পুলিশ তৎপর হলে নুসরাত হত্যাকাণ্ড এড়ানো যেত

পুলিশ তৎপর হলে মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির হত্যাকাণ্ড এড়ানো যেত বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এ জন্য সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেনের দায়িত্বে অবহেলা প্রসঙ্গটি কমিটির বৈঠকে উঠে আসে। আর আগামীতে এ ধরনের কোনো সম্ভাব্য ঘটনার ইঙ্গিত পেলে পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে থানার ওসি পর্যন্ত সবাইকে প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

রোববার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেশে কোনো সম্ভাব্য ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ জানতে পারলে তা প্রতিহত করার জন্য সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কাজ করার অনুশাসন দেয়া হয়েছে। আর কোনো ঘটনা ঘটলে পুলিশ যাতে যত দ্রুত সম্ভব আসামিদের আইনের আওতায় অনে সে জন্যও সুপারিশ করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য কমিটির পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে।’

শামসুল হক টুকু বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় নারী নির্যাতন সম্পর্কে স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী কমিটিকে জানান, তারা ঘটনা ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আর দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। ফেনীর নুসরাত জাহান রাফির ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

এদিকে কমিটির সদস্য জাতীয় পার্টির সদস্য পীর ফজলুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘পুলিশ তৎপর হলে নুসরাত জাহান রাফির হত্যাকাণ্ড এড়ানো যেত। বিষয়টি আমি কমিটির বৈঠকে উত্থাপন করেছি। কমিটির সদস্যরা সবাই এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন।’

একাদশ জাতীয় সংসদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ২য় বৈঠক আজ জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির সভাপতি মো. শামসুল হক টুকু এমপি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

বৈঠকে আরো অংশ নেন কমিটির সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, মো. হাবিবর রহমান এমপি, সামছুল আলম দুদু এমপি, মো. ফরিদুল হক খান এমপি, নূর মোহাম্মদ এমপি ও সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ এমপি।

প্রসঙ্গত, ২৭ মার্চ ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাতকে শ্রেণিকক্ষে নিয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা যৌন নিপীড়ন করেছে-এমন অভিযোগ উঠলে দু’জনকে থানায় নিয়ে যান ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। ওসি নিয়ম ভেঙে জেরা করতে নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন। মৌখিক অভিযোগ নেয়ার সময় দুই পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না। ভিডিওটি প্রকাশ হলে অধ্যক্ষ ও তার সহযোগীদের সঙ্গে ওসির সখ্যতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়।

ভিডিওতে দেখা যায়, থানার ওসির সামনে অঝোরে কাঁদছিলেন নুসরাত। সেই কান্নার ভিডিও করছিলেন সোনাগাজী থানার ওসি। নুসরাত তার মুখ দু’হাতে ঢেকে রেখেছিলেন। তাতেও ওসির আপত্তি। বারবারই ‘মুখ থেকে হাত সরাও, কান্না থামাও’ বলার পাশাপাশি তিনি এও বলেন, ‘এমন কিছু হয়নি যে এখনও তোমাকে কাঁদতে হবে।’

নুসরাত জাহান রাফির মৃত্যুর পর ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ ওঠে। নুসরাতের পরিবারকে সহযোগিতা না করার অভিযোগে ইতোমধ্যে সোনাগাজী থানা থেকে মোয়াজ্জেমকে প্রত্যাহার করা হয়।

এদিকে গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফিকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে।

এ ঘটনায় রাফির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। গত ৬ এপ্রিল সকালে রাফি আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান। এ সময় মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে- এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই বিল্ডিংয়ের চার তলায় যান। সেখানে মুখোশ পরা চার-পাঁচজন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১০ এপ্রিল নুসরাতের মৃত্যু হয়।

বিএ-২২/২১-০৪ (ন্যাশনাল ডেস্ক)