একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হতাহতের বিষয়ে অভিযোগ পাননি বলে জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। তিনি বলেন, ‘ভোটের আগে, ভোটের দিন ও ভোট-পরবর্তী সময়ে নিহতের কোনো খবর আমরা পাইনি।’
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার কারওয়ান বাজার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয়ের কনফারেন্স কক্ষে নির্বাচনে মানবাধিকার বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
রিয়াজুল হক বলেন, ‘গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমরা ১৪ জন নিহত হওয়ার সংবাদ জেনেছি। শতাধিক লোক আহত হয়েছে সেটিও জেনেছি। তবে আমাদের কেউ সরাসরি বিষয়গুলো তত্ত্বাবধান করেনি। এমনকি আমাদের কাছে কেউ অভিযোগও করেনি।’
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরেছে। তাই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে আমরা মনে করি। এই নির্বাচনে সবাই অংশগ্রহণ করেছে। ভোটের আগে কিছু অভিযোগ ছিল এরপরেও কেউ নির্বাচন থেকে দূরে সরে যায়নি। ফলে একটি অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের নির্বাচনে নারী ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পেরেছে। যার ফলে ২২ জন নারী সরাসরি নির্বাচিত হয়েছে। ৮০ শতাংশ ভোট কাস্ট থেকেই বোঝা যায় অন্যান্য যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়েছে।’
দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক বার দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত। এতে সহিংসতা অনেক কমে আসে। সবাই সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে। যা অতীতে হয়নি। ১৯৯১ সাল থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও সহিংসতার মাত্রা ছিল অনেক বেশি। সেই তুলনায় এবারে তেমনটা শোনা যায়নি। তাই দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হওয়ার দরকার বলে মনে করি যদি সেই সরকার নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে দেয়।’
কাজী রিয়াজুল হক আরো বলেন, ‘নির্বাচনের পূর্ববর্তী, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচন-পরবর্তী তিন সময়ে আমাদের কন্ট্রোল রুমে মোট ৫২টি অভিযোগ পড়েছে। অভিযোগগুলো ভয়ভীতি জনিত কারণ, কেন্দ্রে যেতে না দেওয়া, প্রাণনাসের হুমকি ইত্যাদি ছিল। আমরা বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করেছি। নির্বাচন কমিশন সবকিছু বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন। আমরা শুধু চিঠি চালাচালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আমাদের কিছুই করার নেই।’
ভোট কেন্দ্রের সার্বিক পরিস্থিতির সম্পর্কে এই মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি ঢাকার অনেকগুলো কেন্দ্র ঘুরেছি। সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা ছিল না। ভোটাররা ভোট দিতে পারছে না এমনটা দেখিনি। দু-একটি কেন্দ্রে এজেন্ট না থাকলেও বাকি সব কেন্দ্রে বিরোধী দলের এজেন্টদের দেখতে পেয়েছি।’
নির্বাচনে মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে ভোটের নজিরহীন ব্যবধান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর কারণ আমি বলতে পারবো না। তবে ভোটের ব্যবধান এত বেশি কেন হলো এটা নিয়ে একটা গবেষণা হতে পারে। এটা গবেষণা করে দেখা উচিৎ।
নোয়াখালীতে ভোটের পরে এক নারীর গণধর্ষণের প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘নোয়াখালীতে ভোটের পরে বিরোধী পক্ষকে ভোট দেওয়ার কারণে যে নারীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে, গণমাধ্যমের মাধ্যমে তা আমাদের নজরে এসেছে। আমরা বিষয়টি আমলে তদন্ত করবো। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে বলবো।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সচেষ্ট থাকার কারণে সংখ্যালঘু পরিবারগুলোর সবাই ভোট কেন্দ্রে গিয়ে মতামত প্রকাশ করতে পেরেছে। যা অতীতের কোনো নির্বাচনে এতো সংখ্যালঘু ভোট কেন্দ্রে যায়নি।’
বিএ-০৭/০১-০১ (ন্যাশনাল ডেস্ক)