ভারত-যুক্তরাষ্ট্র পঞ্চম ‘টু প্লাস টু’ মন্ত্রী পর্যায়ের সংলাপে আলোচনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা বাংলাদেশের নির্বাচন। বাংলাদেশে চীনের প্রভাব ক্রমেই বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লি উভয়ই উদ্বিগ্ন। আর এ কারণেই বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের আগ্রহ রয়েছে বলে জানিয়েছে সংলাপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।
সূত্রের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশই চায়, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসুক। এ কারণে তারা বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী।
এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে ভারতের প্রভাব বাড়ছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে দ্বন্দ্ব রয়েছে এই দক্ষিণ এশিয়ার আরেক পরাশক্তি চীনের। বেইজিংকে নিয়ে দিল্লি-ওয়াশিংটনের আরেক বড় উদ্বেগের অন্যতম কারণ হলো, দেশটির ‘বেল্ট অ্যান্ড রোডস ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)’ প্রকল্প। এ প্রকল্পের নেটওয়ার্কে বাংলাদেশও রয়েছে।
সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, বাংলাদেশের স্থানীয় পর্যায়ে চীনের প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে। এছাড়া বিআরআই প্রকল্পের আওতায় চীনের কাছ থেকে ঋণও নিয়েছে বাংলাদেশ। এসব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথার বড় কারণ।
‘টু প্লাস টু’ বৈঠকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরও একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ ও ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব বেড়েই চলেছে। মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কায় এরই মধ্যে চীনের শক্তিশালী প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে। তাই যুক্তরাষ্ট্র চায় না যে, বাংলাদেশও চীনের এমন প্রভাবের মধ্যে পড়ুক।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশটির নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব বাড়াতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। তাই বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ রয়েছে মার্কিন প্রশাসনের। যুক্তরাষ্ট্র এর মধ্যেই বেশ কয়েকবার বলেছে, তারা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্র পঞ্চম ‘টু প্লাস টু’ মন্ত্রী পর্যায়ের সংলাপে অংশ নিতে শুক্রবার দিল্লিতে পৌঁছেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এ সংলাপে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের নানা দিক উঠে আসার পাশাপাশি বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন বা রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রসঙ্গ আসবে কি না, তা নিয়ে শুরু থেকেই বিভিন্ন পক্ষের কৌতূহল রয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শুক্রবার ভোরে দিল্লি পৌঁছান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। আর দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন দিল্লি পৌঁছান বৃহস্পতিবার। ‘টু প্লাস টু’ সংলাপে ভারতের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।
এছাড়াও প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা, ইন্দো-প্যাসিফিক বা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক কৌশল এবং দুদেশের জনগণের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নের মতো বিভিন্ন বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হতে পারে। জানা গেছে, অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও লয়েড অস্টিনের সঙ্গে পৃথক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও করবেন এস জয়শঙ্কর এবং রাজনাথ সিং।
ধারণা করা হচ্ছে, দুদেশের মন্ত্রী পর্যায়ের এ বৈঠকে আঞ্চলিক ইস্যুও প্রাধান্য পাবে। সেক্ষেত্রে আলোচনায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আসতে পারে। তবে এ বিষয়ে দিল্লি কিংবা ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
এসএইচ-০১/১০/২৩ (অনলাইন ডেস্ক)