আট মাস পর কেন হাসপাতালে ফিরলেন ‘বৃক্ষ-মানব’ বাজানদার

দীর্ঘ আট মাস পর আবারও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ফিরে এসেছেন বৃক্ষ-মানব হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ আবুল বাজানদার। তার অসুখ সারে নি, হাতে আবারো আগের মতোই গজিয়ে গেছে শেকড়।

গত বছরের মে মাসে কাউকে কিছু না জানিয়ে নিজ বাড়ি খুলনায় চলে গিয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু দীর্ঘদিন চিকিৎসা না নেয়ার কারণে হাতে আবারও আগের মতো শেকড় গজিয়ে গেছে মিস্টার বাজানদারের।

“বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি মোটেও সঠিক ছিল না” – সোমবার বললেন আবুল। তবে তার ফিরে যাওয়ার বিষয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে তার কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল বলে উল্লেখ করছেন তিনি।

বাজানদার বলেন, “আমাকে স্যারেরা (ডাক্তাররা) যখন জানালো যে আমার হাত পুরোপুরি ঠিক হবেনা, এটা মাঝে মাঝেই গজাবে আর সেটা অপারেশন করতে হবে। এটা জেনে আমি মানসিকভাবে দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই।”

এমন অবস্থায় মিস্টার বাজানদার চিকিৎসকদের জানান যে তিনি নতুন করে আর কোন অস্ত্রোপচার করবেন না, বাড়ি ফিরে যাবেন।

যদি এই শেকড় বাড়তে থাকে, তাহলে তিনি পুনরায় চিকিৎসা নিতে আসবেন।

তার এমন সিদ্ধান্তের কথা শুনে চিকিৎসকরা বিষয়টি লিখিত আকারে সই করার শর্ত জুড়ে দেন বলে জানান বাজানদার।

সেই কাগজে সই করলে পরবর্তী চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় কাউকে কিছু না জানিয়েই হাসপাতাল ছেড়ে যান তিনি।

“আমি স্যারেদের (ডাক্তারদের) বলেছি আমার রোগটা যেহেতু পুরোপুরি সারবেনা, তারা যেন আমাকে ছুটি দেন, আমি বাড়ি যাব। কিন্তু আমি সই করতে চাইনি। যদি চিকিৎসা আর না পাই এই ভয়ে। কিন্তু সবাই যে বলছে আমি পালিয়ে গেছি। আমি আসলে পালিয়ে যাইনি।”

তবে বাজানদারের এই চিকিৎসা না পারার আশঙ্কাকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়কারী ডাক্তার সামন্ত লাল সেন।

তিনি বলেন, “বাজানদারের এখান থেকে চলে যাওয়ার পেছনে মান অভিমান অনেক কিছুই আছে। তার হয়তো মনে হয়েছিল এখানে তার সঙ্গে কেউ কেউ ভাল ব্যবহার করেনি। পরে এলে তাকে ভর্তি করবেনা।

“এসব কিছুই তার ভুল ধারণা। আমরা চিকিৎসকরা রোগকে প্রাধান্য দেই – রোগীকে না। রোগী যেই হন, যেমনই হন আমরা তার চিকিৎসা করবোই।”

ছেলের ভুল হয়েছে স্বীকার করেছেন মা আমেনা বিবিও।

বাজানদারের যাবতীয় চিকিৎসার ব্যয়ভার সরকার বহন করায় কিছুটা স্বস্তিতে আছেন ঠিক,ই তবে ছেলের শারীরিক অবস্থার দিন দিন অবনতি হতে থাকায় প্রতিনিয়ত উদ্বেগের মধ্যে থাকতে হয় তাকে।

তার দাবি বাজানদারের চিকিৎসা যেন পুনরায় শুরু করা হয়।

আমেনা বিবি বলেন, “আমার ছেলে না হয় ছোট মানুষ ভুল করেছে, বাড়ি চলে গিয়েছে। আমি থাকলে স্যারেদের (ডাক্তারদের) বুঝায় বলতাম। আমি চাই আমার ছেলে চিকিৎসার মধ্যে থাকুক। তারা আমার ছেলেকে সুস্থ করে আমার কোলে ফিরায়ে দেবে আমি সেই আশাই করি।”

আবুল বাজানদার খুলনায় নিজের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পরও ডাক্তার সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে তার বেশ কয়েকবার ফোনে কথা হয়। ড. সেন প্রতিবারই তাকে ফিরে আসার কথা বলেন।

আবুল বাজানদার ঠিক কি কারণে হাসপাতাল ছেড়েছিল, তার কোন অভিযোগ ছিল কিনা সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলেননি ড. সেন।

তিনি বলেন, “ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাত্র দুইশ রোগীর জনবল দিয়ে সাড়ে পাঁচশ রোগীর চিকিৎসা দেয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে অনেকের অভিযোগ থাকতেই পারে। আমি সেটা অস্বীকার করিনা। তবে আশা করি সামনে আর কোন অভিযোগ থাকবে না। এ বিষয়টা আমি খেয়াল রাখব।”

টানা দুই বছর চিকিৎসার পর আবুল বাজানদার অনেকটা সুস্থ হয়ে এলেও দীর্ঘদিন চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে না থাকায় এবার তার হাতে-পায়ে আবারও আগের মতো শেকড়ের গজিয়ে উঠতে দেখা যায়।

এ অবস্থায় বাজানদারের চিকিৎসা নতুন করে শুরু করতে হবে বলে জানিয়েছেন ডা. সেন। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড বাজানদারের পরবর্তী চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলে তিনি জানান।

প্লাস্টিক সার্জারি, চর্মরোগ, এনেসথেশিয়া ও প্যাথলজি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে বোর্ডটি গঠন করা হবে।

গত ১০ বছর ধরে হাত-পায়ে শেকড় মতো গজানোর মতো বিরল এক জেনেটিক রোগে ভুগছেন আবুল বাজানদার। মেডিকেলের ভাষায় এপিডার্মো ডিসপ্লেশিয়া ভেরুকোফরমিস ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে তার এমনটা হয়ে থাকে।

বিষয়টি গণমাধ্যমের নজরে এলে ২০১৬ সালে ঢাকা মেডিকেলে রাষ্ট্রীয় খরচে আবুল বাজানদারের চিকিৎসা শুরু হয়।

বিএ-২২/২১-০১ (ন্যাশনাল ডেস্ক, তথ্যসূত্র: বিবিসি)