জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ব্যবস্থা নেয়ার আহবান

জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে ব্যবস্থা নিতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্রুনাইয়ে সদ্যসমাপ্ত রাষ্ট্রীয় সফর সম্পর্কে জানাতে শুক্রবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শ্রীলংকায় আত্মঘাতী বোমা হামলার নিন্দা জানান। তিনি বলেন, ‘এই কাপুরুষোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জঙ্গিবাদের সঙ্গে উচ্চ শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। আমি জানি না– সুইসাইড অ্যাটাক করে কী পাচ্ছে। নিউজিল্যান্ডে যা হলো… একজন ক্যামেরা মাথায় লাগিয়ে গুলি করছে, কী বীভৎস! সে কিন্তু খ্রিষ্টান। এ জন্যই আমি বলি– জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই, দেশও নেই।’

জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ বন্ধে সামাজিক সচেতনতা তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসলে সামাজিক সচেতনতা হচ্ছে সবচেয়ে বড়। সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি না হলে এটা বন্ধ করা সম্ভব না।’

প্রধানমন্ত্রী তার ব্রুনাই সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করলেও সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে বরাবরের মতো সমসাময়িক রাজনীতির বিভিন্ন প্রসঙ্গও উঠে আসে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি থেকে নির্বাচিতদের কয়েকজনের শপথ গ্রহণে প্রসঙ্গ তুলে এ বিষয়ে সরকারে চাপ আছে কিনা জানতে চাওয়া হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা শপথ নিয়েছে তাদের ওপর সরকারের কোনো চাপ নেই। তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত। তাদের নির্বাচনী এলাকা থেকেই শপথ গ্রহণে তাদের ওপর চাপ রয়েছে। এখানে সরকারের চাপ দেওয়ার কিছু নেই।

রোহিঙ্গাদের নিয়ে কর্মরত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবিক সেবার নামে এনজিওরা নিজেদের সেবা করতে আসে। রোহিঙ্গারা ভাষাণচর বা মিয়ানমারে ফিরতে চাইলেও অনেক সংস্থা তা চায় না।

এ সময় তিনি রোহিঙ্গাদের জন্য যেকোনো সহায়তা ও অবকাঠামো উন্নয়ন মিয়ানমারেই করতে চীনসহ অন্যান্য রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে তা জানাতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে বলুন, ব্যবস্থা নেব। তবে শুধু ফাঁকা কথা বললে আর অপবাদ দিলে মেনে নেব না।’

আওয়ামী লীগ ক্ষমতা এলেই দেশের মানুষ ভালো থাকে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, দেশের মানুষ সুখের মুখ দেখেছে, ভালো থাকতে শুরু করেছে।’

প্রসঙ্গত, ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়ার আমন্ত্রণে রোববার তিনদিনের সফরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার দেশে ফেরেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার ছয়টি সমঝোতা স্মারক সই এবং কূটনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের ভিসা ছাড়া ভ্রমণের সুযোগ দিতে কূটনৈতিক নোট বিনিময় হয়। সই হওয়া সমঝোতাগুলো হয়েছে কৃষি, মৎস্যসম্পদ, প্রাণিসম্পদ, শিল্প ও সংস্কৃতি, যুব ও ক্রীড়া খাতের সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং এলএনজি ও এলপিজি সরবরাহ বিষয়ে।

সফরকালে বলকিয়ার সরকারি বাসভবন ইস্তানা নূরুল ইমানের চেরাদি লায়লা কেনচানায় রাজপরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন শেখ হাসিনা। তিনি দুই দেশের ব্যবসায়ীদের ফোরামে বক্তব্য দেন এবং ব্রুনাইয়ের জামে আসর মসজিদ পরিদর্শন ও সুলতানের দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেন।

দেশে ফেরার দিন মঙ্গলবার সকালে ব্রুনাইয়ের রাজধানী দারুস সালামের কূটনৈতিক এলাকা জালান কেবাংসানে বাংলাদেশ হাইকমিশনের নতুন চ্যান্সেরি ভবনের ভিত্তিস্থাপন এবং রয়েল রেজালিয়া জাদুঘর পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী।

বিএ-০৪/২৬-০৪ (ন্যাশনাল ডেস্ক)