বাংলাদেশে চলতি বছরের পহেলা জুলাই থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা মূল বেতনের পাঁচ শতাংশ করে অতিরিক্ত বেতন পাবেন। মঙ্গলবার ‘বিশেষ সুবিধা’ হিসেবে সরকারি চাকরিজীবীদের এই বাড়তি বেতন দেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় গেজেট প্রকাশ করেছে।
প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী, এই ‘বিশেষ প্রণোদনা’র ফলে একজন কর্মচারীর মোট বেতন বাড়বে।
কিন্তু কর্মচারীর মূল বেতন অর্থাৎ তার ‘বেসিক স্যালারি’ বাড়বে না, এর মানে হচ্ছে মূল বেতনের পাঁচ শতাংশ হারে পাওয়া বাড়তি অর্থ থোক বরাদ্দ হিসেবে পাবেন তিনি।
পরবর্তী বছরগুলোতেও এই ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রতি জুলাইতে পাঁচ শতাংশ হারেই পাবেন একজন কর্মচারী।
অর্থমন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুর রহমান খান বিবিসিকে বলেছেন, বাতিল করার ঘোষণা না আসা পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে।
তবে, নতুন পে স্কেল বা বেতন কাঠামো ঘোষণা করার সময় সাধারণত এ ধরণের সিদ্ধান্ত বাতিল হয়ে যায়, বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশে সর্বশেষ পে স্কেল ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৫ সালে। সাধারণত চার থেকে আট বছর পর পর নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হয়।
গেজেটে বলা হয়েছে, সরকারি-বেসামরিক, স্ব-শাসিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এবং পুলিশ বাহিনীতে নিয়োজিত কর্মচারী এবং পেনশনভোগী ব্যক্তিরা এই বিশেষ সুবিধা পাবেন।
এই গেজেটের আওতায় চাকরিতে নিয়োজিত রয়েছেন এমন ব্যক্তিরা সর্বনিম্ন এক হাজার টাকা বিশেষ সুবিধা পাবেন। আর যারা অবসরে রয়েছেন তারা সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা বিশেষ সুবিধা পাবেন।
এর আগে গত ২৫শে জুন সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চাকরিজীবীদের বিশেষ প্রণোদনা হিসেবে মূল বেতনের পাঁচ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
সেই প্রেক্ষাপটেই আজ এই গেজেট প্রকাশিত হলো।
গেজেট অনুযায়ী, সর্বোচ্চ বিশেষ সুবিধা কত হবে তা নির্ভর করবে কর্মরত ব্যক্তি পহেলা জুলাই তারিখে যে বেতন পাবেন তাতে তিনি মূল বেতন কত পান তার উপর। যার মূল বেতন যত বেশি তিনি বিশেষ সুবিধাও তত বেশি হবে।
এই বিশেষ সুবিধার অংশ হিসেবে যে বাড়তি বেতন পাবেন একজন সরকারি চাকরিজীবী, সেটি চলতি মাসের এক তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
প্রতিবছর এই বিশেষ সুবিধা বছরের পহেলা জুলাই তারিখে প্রাপ্য বেতন অনুযায়ী বৃদ্ধি করা হবে।
তবে যারা বিনা বেতনে ছুটিতে রয়েছেন বা থাকবেন তারা এই বিশেষ সুবিধা পাবেন না।
এছাড়া যারা তাদের পেনশনের সম্পূর্ণ অংশ এককালীন উত্তোলন করেছেন তারাও এই বিশেষ সুবিধা পাবেন না।
সরকারি চাকরীতে কেউ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়ে থাকলে তার মূল বেতনের ভিত্তিতে এ সুবিধা পাবেন।
তবে তিনি যদি অবসরের পর আবারো চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান এবং পেনশন ভোগী হয়ে থাকেন তাহলে এই সুবিধা তিনি হয় চুক্তিভিত্তিক বেতন অথবা পেনশন- যেকোন একটি ক্ষেত্রে পাবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৫ই মে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন যে, মহার্ঘ্য ভাতার পরিবর্তে মুদ্রাস্ফীতির সাথে সামঞ্জস্য করে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে।
অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা ১৩ লাখ ৯৬ হাজারের বেশি।
সে হিসেবে পাঁচ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিতে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বছরে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় হবে, বলে অর্থ বিভাগ থেকে এর আগে জানানো হয়েছিল।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারি এমন পদক্ষেপ দেশের উর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতিকে আরো বাড়াবে। একই সাথে এর প্রভাব বাজারের উপরও পড়তে পারে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, মে মাসে দেশে মূল্যস্ফীতি ছিল নয় দশমিক ৯৪ শতাংশ, যা গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন এর আগে বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন যে তিনি মনে করেন, এই প্রণোদনা কার্যকর হলে সেটা বৈষম্যমূলক হবে।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, “বর্তমান মূল্যস্ফীতির কারণে সব মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে একটি নির্দিষ্ট গ্রুপকে (সরকারি চাকরিজীবীদের) যদি আলাদা সুবিধা দেয়া হয় এবং বাকিদের সেটা না দেয়া হয়, তাহলে বাজারে এর প্রভাব পড়বে এবং মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে।”
“ফলে আগে থেকেই যারা মূল্যস্ফীতির চাপে জর্জরিত। তাদের ওপর এটি আরও বড় প্রভাব ফেলবে। কারণ তারা তো বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে না।”
সরকারের রাজস্ব বাজেট থেকে প্রাপ্ত অনুদান দিয়ে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যেমন স্ব-শাসিত সংস্থা ও রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলোকে কর্মচারীদের এ বাড়তি বেতনের অর্থ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বাজেট থেকেই যোগাড় করতে হবে।
এসএইচ-০১/১৮/২৩ (অনলাইন ডেস্ক, সূত্র : বিবিসি)