খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আন্দোলনের বিকল্প নেই উলে­খ করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, আমরা নির্বাচন করেছি, কিন্তু আন্দোলন করিনি। আমরা শীর্ষ নেতৃত্ব ব্যর্থ হয়েছি। তৃণমূলের শক্তিকে কাজে লাগাতে পারিনি। লজ্জায় মাথাবনত হয়ে যায়, যখন ভাবি, এক বছর হল, আমাদের নেত্রী জেলে আছেন।

শুক্রবার বিকেলে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটশন মিলনায়তনে এক প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সভায় দলটির নেতারা আরও বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে আন্দোলনের বিকল্প নেই। সেই আন্দোলন করতে হলে সংগঠন শক্তিশালী করতে হবে। এ জন্য রাজপথে আন্দোলন গড়ে তুলতে নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির নেতারা।

শুক্রবার বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবাসের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। তার মুক্তির দাবিতে আজও সারা দেশে (ঢাকা মহানগর বাদে) প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করবে দলটি।

প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এই জন্য দলের নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করতে হবে। বিগত দিনে দলের যারা নির্যাতিত হয়েছেন তাদের পাশে দলের নেতা এবং যারা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদের দাঁড়াতে হবে।

তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধভাবে সাহস নিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আমরা ঘুরে দাঁড়াব। এ জন্য সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, ৮০ ভাগ মানুষ ধানের শীষের ভোট দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। এটা সরকারের কাছে গোপন থাকেনি। তাই ২৯ তারিখেই সরকার ভোট সম্পন্ন করেছিল। ৩০ তারিখ এ দেশে কোনো ভোট হয়নি। ২৯ তারিখ ভোট হয়েছে, এটা আমেরিকার প্রেসিডেন্টসহ দেশি-বিদেশি সবাই জানে।

সরকারের মন্ত্রিপরিষদ গঠন প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের বাইরে রেখে মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছে। আর দেশে কোনো ভোট হয়নি। এই দুটি অস্বাভাবিক ঘটনার ফলে সরকার বেশিদিন টিকে থাকতে পারবে না।

খালেদা জিয়াকে বেশিদিন আটকে রাখা যাবে না মন্তব্য করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ধানের শীষে ভোট দিতে পারলে এতদিনে খালেদা জিয়া মুক্ত হতেন। সরকার জানে, দিনের বেলায় ভোট হলে আওয়ামী লীগ জয়ী হতে পারবে না; তাই তারা রাতের বেলায় ভোট করছে।

তিনি বলেন, বিএনপি পরাজিত হয়নি। আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়েছে। কারণ তারা একজনও নির্বাচিত হয়ে সংসদে যেতে পারেনি।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এ নির্বাচনে একটা বিষয়ে প্রমাণ হয়েছে যে, একটি দলের জনপ্রিয়তাই যথেষ্ট নয়। সংগঠন ছাড়া সেই জনপ্রিয়তা ধরে রাখা যায় না। নির্বাচনে অনিয়মের বিরুদ্ধে কেনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি নাই সেটার উত্তর খুঁজতে হবে, পর্যালোচনা করতে হবে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন করেছি, কিন্তু আন্দোলন করিনি। আমি একটি (আন্দোলন) প্রস্তাবও দিয়েছিলাম। কিন্তু সেটা মানা হয়নি। আমরা শীর্ষ নেতৃত্ব ব্যর্থ হয়েছি। আমরা সফল না। তৃণমূলের শক্তিকে কাজে লাগাতে পারিনি। লজ্জায় মাথাবনত হয়ে যায়, যখন ভাবি, এক বছর হল, আমাদের নেত্রী জেলে আছেন। তবে সময় আসবে, আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটিয়ে তাকে মুক্ত করা হবে। এ জন্য দলকে দ্রুত পুনর্গঠন করে নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করতে হবে।

বিএনপির এ নেতা বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে আন্দোলনের বিকল্প নেই। সেই আন্দোলন করতে হলে সংগঠন শক্তিশালী করতে হবে। গত দশ বছরে সারা দেশে যেসব নেতাকর্মীর ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে তাদেরকে পুনর্বাসন করতে হবে, তাদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদেরকে আবার সক্রিয় করতে হবে।

মওদুদ আহমদ বলেন, প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকায় যত গায়েবি মামলা রয়েছে, নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে, আহত হয়েছে তাদের দেখাশোনার জন্য প্রার্থীদের দায়িত্ব নিতে হবে। তরুণদের সামনে আনতে হবে। আর এটা করতে পারলে খুব শিগগির সরকার পতনের আন্দোলনের সময় আসবে।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, আজ এক বছর হল রাজনীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তাকে কি আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্ত করা যাবে? আমরা নেত্রীকে রাজনৈতিকভাবেই মুক্ত করে আনব।

তিনি বলেন, কারাগারে থেকে তিনি আজকে গণতন্ত্রের জন্য মূল্য দিচ্ছেন। তাই আমাদেরকে রাজপথ আন্দোলন করে দেশনেত্রীকে মুক্ত করে আনব। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আবার প্রধানমন্ত্রী করার জন্য আহ্বান জানান বিএনপির এ নেতা।

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, এক বছরে আমরা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারিনি। আমরা ব্যর্থ। এর থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। নেত্রী আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। তিনি বলেন, আসছে আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপিকে নেতৃত্ব দিতে হবে। অঙ্গসংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। নিজেরা বাঁচতে চাইলেও আন্দোলন করতে হবে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, যদি খালেদা জিয়াকে ভালোবাসেন তাহলে এ মাসের বাকি ১৮ দিন অবস্থান ধর্মঘটের কর্মসূচি পালন করুন। আগামীকাল (আজ) ঢাকা মহানগরের ১০০টি ওয়ার্ডে ১০ জন করে ১ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করেন। আর সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করে এই জালিম সরকারের কাছ থেকে মুক্তি চান।

তিনি বলেন, পরেরদিন ৩শ’ প্রার্থী একই কর্মসূচি পালন করুন। এর পরে জাতীয় নির্বাহী কমিটির নেতারা যারা এতদিন দলের মধু পান করেছেন তাদেরকে ধরে এনে এই কর্মসূচির ব্যবস্থা করুন। আমিও কর্মসূচিতে থাকব। দেশবাসী আপনাদেরকে রাস্তায় দেখতে চায়। ঘরে বসে হাতি-ঘোড়া মারা দেখতে চায় না।

নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে এবং প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের যৌথ সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালী, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, শ্রমিক দলের নাসিম হোসাইন, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, ছাত্রদলের আকরামুল হাসান প্রমুখ।

আরও উপস্থিত ছিলেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত প্রমুখ।

বিএ-২৪/০৮-০২ (ন্যাশনাল ডেস্ক)