নির্বাচন নিয়ে ভাবছে না, সরকার বিরোধী আন্দোলনে আছে জামায়াত

জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের আদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বহাল থাকায় দলটি আর নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। জামায়াতের প্রতীক দাঁড়িপাল্লাও নির্বাচনে ব্যবহার করতে পারবে না।

তবে জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেছেন, ‘‘আমরা এখন নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না৷ আমরা সরকার বিরোধী আন্দোলনে আছি৷”

মতিউর রহমান আকন্দ আরো বলেন, ‘‘নিবন্ধন বাতিল হলেও দল হিসেবে জামায়াত তৎপর আছে৷ সংবিধান অনুযায়ী দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার কোনো সুযোগ নাই৷ আমরা দলীয়ভাবে নির্বাচন করতে না পারলেও, প্রতীক ব্যবহার করতে না পারলেও কোনো দল বা জোটের সঙ্গে সমঝোতা করে তাদের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারব৷ আমাদের প্রার্থীরা স্বতন্ত্রভাবেও নির্বাচন করতে পারবেন৷ তবে সেটা আমরা যখন নির্বাচনে যাব তখন সিদ্ধান্ত নেব৷ এখন আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি না৷”

আইনগত লড়াইয়ের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘আপিল বিভাগের রায় নিয়ে রিভিউ আবেদন সুযোগ আছে৷ তবে আমরা এখন রিভিউ আবেদন করব না৷”

এক রিটের প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ বলে রায় দেন হাইকোর্ট৷ ২০১৮ সালে নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে৷ ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে সাময়িক নিবন্ধন দিয়েছিলো নির্বাচন কমিশন৷

২০১৪ সালে বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন বর্জন করেছিলো জামায়াত৷ ২০১৮ সালে তারা নিবন্ধন না থাকায় দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি৷ ২০০৮ সালে তারা দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয়৷ এর আগের নির্বাচনগুলোতেও তারা অংশ নেয়৷

আপিল বিভাগ জামায়াতের আপিলটি খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন৷ আপীলকারীর পক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত না থাকায় খারিজের আদেশ দেয়া হয় (ডিসমিস ফর ডিফল্ট)৷ জামায়াতের আপিলের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী এবং অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন৷ ব্যক্তিগত অসুবিধার জন্য তারা শুনানিতে অংশ নিতে তাদের পক্ষে আরো ছয় মাস সময়ের আবেদন করেন অ্যাডভোকেট মো. জিয়াউর রহমান৷

তিনি বলেন, ‘‘দুইজন আইনজীবীই শুনানির তারিখে আদালতে ছিলেন না৷ তাদের পক্ষে আদালতে আমি সময়ের আবেদন করেছিলাম৷ আদালত সময় না দিয়ে তাদের আসতে বলেন এবং মামলার শুনানি করতে চান৷ কিন্তু তারা আসেননি৷ ফলে আপিলটি ডিসমিস করে দেয়া হয়৷”

তার কথা, ‘‘এটা রায় নয়, আদেশ৷ এখন জামায়াত চাইলে আপিলটি রেস্টোর করার আবেদন করতে পারে৷ সেই আবেদন প্রহণ করলে আবার আপিল শুনানি হবে৷”

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘রিভিউ আবেদনের প্রশ্ন এখনও আসেনি৷ কারণ আইনজীবী অনুপস্থিত থাকায় শুনানি হয়নি এবং আপিল খারিজ হয়েছে৷ রায় হলে রিভিউয়ের প্রশ্ন আসতো৷”

তার মতে, ‘‘জামায়াত এখন আর নিবন্ধিত দল নয়৷ ফলে আইন অনুযায়ী এই দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না৷ তবে দল হিসেবে কার্যক্রম চালাতে বাধা নেই৷”

জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, এখন আর তারা দলের নিবন্ধন নিয়ে নতুন করে আইনগত লড়াই শুরু করতে চান না৷ তারা এখন অনুকূল সময়ের জন্য অপেক্ষা করবেন৷ সময় এলে তারা আবার আইনি লড়াইয়ে যাবেন৷ এরইমধ্যে জামায়াতের নীতি-নির্ধারকেরা আলোচনা করে এই সিদ্বান্ত নিয়েছেন৷ জামায়াতের তৃণমূল পর্যায়েও এই ব্যাপারে মেসেজ দিয়ে তাদের চলমান আন্দোলনে সক্রিয় থাকতে বলা হয়েছে৷

জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে আপিল বিভাগের রায়কে ‘‘ন্যায়ভ্রষ্ট রায়” বলে অভিহিত করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছে৷ আমরা মনে করি জনগণের আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার ঘৃণ্য উদ্দেশে এ ন্যায়ভ্রষ্ট রায় দেয়া হয়েছে৷”

তিনি তার দলের নেতা-কর্মীদের চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলকে আরও বেগবান করার আহ্বান জানিয়েছেন৷

জানা গেছে জামায়াত বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনেই থাকছে৷ তবে তাদের নীতি হলো ‘‘বিএনপি দুই পা এগোলে জামায়াত এক পা এগোবে৷”

পিরোজপুর জেলা জামায়াতের আমীর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জানান, ‘‘আমরা এখন কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুসরণ করছি৷ আমরা আন্দোলনে আছি৷ আন্দোলনেই থাকব৷”

জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের রিটের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেন, ‘‘জামায়াতের আন্দোলন, সমাবেশ বা মিছিল মিটিং করার অধিকার নাই৷ কারণ দলটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক প্রমাণিত হয়েছে৷ কোনো ব্যক্তি বা কোনো দল তাদের নিবন্ধন থাকুক বা না থাকুক তারা সংবিধানে ৩৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মত প্রকাশ, সভা সমাবেশ করতে পারে৷ কিন্তু সেটা সংবিধান মেনেই করতে হয়৷ জামায়াতের গঠনতন্ত্র সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেই তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে৷ তাই তারা যে রাজনৈতিক কার্যক্রম করছে এবং হাইকোর্টের রায়ের পরও করেছে তা বেআইনি৷”

এসএইচ-১২/২০/২৩ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)