“সন্ত্রাস জঙ্গিবাদের মতো অবৈধ মাদক ঠেকাতেও সফল হবো”

সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় যথেষ্ট সফল হয়েছি উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আমরা অবৈধ মাদক ঠেকাতেও সফল হবো ইনশাল্লাহ।

বৃহস্পতিবার ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮’ এর প্রায়োগিক বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা জন্য ‘বিস্তরণ কর্মশালা’র প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেগুনবাগিচায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এনপিএস নামে নতুন মাদক আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। আমাদের দেশে কিন্তু আমরা কোনো মাদক তৈরি করি না। পার্শ্ববর্তী দেশ ও মাদক উৎপাদনকারী দেশ থেকে এই মাদক আমাদের দেশে সীমান্ত হয়ে আসছে। এই কাজে যারা মূল ভূমিকায় তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে তৎপর রয়েছে।

তিনি বলেন, আইনগত দুর্বলতা ও ফাঁক-ফোকরের কারণে প্রকৃত অপরাধীরা সুযোগ নিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে যায়। তবে সংশোধিত আইনে সে সুযোগ থাকবে না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নানা কারণকে সামনে রেখে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯০-এর প্রয়োজনীয় সংস্কার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ প্রণয়ন করা হয়েছে। আগামী ২৭ ডিসেম্বর থেকে নতুন এই আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর একযোগে কাজ করবে।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ দূর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে ক্রমান্বয়ে মধ্যম আয়ের দেশের দ্বারপ্রাপ্তে। আমাদের প্রবৃদ্ধির অংশীদার আমাদের দেশের মানুষ। কারণ, জনসংখ্যার অর্ধেকই কর্মক্ষম জনশক্তি। এদেশের জনশক্তির ৯২ শতাংশই আমাদের যুবসমাজ। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত লক্ষ-কোটি তরুণই আমাদের দেশকে বদলে দেবে। কিন্তু প্রধান বাধা হচ্ছে মাদক। নেশার ছোবলে পড়লে এই যুব সমাজের কর্মশক্তি, সেবার মনোভাব ও সৃজনশীলতা হারিয়ে ফেলে এবং জাতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, যুব সমাজ আমাদের সম্পদ। কিন্তু দেশে নতুন নতুন মাদকের আবির্ভাব ঘটছে। মাদকাসক্তরা এই নতুন নতুন মাদকের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে ইয়াবার মতো মাদক আমাদের সমাজ পরিবার বিষিয়ে তুলছে, সব শ্রেণির মানুষকে প্রভাবিত করছে। সমাজের দরিদ্র শ্রেণি থেকে শুরু করে দিনমজুর, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও বিত্তশালী শ্রেণিসহ বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে ইয়াবার ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি বলেন, নতুন আইনে ইয়াবা পাচার ব্যবসায়ীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০০ গ্রামের ঊর্ধ্বে এমভিটামিনযুক্ত ইয়াবা আটকে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কিংবা মৃত্যুদণ্ড। আর গডফাদারদের জন্য অর্থপাচার মামলায় শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আর যেকোনো নতুন মাদকের আবির্ভাব ঘটলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ব্যবস্থা নিতে পারবে।

আইনের ফাঁক গলিয়ে কেউ যাতে অবৈধ সুবিধা নিয়ে মাদকের ব্যবসা করতে না পারে সেজন্য সবাইকে সচেষ্ট থাকার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার অধিদফতরকে শক্তিশালী করতে জনবল বৃদ্ধি করে ১ হাজার ৭শ ৬ থেকে ৪ হাজার ৪২ জনে উন্নীত করেছে; যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। ঢাকাসহ বিভাগীয় পর্যায়ের ৬টি নতুন কার্যালয় উদ্বোধন করা হয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রামে নতুন রাসায়নিক গবেষণাকার চালুর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। অফিদফতরের লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়ানোর জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার সহযোগীতায় চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী বলেন, মাদকের ডিমান্ড থাকলে সাপ্লাই হবেই। ডিমান্ড ও সাপ্লাই কী করে বন্ধ করা যায় সেটা আগে দেখার বিষয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর কর্তৃক মামলা বাড়িয়ে লাভ নেই। মামলার ক্রটি-বিচ্যুতি দুর করতে হবে। মামলা বেশি করার চাইতে বেশি মামলায় জেতার চেষ্টা করতে হবে। কারণ, আমরা হারছি বেশি। পাশাপাশি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদরে মানসিকভাবে পরিবর্তন আনারও আহ্বান জানান তিনি।

বিএ-০৯/২০-১২ (ন্যাশনাল ডেস্ক)