জামায়াতের ২৫ জনের প্রার্থিতা বাতিলের আবেদন নিষ্পত্তির নির্দেশ হাইকোর্টের

নিবন্ধন হারানো বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৫ জন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের পদক্ষেপ নিতে নির্বাচন কমিশনে করা আবেদন তিন দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

ধানের শীষ প্রতীকে জামায়াতে ইসলামীর ২৫ জনের নির্বাচনে অংশগ্রহণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম।

রিটকারীদের আবেদনে বলা হয়, ‘ইদানিং বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানতে পারি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ২৫ জন প্রার্থী তাদের রাজনৈতিক পরিচয় গোপন রেখে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে নমিনেশন পেপার জমা দেন, যা অত্র ইলেকশন কমিশন কর্তৃক গৃহীত হয় এবং তাদেরকে বৈধ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার সুযোগ প্রদান করা হয়েছে, যা আইনগত বৈধ নয়।’

২০০৮ সালের ১ আগস্ট তরিকত ফেডারেশনের দায়ের করা এক রিট মামলায় হাইকোর্ট রায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেন।

বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ চারজন নিবন্ধন হারানো জামায়াতের ২৫ নেতার ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে সুযোগ দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটে নির্বাচন কমিশন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), জামায়াতের কেন্দ্রীয় আমির, সেক্রেটারি জেনারেল ও মনোনিত ২৫ প্রার্থীসহ মোট ২৯ জনকে বিবাদী করা হয়।

জামায়াতের এই ২৫ প্রার্থী হলেন দিনাজপুর-১ আসনে মোহাম্মদ হানিফ, দিনাজপুর-৬ আসনে মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-২ আসনে মনিরুজ্জামান মন্টু, নীলফামারী-৩ আসনে মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, গাইবান্ধা-১ আসনে মাজেদুর রহমান সরকার, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, পাবনা-৫ আসনে মাওলানা ইকবাল হুসাইন, ঝিনাইদহ-৩ আসনে অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, যশোর-২ আসনে আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন, বাগেরহাট-৩ আসনে আবদুল ওয়াদুদ, বাগেরহাট-৪ আসনে অধ্যাপক আবদুল আলীম, খুলনা-৫ আসনে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, খুলনা-৬ আসনে মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, সাতক্ষীরা-২ আসনে মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৩ আসনে মুফতি রবিউল বাশার, সাতক্ষীরা-৪ আসনে গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-১ আসনে শামীম বিন সাঈদী, ঢাকা-১৫ আসনে ডা. শফিকুর রহমান, সিলেট-৬ আসনে মাওলানা হাবিবুর রহমান, কুমিল্লা-১১ আসনে ডা. আবদুল্লাহ মো. তাহের, চট্টগ্রাম-১৫ আসনে আ ন ম শামসুল ইসলাম এবং কক্সবাজার-২ আসনে হামিদুর রহমান আযাদ। এছাড়া জামায়াতের নূরুল ইসলাম বুলবুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩, জহিরুল ইসলাম চট্টগ্রাম-১৬ এবং ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেন পাবনা-১ আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছেন।

রিট আবেদনের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর শুনানিতে বলেন, জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে হাইকোর্টে রিট করা হয়। ওই রিটের ওপর জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২০১৩ সালে হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করে।

হাইকোর্টের ওই রায়ে বলা হয়, রাজনৈতিক দল হিসেবে ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি (১)(বি) (২) ও ৯০সি অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও সংবিধানপরিপন্থি। সেই রায় এখনও বহাল আছে।

তানিয়া বলেন, যেহেতু জামায়াতের নিবন্ধন নেই, তাই ওই দলের কোনো নেতা নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করতে পারছেন না। যেহেতু নিজস্ব প্রতীকে পারছেন না, সেহেতু অন্য কোনো দলের প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণেরও সুযোগ নেই।

বিএ-১০/১৮-১২ (ন্যাশনাল ডেস্ক)