ভুটান থেকে ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানিতে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল ভুটান সফর করবে। এ সময় দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জয়েন্ট স্টেয়ারিং কমিটির বৈঠক এবং জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে ভুটানে। ভুটানের পক্ষ থেকে একটি দ্বিপক্ষীয় এমওইউ স্বাক্ষরের আগ্রহ প্রকাশ করা হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে চলতি মাসের ১৩ থেকে ১৬ জুলাই বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের ভুটান সফরের কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নির্ধারিত তারিখের পরে আগামী ১৭ থেকে ২২ জুলাইয়ের মধ্যে ভুটান সফর এবং চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে ভুটানকে জানানো হয়। এ সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের ভুটান সফরের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন চেয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে ফাইল পাঠানো হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকার প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করছে। নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। খুব শিগগিরই চূড়ান্ত চুক্তি হবে। সর্বশেষ ভুটানের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি করতে যাচ্ছে সরকার। ২০৩০ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে এ পরিমাণ বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে। দুই দেশের মধ্যে এ চুক্তি আগামী সপ্তাহের দিকে হতে পারে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সচিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ভুটান যাবে। ওই সময়েই সমঝোতা চুক্তি সই হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি বিদেশ থেকেও বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আঞ্চলিক গ্রিড ব্যবহার করে আন্তঃদেশীয় সংযোগের মাধ্যমে বিদ্যুৎ আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে ভারত থেকে প্রায় ২ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে গত কয়েক বছর ধরে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। জানা গেছে, ভারত-বাংলাদেশ উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার আওতায় ভারত থেকে দুটি আন্তঃদেশীয় গ্রিড সংযোগের মাধ্যমে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। এর মধ্যে ভারতের বহরমপুর থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বর্তমানে এক হাজার মেগাওয়াট এবং ত্রিপুরা থেকে কুমিল্লায় ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। এ ছাড়া বর্তমানে ভারতের আদানি গ্রুপ থেকে প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। প্রয়োজন অনুযায়ী আদানি থেকে ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ আমদানি করতে পারবে সরকার।
এ ছাড়া নেপাল থেকেও বিদ্যুৎ আমদানির প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে ইতোমধ্যে এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। বাংলাদেশ, নেপাল এবং ভারতের মধ্যে ত্রিদেশীয় সমঝোতা চুক্তি হয়েছে। এখন নেপালের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তির প্রক্রিয়া প্রায় শেষে দিকে। সর্বশেষ ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির দিকে যাচ্ছে সরকার।
তবে নেপাল বা ভুটান যে দেশ থেকেই বিদ্যুৎ আমদানি করা হোক না কেন সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তির পাশাপাশি ভারতকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে থাকতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। কারণ ভারতের ওপর দিয়ে আসা গ্রিড লাইন ব্যবহার করেই বিদ্যুৎ আমদানি করতে হবে বাংলাদেশকে। ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তিও হয়েছে ভারতের সঙ্গে।
এসএইচ-০১/১৩/২৩ (অনলাইন ডেস্ক, সূত্র : আমাদের সময়)