বিএনপি-জামায়াতসহ সরকারবিরোধী সমমনা দলগুলোর বিরুদ্ধে আরও কঠোর হচ্ছে সরকার। ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও একজন পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর কঠোর হয়ে ওঠে সরকার। বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তারে মাঠে নামে র্যাব-পুলিশ। অভিযানের শুরুতেই গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। এ ছাড়া এক সপ্তাহে শুধু ঢাকাতেই গ্রেপ্তার করা হয় মির্জা আব্বাস, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জহির উদ্দিন স্বপন, মজিবুর রহমান সারোয়ারসহ ১ হাজার ৮০৩ জন নেতাকর্মীকে।
জানা গেছে, গ্রেপ্তার অভিযান আরও জোরদার করতে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকার সব থানা, গোয়েন্দা পুলিশ এবং কাউন্টার টেররিজম ইউনিট এখন বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে বেশি সময় দিচ্ছে।
সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে খবর রয়েছে- বিএনপি এখন ‘ডু অর ডাই’ অবস্থানে চলে গেছে। সরকার পতনের ‘এক দফার’ আন্দোলন থেকে না সরে দলটি হরতাল, অবরোধ, ঘেরাওসহ অসহযোগ আন্দোলনের মতো আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত এ ধরনের টানা কর্মসূচি চলবে। এমন প্রেক্ষাপটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সরকার আরও কঠোর হতে বলেছে।
বিএনপির মহাসমাবেশে সহিংসতা ও হরতাল-অবরোধে নাশকতার ঘটনায় গত ২৬ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত ৭ দিনে পল্টন, মতিঝিল, রমনা, মতিঝিল ও শাহজাহানপুরসহ বিভিন্ন থানায় ৬৬টি মামলা করেছে ডিএমপি। এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১ হাজার ৮০৩ জনকে।
২৮ অক্টোবর মামলা হয় ৩৭টি। এসব মামলায় বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের আসামি করা হয়। এসব মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদলের বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় নেতা আত্মগোপনে চলে গেছেন। দল থেকেও তাদের গ্রেপ্তার এড়িয়ে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু ঢাকা নয়, সব মহানগর ও জেলায় গ্রেপ্তার অভিযান জোরদার করতে বৃহস্পতিবার পুলিশকে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অভিযান এবং আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্যেও সেই কঠোরতার বার্তাই এসেছে। শুক্রবার ঢাকা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জেলহত্যা দিবসের আলোচনাসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী যে যেখানে আছে, আমাদের সহযোগী সংগঠন, সবাইকে যার যার এলাকায় এমনভাবে সংগঠিত হতে হবে, যেন ওই অবরোধ আর অগ্নিসন্ত্রাস করে একটাও পার না পায়। যে হাত দিয়ে আগুন দেবে, ওই হাতই পোড়াতে হবে। যেমন কুকুর তেমন মুগুর দিতে হবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে হামলা, আগুন ও পুলিশ সদস্য নিহতের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা দেখব- কারা হামলায় নেতৃত্ব এবং মঞ্চ থেকে উসকানি দিয়েছে, তাদের গ্রেপ্তার করব। মামলায় নাম উল্লেখ থাকা আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, বাকিদের খুঁজে বের করে গ্রেপ্তার করব।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নয়াপল্টন এলাকায় পুলিশের বসানো সিসি ক্যামেরা, ড্রোন ও বডিক্যামের মাধ্যমের ২৮ অক্টোবরে সহিসংতাকারীদের চিহ্নিত করছে পুলিশ। সাহায্য নেওয়া হচ্ছে সেদিনের গণমাধ্যমের ফুটেজের। বিভিন্ন টেলিভিশন থেকেও ফুটেজ নেওয়া হচ্ছে। ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সহিংসতাকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে। ঢাকার বাইরে থেকে আসা সহিসংতাকারীদের স্থানীয় থানা গ্রেপ্তার করে ডিএমপির সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠাবে। অপরাধের মাত্রা বুঝে ঢাকার টিমও জেলায় অভিযান চালাবে আসামি ধরতে।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ এবং হরতাল ও অবরোধকে কেন্দ্র করে সারাদেশে দলটির ৪ হাজার ৮৪৭ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় মামলা হয়েছে ১০৭টি। নিহত হয়েছে আটজন। আহত নেতাকর্মীর সংখ্যা ৩ হাজার ৪৭৬।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, বিএনপির শীর্ষ নেতারা বসে সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন এবং সেই সিদ্ধান্তের ওপর প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, বিচারপতিদের বাসভবনে হামলা, নারীদের ওপর হামলা, পুলিশ সদস্যকে হত্যাসহ এসব ঘটনা ঘটেছে। কাজেই বিএনপি দায় এড়াতে পারে না। ভিডিওতে যাদের পাচ্ছি, তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে। সব আসামিকে আইনের আওতায় আনা হবে।
ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারের জন্য কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে ২৮ অক্টোবরের সহিংসতার পর দলটির নেতারা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় তাদের হদিস মেলাতে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। আত্মগোপনে থাকা নেতারা মোবাইল ফোন ও ব্যক্তিগত নম্বর বন্ধ রাখায় অবস্থানের ব্যাপারেও নিশ্চিত হতে পুলিশকে বেগ পেতে হচ্ছে। এ কারণে প্রযুক্তির পাশাপাশি ম্যানুয়াল সোর্স ব্যবহার করছে পুলিশ। নেতাদের ঘনিষ্ঠজনের জিজ্ঞাসাবাদে সম্ভাব্য অবস্থাগুলোর ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারে একাধিক টিমকে মাঠে নামানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এসএইচ-০৩/০৪/২৩ (অনলাইন ডেস্ক, সূত্র : আমাদের সময়)