নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কৌশলগত অবস্থানে!

সেপ্টেম্বরের আগে বিএনপি কঠিন কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছে না। তারা সমাবেশ আর পদযাত্রাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে। আর শাসক দল আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচির বাইরে উন্নয়ন ও শান্তির প্রচার শুরু করবে।

মার্কিন প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফর। ইউরোপীয় ইউনিয়নের(ইইউ) প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের কাজ । এইসব কিছু দেশের দুই প্রধান দলই আরো ভালোভাবে পর্যক্ষেণ এবং অনুধাবন করতে চায়।

শনিবার ইইউর প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিউভয় দলের সঙ্গেই বৈঠক করেছে। বৈঠকে বিএনপি জানিয়ে দিয়েছে এই সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবেনা। আর আওয়ামী লীগ জানিয়ে দিয়েছে এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে। আর তা নিরপেক্ষ হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধি দল যে সংলাপের প্রত্যাশা করছে তাওে দুই দল বিপরীত মেরুতে আছে। বিএনপি বলছে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে নিলেই কেবল সংলাপ হতে পারে। আওয়ামী লীগ বলছে এই সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে এলেই কেবল সংলাপ হতে পারে। আর সবচেয়ে বড় কথা সংলাপের উদ্যোগটা নেবে কে?

তবে সব মিলিয়ে আর যাই হোক না কেন দুই দল অনেকটাই সহনশীল অবস্থানে চলে যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগস্টে বিএনপির আন্দোলন আরেকটু নরম হবে। কারণ এই সময়ে আওয়ামী লীগের শোকের মাসের কর্মসূচি থকবে। সেপ্টেম্বর থেকে আবার তারা আবার গতি বাড়াবে। তবে তা হরতাল অবরোধের মতো আন্দোলনে যেতে আরো সময় নেবে বিএনপি। তারা এখন পর্যন্ত সমাবেশ পদযাত্রার মতো মানুষকে সম্পৃক্ত করার কর্মসূচি দেবে

তারা মনে করে মানুষ ধীরে ধীরে বিএনপির আন্দোলনে সম্পৃক্ত হচ্ছে। এটা এক সময় যখন ব্যাপক মাত্রায় হবে তখন দুই-এক দিনের কঠোর কর্মসূচি দিয়েই সরকারকে দুর্বল করা যাবে। আর সেই কর্মসূচি তারা আগে থেকেই ঢাকাঢোল পিটিয়ে দেবেনা। কর্মসূচির দুই একদিন আগে সংবামাধ্যমকে জানাবেন।

আগে বিএনপি পদযাত্রা করেছে এলাকাভিত্তিক। নতুন কৌশল হিসেবে এবার তারা পরিসর ও সময় বাড়াচ্ছে। ১৮ এবং ১৯ জুলাই তারা ঢাকায় যে পদযাত্রার কর্মসূচি দিয়েছে তা নতুন আঙ্গিকের। ওই দিনের পদযাত্রা ঢাকার গাবতলী থেকে শুরু হবে। এরপর বিজয় সরণি ও মগবাজার হয়ে যাত্রাবাড়ি যাবে। ১৯ তারিখের পদযাত্রা হবে উত্তরা থেকে যাত্রাবাড়ি। তারা পদযাত্রায় বেশি সময় নিতে চাচ্ছে।

বেশি মানুষকে সম্পৃক্ত করতে চাইছে। সমাবেশের কর্মসূচিতেও তারা আরো বেশি মানুষ আনতে চাইছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে যে কঠিন কোনো কর্মসূচি হরতাল বা অবরোধ দিলে তারা এমনভাবে দেবেন যাতে ফল আসে। দীর্ঘ সময় ধরে এই ধরনের কর্মসূচি দিলে টানা সংঘাত হয় এবং এতে নেতা-কর্মীরা বেশি ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েন। তারা মনে করেন এমনও হতে পারে তারা যখন ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি দেবেন তখন চূড়ান্তভাবেই দেবেন। ঢাকাকে অচল করে দেবেন। আর মাঠ ছাড়বেন না। যা হওয়ার একবারে হবে।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন,” আমরা কোনো সংঘাতে যেতে চাইনা। আমরা আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন আরো জোরদার করতে চাই। আরো মানুষকে সম্পৃক্ত করতে চাই আন্দোলনে। আমাদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে জনসম্পৃক্ততা বাড়ছে এবং সামনের দিনে আরো বাড়বে।”

তার কথায়,” জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলনে বিজয় আসবে। সাফল্য আসবে। তারপর যদি সরকার আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমন করতে চায় তাহলে আমরাও সরকার যাতে পদত্যাগে বাধ্য হয় আমরা সেই ধরনের কর্মসূচি দেব।”

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন,” আমরা জনগণের শক্তিতেই আন্দোলন করতে চাই। আর গণতন্ত্র ও মানবাধিকার এখন সারা বিশ্বের বিষয়। আমাদের বিদেশি বন্ধুরা এখানে যা দেখছেন তাই বলছেন। তারা সুষ্ঠু নির্বাচন চান। এর মানে হলো আগে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। উজরা জেয়ারের সফরের পর সরকারের ফুরফুরে মোজাজে থাকার কিছু নাই। তারা আসলে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।”

আওয়ামী লীগের কৌশল:

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আওয়ামীলও কোনো সংঘাতে না গিয়ে মাঠের নিয়ন্ত্রণ হাতে রাখতে চাইছে। তাদের কৌশল দুইটি। বিএনপির বড় কর্মসূচির দিনে তারাও বড় কর্মসূচি দেবে। আর এর বাইরে তারা ব্যাপকভাবে নিজস্ব কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে। সামনে আগস্ট মাস শোকের মাস । বঙ্গবন্ধুর এই শাহাদাত বার্ষিকীর মাসে প্রতিদিনই তাদের সারা দেশে কর্মসূচি থাকবে। তাদের সব সহযোগী সংগঠন এই কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে। এর আগে চলতি মাস থেকেই তারা উন্নয়ন, শান্তি ও গণতন্ত্রের প্রচার শুরু করবে। আর আগস্ট মাসের পর তারা পুরোদমে নির্বাচনের কাজ শুরু করবে।

জোটকে শক্তিশালী করা, যারা নির্বাচনে আসতে চায় তাদের সঙ্গে আলোচনা করা। সমমনা দলগুলোকে নির্বাচনে কী দেয়া যায় তা নিয়ে কাজ করবে। যাদের মনোনয়ন দেয়া হবে তাদের আগাম সিগন্যাল দিয়ে এলাকায় পাঠিয়ে দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে তৃণমূলে আরো চাঙ্গা করবে তারা। আওয়ামী লীগের এক দায়িত্বশীল নেতা বলেন,” বিএনপি যেদিন কর্মসূচি দেবে সেদিন আমরাও কর্মসূচি দেব। এর মূল উদ্দেশ্য হলো সমন্তরালভাবে মাঠে নেতা-কর্মীদের অবস্থান রাখা। যাতে বিএনপি হঠাৎ করে মাঠ ফাঁকা পেয়ে কিছু করতে না পারে। তারা যে ধরনের কর্মসূচি দেবে সেটা দেখে আমরাও কর্মসূচি দেব। আর এর বাইরেরও আমাদের অনেক কর্মসূচি থাকবে। মাঠের দখল আমরা ছাড়বো না।”

জানা গেছে,আওয়ামী লীগ ছাড়াও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সারাদেশে সক্রিয় করা হচ্ছে। তাদের নানাভবে চাঙ্গা করা হচ্ছে। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সেটা ধরে রাখা হবে। এর অংশ হিসেবে তারা তথ্য প্রযুক্তি ভিত্তিক অনেক পরিকল্পনা করছে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন,” আমরা ১৮ জুলাই সারা দেশে শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা করবো। আমাদের এই ধরনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। আমরা এই সরকারের উন্নয়ন এবং বিএনপির ধ্বংসাত্মক কাজের চিত্র তুলে ধরবো। সারা দেশে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সদস্যরা নির্বাচন পর্যন্ত মাঠেই থাকবে। আমরা মাঠ ছাড়বোনা।”

তার কথায়,” হেফাজতের শাপলা চত্বরের সমাবেশের সময় বিএনপি একবার চেষ্টা করেছে। আরো নানা ইস্যুতে তারা চেষ্টা করেছে। ২০১৩-১৪ সালের সময়ও চেষ্টা করেছে, পারেনি। তখন বিএনপির নেতৃত্ব অনেক শক্তিশালী ছিলো। এখন সেই অবস্থা নেই। বিএনপি বলতে গেলে নেতৃত্ব শূন্য। তখনই তারা পারেনি এখন পারবে কীভাবে। আর বিএনপির নেতা-কর্মীরা এখন হতাশ। এই হতাশা আরো বাড়বে। আমরা মাঠে থেকে তাদের হতাশা আরো বাড়িয়ে দেবো।”

তিনি মনে করেন,” বিএনপি এখন চাচ্ছে নানা শক্তির ওপর ভর করে দেশে একটি অসাংবিধানিক সরকার আনতে। সেটা বাংলাদেশে হবেনা।”

এসএই্চ-১১/১৫/২৩ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)