অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব কিনা বোঝার চেষ্টা ইইউর

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব কিনা তা বোঝার চেষ্টা করছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল৷

তার ভিত্তিতেই তারা সিদ্ধান্ত নেবেন ১৫ বছর পর আবারও বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠানো হবে কিনা৷

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব কিনা তা বোঝার চেষ্টা করছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল৷ তার ভিত্তিতেই তারা সিদ্ধান্ত নেবেন ১৫ বছর পর আবারও বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠানো হবে কিনা৷

অবশ্য নিজেদের অবস্থান এখনও পরিষ্কার করে তুলে ধরেনি পর্যবেক্ষক দলটি৷ কিন্তু যেসব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তারা আলোচনায় বসেছেন, সেসব দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে৷

এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নির্বাচনে অন্য সব দল অংশ নেবে কিনা, সরকার ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন করার যে কথা বলছে, সেটা তারা করবে কিনা, সম্ভব কিনা—এই দুইটি বিষয়ে প্রধানত আমাদের সঙ্গে আলোচনার সময় জানতে চেয়েছেন এবং বুঝতে চেয়েছেন৷’’

নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না বলে ইউরোপীয় প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছে এবি পার্টি৷ মজিবুর রহমান বলেন, ‘‘আর সেটা হলে সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে৷ তারা তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন৷ সেটা কিভাবে সম্ভব, আমরা তার ব্যাখ্যা দিয়েছি৷ তবে তারা কোনো নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে মন্তব্য করেননি৷ দেশের প্রচলিত নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে জানতে চেয়েছেন৷’’

রাজনৈতিক দলগুলো যে সভা-সমাবেশ করছে, সেখান থেকে সংঘাত তৈরি হওয়া কিংবা সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার কোনও আশঙ্কা আছে কিনা, সেই বিষয়টিও জানতে চেয়েছেন প্রতিনিধি দলটি৷

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘‘বিএনপির সঙ্গে তারা কি নিয়ে আলোচনা করেছেন তা আমাদের জানিয়েছেন৷ তারা আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন, নির্বাচন কিভাবে ফেয়ার করা সম্ভব? সবাই অংশগ্রহণ করবে কি না? কিভাবে নিরপেক্ষ হবে? নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে তারা আলাদাভাবে আমাদের কাছে কিছু জানতে চাননি৷’’

সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন, ‘‘আমরা বলেছি নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে হলে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন৷ সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যমত এবং সদিচ্ছার ওপর এটা নির্ভর করে৷ নির্বাচন পদ্ধতি নয়, আমরা আলোচনা এবং ঐক্যমতে জোর দিয়েছি৷’’

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিদেশ বিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ বলেন, ‘‘বাংলাদেশে অবাধ, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব কিনা, এটাই ছিল ওনাদের জিজ্ঞাসা৷ আর সেটা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বাংলাদেশের সংবিধান, নির্বাচন পদ্ধতি, আরপিও, বিচার বিভাগ, প্রশাসন—সব নিয়েই কথা হয়েছে৷’’

শামা ওবায়েদ বলেন, ‘‘আমরা আমাদের মতামত তুলে ধরে জানিয়েছি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়৷ শেখ হাসিনার অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব না৷’’

ইউরোপীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের বৈঠকের সময় আরো অনেকের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ৷ তিনি বলেন, ‘‘ওরা বাংলাদেশে কিভাবে নির্বাচন হয়, তা বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন৷ জানতে চেয়েছেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে৷ আমরা বিস্তারিত বলেছি৷ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য, সরকার যা যা করেছে তা আমরা জানিয়েছি৷’’

সব দল নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা—এমন কোনও প্রশ্ন আওয়ামী লীগের কাছে রাখা হয়নি বলে দাবি করেন সেলিম মাহমুদ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে তারা সব দল নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা, তা জানতে চায়নি৷ তারা ঢাকায় একই দিনে দুই বড় দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের প্রশংসা করেছেন৷’’

এই সরকারের অধীনে সংবিধান মেনে নির্বাচন হবে বলেও জানিয়েছে আওয়ামী লীগ৷

সেলেরি রিকার্ডোর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের এই প্রাক নির্বাচনী দলটি ঢাকায় আসে ৯ জুলাই৷ এরমধ্যে রাজনৈতিক দল ছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তারা৷

বৈঠক করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিক এবং জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর সঙ্গে৷ এসব বৈঠকে বাংলাদেশের মানবাধিকারের বিষয়টিও সামনে এসেছে৷

তারা মানবাধিকার কামিশনের কাছে জানতে চেয়েছে, নির্বাচনের সময় বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা এবং সহিংসতার আশঙ্কা আছে কিনা৷রোববার নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, মানবাধিকার কর্মী এবং দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সঙ্গেও বৈঠক করেন তারা৷

সবশেষ, ২০০৮ সালে বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে আসেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল৷ ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে আসেননি তারা৷ প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলটি আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত ঢাকায় আছেন৷

এরপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ জোসেপ বোরেলের কাছে মূল্যায়ন প্রতিবেদন জমা দেবেন তারা৷ সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দল আসবে কিনা৷

এসএইচ-০২/১৬/২৩ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)