গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নানা নাটকীয়তার পরও ফেল করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ খ্যাত গাজীপুর সিটির ভোটের চিত্রে শঙ্কিত দলটি। তারা আশঙ্কা করছে, সামনের নির্বাচনে দলের মনোনয়নবঞ্চিতরা বিদ্রোহী প্রার্থী হতে উৎসাহিত হতে পারে। ছড়িয়ে পড়তে পারে ‘গাজীপুর মডেল’।
বিশেষ করে বরিশাল, সিলেট, খুলনা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে। এই প্রেক্ষাপটে বরিশালে ইসলামী আন্দোলনের (হাতপাখা) প্রার্থীর পক্ষে এরইমধ্যে একটা গ্রুপ প্রকাশ্যে কাজ করছে। এর বাইরেও দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে নেমে যেতে পারেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
সম্প্রতি, দল ও দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করে জয় পাওয়ার নজির খুব কম। অথচ গাজীপুরে দল থেকে বহিষ্কার, প্রার্থিতা বাতিলসহ নানা চাপের মুখেও নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তাও আবার ডাকসাইটে রাজনীতিক আজমত উল্লা খানের বিপরীতে। তার মা অরাজনৈতিক, বয়োজ্যেষ্ঠ জায়েদা খাতুন ছিলেন প্রার্থী। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হিসেবে নানা সুবিধা পাওয়া সত্ত্বেও বিরোধী প্রার্থীর জয়; বিষয়টি বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে আওয়ামী লীগ।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে যে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে যদি বিরোধ থাকে, কোন্দল থাকে, নেতাকর্মীরা যদি বিরোধে লিপ্ত হন, তাহলে কোনো সময়ই জয় হতে পারে না। এই পরাজয়ের মূল কারণ হলো- আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরোধিতা, গোপনে অন্তর্কলহ। এটি সারাদেশের নেতাকর্মীদের কাছে একটি মেসেজ যে, ইউনাইটেড থাকতে হবে। ইউনাইটেড-ইউনিটির বিকল্প নেই। কোনো রকম বেইমানি, বিভেদ এবং গোপন ষড়যন্ত্রে যেন কেউ মেতে না ওঠে।’
তবে ভিন্ন কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। তিনি বলেন, ‘গাজীপুর গুরুত্বপূর্ণ নগর হলেও নির্বাচনটি ছিল স্থানীয় সরকার পর্যায়ের। এ নির্বাচনের ফলাফলে যে সরকার পতন হবে না, এটি একটি বিষয় ছিল। স্থানীয় নির্বাচনে আঞ্চলিকতাসহ নানাবিধ ইস্যু থাকে। সে ইস্যুগুলো জাহাঙ্গীর সাহেব উসকে দিয়ে কাজে লাগাতে পেরেছেন। ফলে ফলাফল তার পক্ষে গেছে। এই নির্বাচনের ফলাফল সারাদেশে বিদ্রোহী প্রার্থিতা উসকে দেবে না। আওয়ামী লীগ কঠোরভাবে বিদ্রোহিতা দমন করবে।’
দলটির কার্যনির্বাহী সদস্য গোলাম কবির রাব্বানী চিনু বলেন, ‘গাজীপুরে তো ভিন্ন খেলা হয়েছে। আমাদের নৌকা তো ভোট কম পায়নি। গাড়ি ভাঙচুরের নাটক ও কান্নাকাটিতে কিছু সেন্টিমেন্টাল ভোট এবং বিএনপির ভোটগুলো সে পেয়ে এগিয়ে গেছে। না হয় ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিততো নৌকা। সব জায়গায় তো এমন পরিস্থিতি হবে না। তবে এটা ঠিক, আমাদের সাংগঠনিকভাবে আরও সতর্ক হতে হবে। আরও শৃঙ্খলার মধ্যে আসতে হবে। এ পরিস্থিতি আমাদের ক্ষতি করছে।’
উল্লেখ্য, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটে পরাজিত করে গাজীপুরের প্রথম নারী মেয়র নির্বাচিত হন জায়েদা খাতুন। তিনি পেয়েছেন দুই লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। তার নিকটতম প্রার্থী আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান পেয়েছেন দুই লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। গত ২৫ মে দিবাগত রাত দেড়টায় রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম এ ফলাফল ঘোষণা করেন।
এসএইচ-০৭/০৫/২৩ (অনলাইন ডেস্ক, জাগো নিউজ)