ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার খরমপুর মাজারের সম্পত্তির দখল নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আমিনুল হক খাদেমকে হত্যার দায়ে ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে মামলার অপর এক আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুর রহমান সরদার বৃহস্পতিবার এই রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন– শহিদুর রহমান খাদেম ওরফে মিনু খাদেম ওরফে মামা খাদেম, মাহবুব আলম লিটন ওরফে দাঁত ভাঙা লিটন, শেখ শামীম আহমেদ, মো. জুয়েল, কামাল হোসেন বিপ্লব ও সোহেল ওরফে ক্যাটস আই সোহেল।
এদের মধ্যে লিটন ও বিপ্লব পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। উপস্থিত দণ্ডপ্রাপ্তদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এ মামলার আরেক পলাতক আসামি আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বাবু ওরফে হোন্ডা বাবুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে সংশ্লীষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার অপর আসামি আজগর হোসেন রানাকে খালাস দিয়েছেন বিচারক।
রায় ঘোষণার সময় বিচারক বলেন, এটা ছিল একটা ক্লুলেস মামলা, কোনো প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী ছিল না। মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে এর রহস্য উদঘাটন করা হয়।
রায়ের পর্যবেক্ষণ বলা হয়, আসামিদের বেশিরভাগই উচ্চ শিক্ষিত এবং তাদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক অভিযোগে মামলা রয়েছে। প্রতারণার মাধ্যমে প্রকাশ্য দিবালোকে ভিকটিমকে ডেকে নিয়ে হত্যার বিষয়টি মেনে নেওয়া যায় না। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, সমাজের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা, মানুষের জান ও মালের সুরক্ষাসহ সর্বোপরি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য এবং অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আবশ্যক।
ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আমিনুল হক খাদেম ওরফে আনিস খাদেমকে ২০০৯ সালের ৪ মে বিকেলে ঢাকার মালিবাগ শাহী মসজিদের কাছে মাজার গলিতে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই সরকারি কর্মকর্তা ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আখাউড়ার খরমপুর মাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ঢাকায় তিনি পরিবার নিয়ে থাকতেন সবুজবাগ এলাকায়।
মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, মাজারের সম্পত্তির দখল নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শহিদুর রহমান খাদেমের নির্দেশে মালিবাগ শাহী মসজিদের সামনে আমিনুলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পরদিন আমিনুলের ছেলে সাইদুল হক খাদেম রাজধানীর মতিঝিল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ মামলার তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের ৩০ নভেম্বর আটজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় র্যাব। ২০১৪ সালের ৮ জুন অভিযোগ গঠন করে আসামিদের বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। বাদীপক্ষে মোট ১৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের পর বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করেন বিচারক।
বিএ-১৪/২৫-০৪ (ন্যাশনাল ডেস্ক)