ঢামেকের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে সৌদি ফেরত তিন নারী

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশি নারী শ্রমিকরা। যৌন হেনস্থা এবং নির্মম নির্যাতনের চিহ্ন আর তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন ৮১ নারী ও ৪৭ পুরুষকর্মী। এদের মধ্যে তিনজনে ঠিকানা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি )।

রোববার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে এয়ার এরাবিয়ার এ৯-৫১৫ ফ্লাইটে করে তারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তারা।

রোববার ফিরে আসা নির্যাতিত এসব নারীদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা খুবই নাজুক। বিমান থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় কুর্মিটোলা হাসপাতালে। পরে সেখান থেকে ঢামেক ওসিসিতে স্থানান্তর করা হয়।

এই তিন নারীর মধ্যে দুই জনের পরিচয় পাওয়া গেলেও এক নারীর পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। তিনি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন।

কথা বলতে পারছেন না। গুরুতর অসুস্থ্য এক নারী জানিয়েছেন, তার নাম আদুরী। এছাড়া একই অবস্থায় ফিরেছেন সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের দুই নারী । এসব নারীর প্রত্যেকের বয়স ২০ বছরের নিচে।

দেশে ফেরার পর তাদের ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ও প্রবাসী কল্যাণ ডেক্সের তত্ত্বাবধানে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হয়।

ফেরত আসা নারীরা বলেন, সৌদি নিয়োগকর্তা তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুতি জানিয়ে বলেন, আর কোন মেয়ে যেনো সৌদি আরব না যায়। বলেন, দেশে ভিক্ষা করে খাবো, তবে বিদেশ যাবো না।

এদিকে ফেরত যুবকরা অভিযোগ করেন তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। জনপ্রতি পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা করে নিয়ে তাদেরকে সৌদি আরব পাঠানো হয়েছিলো। কিন্তু সেখানে তাদের কাজ নেই, বেতন নেই, আকামা দেয়া হয়নি। আবার অনেকের আকামা থাকা সত্ত্বেও অন্যত্র কাজ করলেই পুলিশ ধরে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। ফিরে আসা যুবকরা ডির্পোটেশন ক্যাম্পে অবস্থান করছিলেন।

নির্যাতিত এসব নারী সৌদি আরবের রিয়াদ ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে (সফর জেল) অবস্থান করছিলেন। তাদের অভিযোগ, দেশটির নিয়োগকর্তা তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালাতো। এসব নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গৃহকর্তার বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে ক্যাম্পে আশ্রয় নেন অসহায় এসব নারী। ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে ফেরার অপেক্ষায় এখনো অনৈক নারী অবস্থান করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সৌদিতে বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীরা নির্যাতনের শিকার হয়ে শুধু যে দেশে ফিরছেন আর দূতাবাসের সেফহোমে অবস্থান করছেন তা নয়। হয়রানিমূলক মামলার শিকার হয়ে অনেকে সেদেশে কারাবন্দীও রয়েছেন। সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নারী শ্রমিককে গৃহকর্তাদের ধর্ষণসহ যৌন নিপীড়নের বিষয়টি নতুন নয়। তাদের ওপর পৈশাচিক যৌন নিপীড়নের অভিযোগ বরাবরই রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সাল থেকে ২ লাখেরও বেশি নারী শ্রমিক পাঠানো হয় সৌদি আরবে৷ তাঁদের মধ্যে নির্যাতনসহ নানা করণে ৪০ হাজারের মতো নারী শ্রমিক সেখান থেকে ফেরত এসেছেন৷এ নিয়ে চলতি মাসে দেশটি থেকে ফিরলেন নির্যাতিত ১১৬ নারী।

বিএ-১৪/২১-০১ (ন্যাশনাল ডেস্ক)