পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম বিদেশ সফরে চলমান রোহিঙ্গা সংকটের দিকে নতুন করে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি ফেরানো, বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
জার্মানির মিউনিকে নিরাপত্তা সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে রোহিঙ্গা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর জার্মানি ও ইউএই সফর উপলক্ষে আজ এখানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
পরপর তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরে এই প্রথম বিদেশ সফরে আগামীকাল জার্মানির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি ১৫ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় ৫৫তম মিউনিক নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দেবেন। ২৫ জনের বেশি রাষ্ট্র অথবা সরকার প্রধান এই সম্মেলনে যোগ দেবেন।
সম্মেলনের ফাঁকে জার্মান চ্যান্সেলর ড. এঞ্জেলা মার্কেলসহ বিভিন্ন বিশ্ব নেতার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা ও জার্মানির চ্যান্সেলরের মধ্যে বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট এবং জার্মান ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বহুমুখী বিনিয়োগসহ অন্যান্য প্রধান দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, দুই নেতার বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার হবে। ইউরোপে বাংলাদেশের বৃহত্তম রফতানি বাজার জার্মানি। এছাড়া, রোহিঙ্গা সংকটের শুরু থেকে বার্লিন ঢাকাকে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও মানবিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ এ্যাজ এ সিকিউরিটি থ্রেট’ এবং ‘হেলথ সিকিউরিটি রাউন্ডটেবল’ একজন প্যানেলিস্ট হিসেবে যোগ দেবেন। বিশ্বজুড়ে বৈশ্বিক নিরাপত্তা সম্মেলনকে ‘বেস্ট থিঙ্ক ট্যাঙ্ক কনফারেন্স’ হিসেবে বিবেচেনা করা হয়।
এর আগে, প্রথম বাংলাদেশের কোন রাষ্ট্র অথবা সরকার প্রধান হিসেবে ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সম্মেলনে যোগ দেন। ড. মোমেন বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের কূটনীতির জন্য একটি গর্বের বিষয়।’
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সিমেন্স এজি’র প্রেসিডেন্ট ও সিইও জোয়ে কায়িজার এবং ভারিদোসের সিইও হ্যান্স উল্ফগং কুঞ্জের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
জার্মানভিত্তিক সিমেন্স বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে বিশাল বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে এবং সফরকালে এ ক্ষেত্রে জয়েন্ট ডেভলপমেন্ট এগ্রিমেন্ট (জেডিএ) স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সম্মেলনকে বাংলাদেশের জন্য সুযোগ হিসাবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আস্থার সঙ্গে বলতে পারি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশ গ্রহণ বৈশ্বিক পরিমন্ডলে আমাদের অবস্থান ও ভাবমূর্তি দৃঢ় ও উজ্জলতর করবে।’
প্রধানমন্ত্রী জার্মানির মিউনিখ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি সকালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে পৌঁছবেন। সেখানে তিনি আবুধাবী ন্যাশনাল এক্সিবিশন সেন্টারে (এডিএনইসি) ‘ইন্টারন্যাশনাল ডিফেন্স এক্সিবিশন (আইডেক্স- ২০১৯)’- এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন।
ড. মোমেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরকালে আরও জনশক্তি রপ্তানি এবং রোহিঙ্গা ইস্যু প্রাধান্য পাবে।’
জনশক্তি রপ্তানির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের ফলে তেল-সমৃদ্ধ এই দেশটিতে জনশক্তি রপ্তানির নতুন পথ সুগম হবে। বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার সংযুক্ত আরব আমিরাত।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এই সফরকালে বিনিয়োগ সংক্রান্ত দু’টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হবে। শেখ আহমেদ দালমুক আল মাকতুম-এর ব্যক্তিগত কার্যালয় ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) মধ্যে একটি এবং শেখ আহমেদ দালমুক আল মাকতুম-এর ব্যক্তিগত কার্যালয় ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মধ্যে আরেকটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি প্রধানমন্ত্রীর সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরকালে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প সম্পর্কে পরিকল্পিত আলোচনা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কূটনীতিতে নতুন শক্তি সঞ্চার করবে।’
শেখ হাসিনা সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরকালে সেদেশের যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ বিন সুলতান আল-নাহিয়ান-এর সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে।
এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী এবং দুবাই-রাজ্যের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করার কথা রয়েছে।
শেখ হাসিনা আল-বাহার প্রাসাদে আমিরাতের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম প্রেসিডেন্ট এবং আবুধাবির শাসক প্রয়াত শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের পতিœ শেখ ফাতিমা বিনতে মুবারাক আল কেতবির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী সফরকারে সেন্ট রেজিস আবুধাবি হোটেলে অবস্থান করবেন এবং সেখানেই প্রবাসিদের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন। প্রধানমন্ত্রী আগামি ২০ ফেব্রুয়ারি সকালে দেশে ফিরবেন।
বিএ-১০/১৪-০২ (ন্যাশনাল ডেস্ক)