শনিবার ঢাকার প্রবেশ মুখে অবস্থান কর্মসূচিতে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এপর্যন্ত ১৭ টি মামলা হয়েছে৷ আসামি করা হয়েছে ৭৫৬ জন নেতা-কর্মীকে৷ এইসব মামলায় এক হাজারেরও বেশি অজ্ঞাত আসামি আছে৷
বিএনপির চেয়ার পার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন,”এমনিতেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা আছে৷ এগুলো মিথ্যা আর গায়েবি মামলা৷ নতুন মামলা দিয়ে আর কী করবে? আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে৷ এখন আমাদের ওপর আক্রমণ করলে আমরাও পাল্টা জবাব দেব৷ এইসব মামলা আমরা পরোয়া করি না৷”
আর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেছেন,”বিএনপি যে একটি সন্ত্রাসী দল তা আবার প্রমাণ হলো৷ তাদের দেশের মানুষ প্রতিরোধ করবে৷”
শনিবারের ঘটনায় ১৭টি মামলার ১৬টির বাদী পুলিশ৷ আশুলিয়া থানার একটি মামলার বাদী একজন পরিবহণ মালিক৷ মামলাগুলোর মধ্যে ঢাকার নয়টি থানায় হয়েছে ১৩টি, একটি সাভারে. দুইটি আশুলিয়ায় এবং একটি সিদ্ধিরগঞ্জে৷ মামলাগুলোতে বিস্ফোরক উদ্ধার, বাস পোড়ানো, ভাঙচুর, আগুন দেয়া ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ করা হয়েছে৷
এইসব মামলায় আসামি হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের মধ্যে আছেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন আহেমেদ, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নবীউল্লাহ. ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ৷ আসামিদের মধ্যে ১৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার(গণমাধ্যম) ফারুক হোসেন বলেন,”ঢাকার প্রবেশ মুখে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির অনুমতি ছিল না৷ তারপরও তারা অবস্থান নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে৷ বাসে আগুন দিয়েছে, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেছে, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে৷ আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি৷” এদিকে ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি সাতটি গাড়িতে আগুন এবং ২৪টি গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ করেছে এক বিবৃতিতে৷
পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, শনিবারের ঘটনায় মামলাগুলোর আসামিদের গ্রেপ্তারে তারা অভিযান চালাচ্ছে৷ সামনে যাতে বিএনপি এই ধরনের কর্মসূচি দিতে না পারে তার জন্য এই মামলাগুলো দিয়ে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় পুলিশ৷ আর পুরানো মামলাগুলোও তারা সক্রিয় করবে৷
গত মে মাসে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছিলেন, “এক হাজার ৩০০ মামলা নিয়ে সরকার মাঠে নেমেছে, যাতে আগামী নির্বাচনের আগে মামলাগুলো দ্রুত শেষ করে বিএনপি নেতাদের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠনো যায় এবং নির্বাচনে তারা প্রতিপক্ষ ছাড়া খালি মাঠে গোল দিতে পারে৷” বিএনপি নেতারা বলছেন, নতুন মামলা দিয়ে এখন তারা বিএনপির হাত-পা বেঁধে ফেলতে চায়৷
বিএনপি দাবি করেছে গত মে মাসের শেষ ১২ দিনে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১৫২টি নতুন মামলা হয়েছে৷ এসব মামলার আসামি পাঁচ হাজার ৫০০৷
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এক লাখ ১১ হাজার ৭০ টি৷ মোট আসামি ৩৯ লাখ ৭৪ হাজার ৪৮১ জন৷ আর গত বছরের ২২ আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মামলা হয়েছে ৩৩৬টি৷ মোট আসামি ২৪ হাজার ১৭৩ জন৷ গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক হাজার ৫০ জনকে৷
বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন,”সরকার চাইছে মামলা, হামলা করে আবার ক্ষমতায় যেতে৷ শনিবার হামলা হলো বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর ৷ আমাদের দুই সিনিয়র নেতা আহত হলেন৷ গাড়ি পোড়ানো হলো পরিকল্পিতভাবে মটর সাইকেলে গিয়ে৷ মটর সাইকেলে মহড়া দিলে আওয়ামী লীগের লোকজন৷ কিন্তু মামলা হলো আমাদের বিরুদ্ধে৷ এরচেয়ে অন্যায় আর মিথ্যাচার কী হতে পারে৷”
আর বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন,”শনিবারের ঘটনায় মামলাগুলো করা হয়েছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের চাপে রাখার জন্য৷ এইসব মিথ্যা মামলা আমরা আইনগতভাবে মোকাবেলা করব৷”
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন,”বিএনপি তাদের নেতা তারেক জিয়ার নির্দেশে শনিবার পরিকল্পিতভাবে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে৷ বাসে আগুন দিয়েছে৷ তারা যে একটি সন্ত্রাসী দল সেটা আবারো প্রমাণ হলো৷”
তিনি বলেন,”আগামীতে দেশের জনগণ বিএনপিকে হরতাল, অবরোধ, ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি করতে দেবে না৷ তারা প্রতিরোধ করবে৷ আর আমরা মাঠে আছি৷’
২০১৪-১৫ সালের ৩৭টি মামলার বিচার চলছে নিম্ন আদালতে৷ হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন,”সরকার বিএনপিকে আটকাতে অনেক পুরানো মামলাও সচল করছে৷ কিন্তু এসব করে শেষ পর্যন্ত পতন ঠেকাতে পারবে না৷”
এদিকে বিএনপি সোমবার ২৬ শর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করেছে৷ সেইসব শর্তের মধ্যে একটি শর্ত হলো তারা দণ্ডিত কোনো নেতার বক্তব্য সমাবেশে প্রচার করতে পারবে না৷
সমাবেশে বিএনপি নেতারা বলেছেন, হামলা, মামলা চালিয়ে কোনো কাজ হবে না, সরকারের পতন ঘটিয়েই তারা ঘরে ফিরবেন৷
এসএইচ-০৯/৩১/২৩ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)