শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে ২৩ লাখ টাকা নিলেন আওয়ামী লীগ নেতা

সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে ২৩ লাখ টাকা নিলেন আওয়ামী লীগ নেতা। গত ৩ অক্টোবর উপজেলার সতীহাট কে.টি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে ওই শিক্ষক নিয়োগ হয়।

টাকার বিনিময়ে নিয়োগ পেয়েছেন বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলার আসামি উপজেলার গণেশপুর ইউনিয়নের মীরপুর গ্রামের সাজ্জাদ হোসেন।

২৩ লাখ টাকার বিনিময়ে সাজ্জাদ হোসেনকে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি গণেশপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হানিফ উদ্দিন। একই সঙ্গে তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। ঘটনার পর এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি সতীহাট কে.টি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষের পদ থেকে অবসর নিয়েছেন অমল কুমার। তিনি অবসর গ্রহণ করায় পদটি শূন্য হয়।

ছয় মাস আগে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হানিফ উদ্দিনকে ৪ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে শূন্যপদে প্রধান শিক্ষক হন একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান। তিনি প্রধান শিক্ষক হওয়ায় সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য হয়।

ওই প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র শিক্ষক দীজেন্দ্রনাথকে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়ার লোভ দেখান সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক। কিন্তু শিক্ষক দীজেন্দ্রনাথ ৫ লাখ টাকা ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানান।

যেখানে লুৎফর রহমান ৪ লাখ টাকা দিয়ে প্রধান শিক্ষক হয়েছেন সেখানে কেন ৫ লাখ টাকা দিয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পেতে হবে এ নিয়ে মনোমালিন্য দেখা দেয়।

এরই মধ্যে শূন্যপদের বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগ দিতে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। এ সুযোগে সতিহাট জিএস বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিএসসি শিক্ষক মিজানুর রহমান দুলালের সঙ্গে ১৮ লাখ টাকায় সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দিতে চুক্তি হয় প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের।

সে অনুযায় তাদের অগ্রিম ৫ লাখ টাকা দেন দুলাল। ঘুষের ৫ লাখ টাকা দিয়ে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হজ করেছেন বলেও জানা যায়।

নিয়োগ পরীক্ষার কয়েকদিন আগে শিক্ষক মিজানুর রহমান দুলালের কাছে প্রবেশপত্র পাঠানো হয়। পরীক্ষার দিন তিনিসহ পাঁচজন অংশগ্রহণ করেন।

টাকার বিনিময়ে নিয়োগ হওয়ায় পরীক্ষার খাতায় নাম ও রোল নম্বর ছাড়া কিছুই লেখেননি দুলাল। পরীক্ষার খাতায় তিনি কিছু না লেখায় শূন্য দিয়ে তাকে অকৃতকার্য করা হয়।

এদিকে, গোপনে ২৩ লাখ টাকার বিনিময়ে গণেশপুর ইউনিয়নের মীরপুর গ্রামের ‘মীরপুর দাখিল মাদরাসার’ সহকারী শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেনকে নিয়োগ দেন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকসহ নিয়োগ কমিটির সদস্যরা।

অভিযোগ রয়েছে, সাজ্জাদ হোসেন দলীয়ভাবে বিএনপির সমর্থক। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলার আসামি তিনি। ওই মামলার সাক্ষী প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ উদ্দিন।

প্রতিষ্ঠানের প্রভাষক শামসুল আলম, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য এবং সতিহাট কেজি স্কুলের পরিচালক প্রভাষক মকছেদ আলী, সদস্য রাজমিস্ত্রি জনাব আলী, ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন মোল্লা, যুবলীগ নেতা সোহেল, ডা. জাহাঙ্গীর ও সবুজসহ কয়েকজন নিয়োগ বাণিজ্যের টাকার ভাগ পেয়েছেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষক মিজানুর রহমান দুলাল বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য সভাপতির সঙ্গে ১৮ লাখ টাকা চুক্তি হয়েছিল আমার।

অগ্রিম ৫ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। পরে সাজ্জাদ হোসেন নামে একজনকে আমার থেকেও বেশি টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু আমার টাকা এখনো ফেরত পাইনি।

প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান বলেন, আমি নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব। অথচ আমাকে কিছুই জানানো হয় না। সবকিছুই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি জানেন এবং করেন।

তার কথায় একমত না হলে মাথায় বাড়ি পড়বে। তারা যা করেন তাতেই একমত হতে হয়। বর্তমানে জোর যার মুল্লুক তার। আমিও বোর্ড খরচ হিসেবে কিছু টাকা দিয়ে চাকরি নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক দীজেন্দ্রনাথকে সহকারী শিক্ষক থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষক হওয়ার জন্য প্রস্তাব দেইনি। সভাপতি নিজে তাকে ৫ লাখ টাকার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে তাকে নেয়া হলে আমরা খুশি হতাম।

কিন্তু বাইর থেকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে অন্য একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখানে আমাদের বলার কিছুই নেই। আমরা নিরুপায়। তবে টাকা দিয়ে নিয়োগের সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত নই। আমি এ নিয়োগের বিষয়ে কিছুই জানি না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।

সতীহাট কে.টি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সভাপতি এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ উদ্দিন বলেন, টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। পরীক্ষায় যিনি পাস করেছেন তাকেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কে মামলার আসামি সেটি আমার দেখার বিষয় নয়।

এছাড়া শিক্ষক মিজানুর রহমান দুলালের কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়া হয়নি। তিনি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন। সাক্ষাতে দেখা করে এই প্রতিবেদককে চা-পানের অনুরোধ করেন তিনি।

মান্দা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও নিয়োগ কমিটির সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে পাঁচজন অংশ নিয়েছিলেন।

এর মধ্যে মিজানুর রহমান দুলাল নামে এক শিক্ষক নাম ও রোল নম্বর ছাড়া খাতায় কিছু না লেখায় অকৃতকার্য হয়েছেন। তিনি ভাইভাতেও অংশ নিয়েছিলেন। তবে টাকার বিনিময়ে নিয়োগের বিষয়টি আমি জানি না। এসব বিষয় সংশ্লিষ্ট কমিটি বলতে পারবে।

বিএ-১৫/১৩-১০ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)