আসন্ন সংসদ নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হবে

ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং ঝু বলেছেন, তার দেশ আশা করে যে বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হবে। শনিবার ঢাকার একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক : আগামীর পূর্বাভাস’ শিরোনামে সেমিনার শেষে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

এর আগে সেমিনারের বক্তব্যে তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চীন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সেমিনারে আলোচকরা রোহিঙ্গা সংকট, বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনের ভূমিকা আরও স্পষ্ট করার পরামর্শ দেন। এ সময় জানানো হয়, ভুটানের জনসংখ্যার সমান রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছে।

কসমস ফাউন্ডেশন আয়োজিত এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের প্রিন্সিপাল রিসার্চ ফেলো ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আফসান চৌধুরী, চীনের সিচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লি তায়ো, চীনের পিপলস ডেইলি সংবাদপত্রের ইন্ডিয়া ব্যুরোর প্রধান ইয়ন জিরং, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের চেয়ারম্যান মুন্সী ফায়েজ আহমেদ, কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান প্রমুখ।

চীনের রাষ্ট্রদূতের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বেইজিং পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে কি-না। জবাবে ঝ্যাং ঝু বলেন, চীন বিশ্বাস করে, বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হবে এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোই এটি করতে সক্ষম।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ সংকট সমাধানে চীনের ভূমিকা গঠনমূলক। সম্পর্কের ক্ষেত্রে চীন শুধু বাণিজ্যিক স্বার্থকেই গুরুত্ব দেয়। সেমিনারে ওঠা এমন বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার দেশ এ অঞ্চলের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে একসঙ্গে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে চায়। সবার অগ্রগতির যাত্রাপথ একটি মহাসড়কে চালিত করার ইতিবাচক উদ্দেশ্য নিয়েই চীন কাজ করছে।

সেমিনারে আলোচনায় অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে চীন এখন যেন দক্ষিণ এশিয়ারই একটি দেশ। এ কারণে এখনই সময় সার্ক পুনর্গঠনের, যেখানে চীনও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। তিনি বলেন, ভারত-পাকিস্তান-চীন একাধিক বাণিজ্যিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে একসঙ্গে কাজ করছে। অতএব, সার্কের মতো আঞ্চলিক জোটেও এ তিনটি দেশের একসঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কে তিনি বলেন, যেহেতু রাখাইনে গণহত্যা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে, সে কারণে রোহিঙ্গা সংকট এখন আর বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে সীমাবদ্ধ নেই। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে শুধু বাংলাদেশে নয়, আরও অনেক দেশে আশ্রয় নিয়েছে। তবে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা এসেছে এবং কপবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ভুটানের জনসংখ্যার সমান। সে হিসেবে রোহিঙ্গা সংকটের মধ্য দিয়ে ভুটানের মতো একটা দেশ বাংলাদেশে ঢুকে গেছে। ফলে এটা বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় সংকট।

আফসান চৌধুরী বলেন, জনমনে ধারণা হচ্ছে, রাখাইনে রোহিঙ্গা নির্মূলের নেপথ্যে চীনের স্বার্থ রয়েছে। মানুষ বিশ্বাস করে, চীনের সমর্থনেই মিয়ানমার রোহিঙ্গা সংকট ইস্যুতে আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করতে পারছে। নিজেদের ভূমিকা স্পষ্ট করে এ ধারণা চীনকেই বদলাতে হবে। তিনি আরও বলেন, যে কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে চীন বাণিজ্যিক স্বার্থকেই প্রাধান্য দেয়, এটাও সবার ধারণা। চীনের বিনিয়োগের টাকা ধনীদের পকেটে দেখা যায়; কিন্তু গরিব কতটা উপকৃত হয়েছে, তা বোঝা যায় না।

অধ্যাপক লি তাও বলেন, চীনের সভ্যতা হাজার বছরের। চীন শান্তি, অগ্রগতি এবং উন্নয়নের নীতিকেই আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেয়। বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হওয়াকে চীন সব সময়ই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে।

বিএ-২২/০৮-১২ (ন্যাশনাল ডেস্ক, তথ্যসূত্র: সমকাল)