে টর, ভিপিএন ছাড়াও নিজেদের উদ্ভাবিত নতুন অ্যাপ ব্যবহারে গুরুত্ব দিচ্ছে এ জঙ্গিরা। ছদ্মনাম ও পরিচয় ব্যবহারের পাশাপাশি কাটআউট পদ্ধতিতে দাওয়াতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা তাদের।

আর প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য তৈরি হলে বাছাইকৃত ও মানসম্মত সদস্যদের দেশের নির্জন স্থানের পাশাপাশি আফগানিস্তান ও সিরিয়ায় প্রশিক্ষণে পাঠানোর পরিকল্পনার কথাও নিজেদের লেখায় বর্ণনা করেছে তারা। পরবর্তী ধাপে ক্ষমতা দখলের জন্য স্বল্পমূল্যে চোরাকারবারিদের কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহের কথা জানিয়েছে জঙ্গিরা। আর অর্থ সাশ্রয়ে কর্মীদের উচ্চতর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনাও আছে তাদের।

অস্ত্র মজুত ও প্রশিক্ষণের ধাপ সম্পন্ন হলে শুরু হবে চূড়ান্ত জিহাদ। লক্ষ্য রাষ্ট্রক্ষমতা দখল। একপর্যায়ে চলবে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের কিডন্যাপ ও কিলিং অপারেশন। সামরিক বাহিনীর সাধারণ সৈনিক নয়, অফিসারদের হত্যার মাধ্যমে পুরো বাহিনীকে নিজেদের অধীন নিতে চায় জামাতুল আনসার। পরবর্তী ধাপে ভ্রাতৃপ্রতিম আল কায়েদা ও আনসার আল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্রে শরিয়া আইন জারি ও খিলাফত কায়েম করতে চায় জামাতুল আনসার ফিল হিন্দ আল‌ শারক্বীয়া।

র‌্যাব বলছে, নতুন এ জঙ্গি সংগঠন যাতে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে না পারে, সে জন্য তীক্ষ্ণ নজর রাখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘অত্যন্ত পরিকল্পনামাফিক তারা ধীরে ধীরে শক্ত অবস্থানে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা যাদের আটক বা গ্রেফতার করেছি, প্রাথমিকভাবে তথ্য পেয়েছি যে, এ ধরনের টার্গেট নিয়ে বিভিন্ন হামলা করার পরিকল্পনা করছিল তারা। তাদের শীর্ষ অনেক নেতাকে আমরা এখনও আটক করতে পারিনি।’

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা বিচার বিভাগের যেসব কর্মকর্তা রয়েছে, তাদের ওপরও এদের ক্ষোভ রয়েছে। প্রাথমিকভাবে এদের পরিকল্পনা ছিল বিভিন্নভাবে অনেক বেশি সদস্য সংগ্রহ করা। একটু সম্পদশালী হওয়া। এরপর তাদের যে তথাকথিত জিহাদ বা দেশ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার যে ইচ্ছা, সেটি ২০৩৪ বা ২০৩৮-এর মধ্যে বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা ছিল।

অপরাধবিজ্ঞানী ও বিশ্লেষকরা বলছেন, ডি-রেডিক্যালাইজেশন প্রক্রিয়া জোরদার করতে না পারলে শুধু অভিযানে জঙ্গিবাদ নির্মূলে সফলতা আসবে না।

এ বিষয়ে অপরাধবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, জঙ্গিবাদ নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সিরিয়াস অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

তিনি মনে করেন, মূলত সরকারকে উৎখাতেই তারা এ ধরনের চেষ্টা করছে।

দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে কোনো রাজনৈতিক দল অর্থ দিয়ে জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে কি না, তা খতিয়ে দেখার আহ্বান বিশ্লেষকদের।

এসএইচ-১৪/১৮/২২ (অনলাইন ডেস্ক)