ওয়াসার পানি নিম্নমানের বলে উল্লেখ করা টিআইবির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান সংবাদ সম্মেলনে ওয়াসার পানিকে শতভাগ সুপেয় দাবি করেছেন। তার এ বক্তব্য চরম বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
এই বক্তব্য ধরে ঢাকার জুরাইনের এক গ্রাহক এমডিকে ওয়াসার পানির শরবত খাওয়ানোর জন্য মঙ্গলবার তার অফিসে হাজিরও হয়েছিলেন।
ওয়াসা স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনস্ত একটি প্রতিষ্ঠান। ওয়াসার এমডির আলোচিত বক্তব্যের বিষয়ে বুধবার সঙ্গে কথা বলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
ওয়াসার এমডির ‘শতভাগ সুপেয়’ বক্তব্যের বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা সম্বন্ধে আমি জানি না, এটা উনি বলেছেন। উনার বক্তব্যের বিষয়ে তাকেই কথা বলতে হবে। তবে সুপেয় বলতে যদি উনি এটা বলে থাকেন যে, যে সোর্স বা প্ল্যান্ট থেকে পানি সাপ্লাই দেয়া দেয় সেখানকার পানি সুপেয়। আমিও এর সঙ্গে একমত। তবে পাইপলাইনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বাড়ির রিজার্ভারে যাওয়ার পর যে পানি উত্তোলন করা হয়, সেই পানির বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান হিসেবে ওয়াসাকে জবাবদিহিতার মধ্যে রাখা হয় জানিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের কাজকর্ম কোথায় কী হচ্ছে, তারা কী করে না করে, তা আমরা দেখি। ফাইন্ডিং অনুযায়ী দেখা যায়, আমরা যদি ২০১০ সাল থেকে হিসাব করি ওয়াসার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। পানির কোয়ালিটি ইম্প্রুভ করা হয়েছে। পানি সরবরাহের পরিমাণও বেড়েছে। আমাদের যেসব অপচয় ছিল, সিস্টেম লস ছিল অর্থাৎ পানির বিল না দেয়া, মিটারের বাইরে পানি নেয়া- এগুলো অনেক কমেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে যেসব পরিসংখ্যান রয়েছে সেগুলো নিয়ে যদি কথা বলতে যাই আমার কাছে এমন কোনো তথ্য নেই যেগুলো নিয়ে আমি ওয়াসাকে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান বলতে পারি না। তথ্য ধরে যদি আমি কথা বলতে যাই, তবে আমার মূল্যায়নটা এমনই।’
‘টিআইবি যে কথা বলেছে, মানুষ পানি ফুটিয়ে খায়, সবাই পানি ফুটিয়ে খায় কিনা আমি জানি না। পানি যেটা সরবরাহ করা হয় আমরা সোর্স লেভেলে কালেকশন করে দেখেছি এটা ঠিক আছে। ইতোমধ্যে ওয়াসার প্রায় সব পাইপলাইন পরিবর্তন করা হয়েছে। ওয়াসার পাইপলাইনের পর প্রতিটি বাড়ির রিজার্ভার। এই রিজার্ভার কিন্তু ওয়াসার আওতার মধ্যে নেই। স্বাভাবিকভাবেই এটাকে রেগুলেট করা ওয়াসার পক্ষে সম্ভব নয়।’
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ‘আর রিজার্ভার থেকে যদি পানি দূষিত হয়, তবে সেটা নিয়ে আমরা ইনভেস্টিগেট করব। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারেন ওমুক বাড়িতে দূষিত পানি পাওয়া গেছে বা পাইপলাইন থেকে খারাপ পানি এসেছে, তবে আমরা ওই এরিয়ার পাইপলাইন ইনভেস্টিগেট করব। যদি কারো গাফিলতির কারণে এমনটা হয় তবে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে শ্রমজীবী মানুষ পাইপলাইন থেকে সরাসরি পানি পান করেন, কেউ ফিল্টার করে খান, কেউ বোতলের পানি খান। পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশেই দীর্ঘ পথ দিয়ে পাইপলাইনের যে পানি আসে তা সবাই কনফিডেন্ট নিয়ে পান করেন না। অনেকেই কনফিডেন্ট রাখেন না, কারণ সেখানে দূষণের তো কতগুলো কারণ রয়েছে।’
ওয়াসার পানি পরীক্ষায় কোনো পদক্ষেপ নেবেন কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এখন এমন কিছু হয়নি যে নতুন করে পানিটা ইভ্যালুয়েট করা দরকার হবে। আমাদের এখানে ৯৮ শতাংশ পানি ব্যবহার করা হয় ধোয়া-মোছার কাজে; মাত্র ১ থেকে ২ শতাংশ পানি ব্যবহার হয় পানের জন্য। সব ধরনের ব্যবহারের জন্যই ওয়াসার পানি সরবরাহ করা হয়। এমন কোনো দূষণের অভিযোগ নেই যে আমরা উদ্বিগ্ন হতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি পানির গুণগত মান অনেক উন্নতি হয়েছে। একসময় আমাদের পুরনো পাইপলাইন ছিল। এখন অনেক অটোমেশন করা হয়েছে। একসময় তো এমন ছিল যে, পানি না পেয়ে গোসল ছাড়াই অফিসে যেতে হয়েছে।’
গত ১৭ এপ্রিল ‘ঢাকা ওয়াসা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি। প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা ওয়াসার পানির নিম্নমানের কারণে ৯৩ শতাংশ গ্রাহক বিভিন্ন পদ্ধতিতে পানি পানের উপযোগী করে। এর মধ্যে ৯১ শতাংশ গ্রাহকই পানি ফুটিয়ে পান করে। গৃহস্থালি পর্যায়ে পানি ফুটিয়ে পানের উপযোগী করতে প্রতি বছর আনুমানিক ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাসের অপচয় হয়।
এই প্রতিবেদনের জবাব দিতে গত ২০ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন ডাকেন ওয়াসার এমডি। সেখানে তিনি টিআইবি’র প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে বলেন, টিআইবি যে পদ্ধতিতে এ গবেষণা করেছে সেটি একপেশে ও উদ্দেশ্যমূলক। এটি পেশাদারি গবেষণা হয়নি।
ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয় বলেও দাবি করেন তাকসিম এ খান।
বিএ-২০/২৪-০৪ (ন্যাশনাল ডেস্ক, তথ্যসূত্র: জাগো নিউজ)