অসুস্থ খালেদা জিয়া, হাজির হননি আদালতে

পায়ে ফোঁড়া উঠে অসুস্থ হয়ে পড়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় আদালতে হাজির হতে পারেনি কারা কর্তৃপক্ষ। ফলে মামলাটির চার্জ শুনানি পিছিয়ে আগামী ২৪ জানুয়ারি ধার্য করেছেন আদালত।

বুধবার সকালে ঢাকার ৩নং বিশেষ জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ দিলজার হোসেন নতুন এ দিন ধার্য করেন। পুরান ঢাকার বকশি বাজরের আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে এ মামলার শুনানি হয়। খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করার কথা ছিল। তবে পায়ের ফোঁড়ার কারণে তাকে আদালতে হাজির করতে পারেনি কারা কর্তৃপক্ষ।

দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে মোশাররফ হোসেন কাজল খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই মামলার চার্জ গঠনের শুনানি শুরু করার জন্য আদালতের কাছে প্রস্তাব জানান। কিন্তু খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার তার অনুপস্থিতিতে মামলার চার্জ শুনানি শুরু করতে আইনগতভাবে বাধা আছে বলে জানান।

শুনানিকালে প্রসিকিউটর কাজল বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি খালেদা জিয়ার পায়ে একটি ফোঁড়া উঠেছে তাই তিনি আদালতে আসেননি। কারা কর্তৃপক্ষ কাস্টরি ওয়ারেন্ট পাঠিয়েছে।’

বিচারক জানান, কারাকর্তৃপক্ষ কারাগার থেকে খালেদা জিয়ার কাস্টডি পাঠিয়েছেন। সেখানে তিনি অসুস্থ লেখা আছে। পরে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে এ মামলার তারিখ পিছিয়ে দেন আদালত।

আজ খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতে ছিলেন মাসুদ আহমেদ তালুকদার, জয়নুল আবেদীন মেসবাহ, তাহেরুল ইসলাম, আকরাম হোসেন, আবদুল হান্নান ভূঁইয়া প্রমুখ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন মোশাররফ হোসেন কাজল।

এর আগে একই আদালত গত ১০ জানুয়ারি প্রডাকশনে ওয়ারেন্ট জারির আদেশ দেন। আজও উপস্থিত না হওয়ায় খালেদা জিয়ার পক্ষে সময় আবেদন মঞ্জুর করেন আগামী ২৪ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত।

মামলাটিতে চার্জশিটভুক্ত ২৪ জন আসামি ছিলেন। তাদের মধ্যে ৭ জন মারা গেছেন। বর্তমানে খালেদা জিয়া, ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ জীবিত আছেন ১৭ জন।

২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর মামলাটি দায়ের করা হয়। পরের বছর ১৩ মে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরপর মামলার দুই আসামি গ্যাটকোর পরিচালক সৈয়দ তানভির আহমেদ ও সৈয়দ গালিব আহমেদ মামলাটি বাতিলের জন্য হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০০৮ সালের ২৯ জুলাই হাইকোর্ট বিচারিক আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করে। ফলে এরপর থেকে ১০ বছর মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

সর্বশেষ গত বছর ২৫ নভেম্বর হাইকোর্ট ওই দুই আসামির আবেদন খারিজ করে দেয় এবং ৬ মাসের মধ্যে বিচারিক আদালতকে মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন।

মামলাটিতে জরুরি বিধিমালা সংযুক্ত এ মামলার অভিযোগপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করে মামলা বাতিল চেয়ে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। রিট আবেদনের কারণে প্রায় ৮ বছর নিম্ন আদালতে বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। রিট খারিজ করে উচ্চ আদালত ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে দুই মাসের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশে ওই বছরের ৫ এপ্রিল আত্মসমর্পণ করে জামিন পান খালেদা জিয়া।

গত ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. গোলাম শাহরিয়ার ১৩ জনের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় মামলাটি করেন।

নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কানাডীয় প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় মামলাটি করেন।

মামলা করার পরের বছর ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। পরে আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন– বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামালউদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সিএম ইউসুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক সাংসদ এমএএইচ সেলিম এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।

বিএ-০১/১৬-০১ (ন্যাশনাল ডেস্ক)